বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন
বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন

বোনাস না দিলে ফুটবলাররা জাতীয় দলে না–ও খেলতে পারেন, শঙ্কা কাজী সালাউদ্দিনের

১৪ বছর পর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে ওঠার জন্য গত জুনে জাতীয় দলকে ৫০ লাখ টাকা বোনাস দিয়েছিল বাফুফে। একই সঙ্গে বিশেষ তিনজন ফুটবলারকে দেওয়া হয় বাড়তি সাত লাখ টাকা। জাতীয় দলের ফুটবলাররা বোনাস পাচ্ছেন মালদ্বীপকে হারিয়ে ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের গ্রুপ পর্বে ওঠার জন্যও। এবার টাকার অঙ্ক ৬০ লাখ।

বাফুফের জরুরি সভায় আজ তা অনুমোদন হয়েছে। তবে বাফুফের তহবিল যেহেতু শূন্য, তাই এই ৬০ লাখ টাকা কীভাবে জোগাড় হবে, জানেন না বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘জানি না। তবে জোগাড় করতে হবে এবং করব।’

বাফুফে সভাপতি অবশ্য কদিন আগে মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচের আগে বলেছিলেন, মালদ্বীপকে হারাতে পারলে ‘বিগ বোনাস’ দেওয়া হবে। বাংলাদেশ দলের হোটেলে গিয়ে তিনি খেলোয়াড়দের কাছে সেটা ঘোষণা করেন। বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার আমের খান তখন বলেছিলেন, ‘সভাপতি বলেছেন, মালদ্বীপকে হারালে আগের চেয়ে দ্বিগুণ বোনাস দেবেন।’

সে হিসেবে ফুটবলারদের বোনাস দেওয়ার কথা এক কোটি টাকা।
কিন্তু আজ বাফুফের জরুরি সভায় তা ৪০ লাখ টাকা কমে গেছে। কিন্তু কেন কমল, সেই ব্যাখ্যা দেননি বাফুফে সভাপতি। তবে এটা স্পষ্ট, বাফুফে তহবিল শূন্যতার কারণেই কোটি টাকার ঝুঁকি নেওয়া হয়নি। তারপরও প্রশ্ন এসেছে, সামনে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে অস্ট্রেলিয়া, ফিলিস্তিন ও লেবাননের সঙ্গে খেলা। তখনো কী বোনাস দেওয়া হবে ফুটবলারদের? সালাউদ্দিন বলেন, ‘তখন আরও বেশি দেওয়া উচিত।’

আজকের জরুরি সভা শেষে কাজী সালাউদ্দিন বলেছেন, ‘ফুটবলারদের জন্য ৬০ লাখ টাকা বোনাস অনুমোদন হয়েছে বোর্ডে।’

এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, মাস চারেক আগেই ফুটবলারদের বোনাস দিয়েছে বাফুফে। এখন আবার বোনাসের জন্য কোনো খেলোয়াড় দাবি তোলেননি বা আন্দোলন করেননি। তাহলে বোনাস কেন? সালাউদ্দিনের উত্তর, ‘বোনাস দেওয়া বিশ্ব ফুটবলের সংস্কৃতিই। বোনাস দিতে হয়। না দিলে ফুটবলাররা খেলবে কেন? আমাদের প্রতিপক্ষ এর থেকে বেশি পাবে (কারা কী পাবে, তা অবশ্য তিনি বলেননি)। আমি যার সঙ্গে যুদ্ধ করছি, সে তো দুই কোটি টাকা পাবে।’

আজ বাফুফের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়

এরপরই সালাউদ্দিন শঙ্কা প্রকাশ করেন বোনাস না দিলে যদি ফুটবলাররা জাতীয় দলে না খেলেন! যদিও কোনো ফুটবলার কখনো বলেননি, বোনাস না পেলে জাতীয় দলে খেলবেন না। এ বিষয়ে সালাউদ্দিন বলেন, ‘আপনি যদি তাদের (ফুটবলার) বোনাস না দেন, তাহলে তো তাদের জাতীয় দলে খেলার কোনো কারণ নেই। যদি তারা বলে জাতীয় দলে খেলব না, আপনি কিছুই করতে পারবেন না। আপনি কিছু পেতে গেলে কিছু দিতে হবে। আর সেটা না দিলে জাতীয় দল তাহলে বন্ধ করে দিই।’

বোনাস বাফুফে দিতেই পারে। তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। কিন্তু অতীতে সাফের ফাইনালে উঠেও ফুটবলাররা বোনাস পাননি। বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে আগেও উঠেছে, বোনাস পায়নি তখনো। এখন বাফুফে সভাপতি সাগ্রহেই ফুটবলারদের বোনাস দিচ্ছেন। যাতে ফুটবলাররা ভালো খেলেন। এ পর্যন্ত সবই ঠিক আছে।

বাফুফে সভায় কথা বলছেন সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন

কিন্তু প্রশ্ন আসছে অন্য খাতগুলোয় বাফুফে নিয়মিত টাকা পরিশোধ করতে পারছে না কেন? রেফারিরা যেমন টাকা পান না সময়মতো। তাঁদের কোটি টাকার মতো বকেয়া পড়েছিল কিছুদিন আগেও। পরে অবশ্য বড় একটা অংশ শোধ করা হয়। গত প্রিমিয়ার লিগে খেলার অংশগ্রহণ ফি বাকি ক্লাবগুলোর। অতীতে ক্লাবগুলোকে ১০-১২ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। গত চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের অংশগ্রহণ ফিও বাকি। গত ৩০ মে ফেডারেশন কাপজয়ী মোহামেডান এখনো তাদের অর্থ পুরস্কারের অর্ধেকের বেশি টাকা পায়নি।

এ প্রসঙ্গে মোহামেডানের পরিচালক আবু হাসান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘গত প্রিমিয়ার লিগে অংশগ্রহণ ফি এক টাকাও পাইনি আমরা। গত মে মাসে ফেডারেশন কাপের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার প্রাইজমানি পাঁচ লাখ টাকা ছিল। পাঁচ মাস পর গত সপ্তাহে দুই লাখ টাকা পেয়েছি। বাকি তিন লাখ টাকা কবে পাব জানি না।’ পেশাদার লিগের দ্বিতীয় স্তর চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের ক্লাব নোফেলের কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেনের কথা, ‘গত চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের অংশগ্রহণ ফি এক টাকাও পাইনি। তার আগে লিগে তিন লাখ টাকা পেয়েছি।’

তবে বাফুফে সভাপতি এটাকে বড় করে দেখছেন না, ‘১৫ বছরে সবই হয়েছে। কোনো কিছু বাদ পড়েনি। রেফারিদের এক কোটি টাকা বিল বাকি পড়ে শোধও হয়েছে। ক্লাবগুলোর বাকি টাকাও শোধ হয়েছে। সবই হয়েছে। আপনি যখন ব্যবসা করেন, বাকি থাকে, শোধও করেন।’