আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে লিওনেল মেসি আর কত দিন খেলবেন?
প্রশ্নটা এখন ওঠাটাই স্বাভাবিক। ফুটবল থেকে মেসির পাওয়ার আর কিছু নেই। ইউরোপে দীর্ঘ ক্লাব ক্যারিয়ারে পেয়েছেন প্রায় সব সাফল্যই। দেশের হয়ে জিতেছেন কোপা আমেরিকা ও বিশ্বকাপ। ইউরোপের ফুটবল ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের দল ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেওয়াটা কি তাঁর শেষের শুরু? এ নিয়ে জল্পনাকল্পনা তো আছেই।
যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ (এমএলএস) ইউরোপের তুলনায় কম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। সেখানে প্রত্যাশার চাপ অনেক কম। মেসির মতো খেলোয়াড় যখন সেখানে নাম লেখান, তখন ধরে নেওয়া যেতেই পারে, ক্যারিয়ারের শেষ কয়টা দিন একটু আনন্দ, একটু চাপমুক্ত থেকে খেলাই মেসির লক্ষ্য। যুক্তরাষ্ট্রের লিগে ক্যারিয়ারের গোধূলিলগ্নে পেলে, বেকেনবাওয়ার, গার্ড মুলার, ইয়োহান ক্রুইফদের মতো অনেক ফুটবলারই খেলেছেন। তাই যুক্তরাষ্ট্রে খেলাটা যদি মেসির ক্যারিয়ারের শেষ অধ্যায় ধরে নেওয়া হয়, তাহলে দোষ দেওয়া যায় না।
২০২২ কাতার বিশ্বকাপ না জিতলে সেটিই হতো মেসির শেষ—এ কথা আর্জেন্টাইন তারকা নিজেই বলেছেন। বিশ্বকাপ জেতার পর তিনি আর্জেন্টিনার জার্সি ছাড়েননি। বুকে ‘তিন তারকা’ (আর্জেন্টিনার তিন বিশ্বকাপ জয়ের প্রতীক) নিয়ে খেলে যাচ্ছেন। ভক্ত-সমর্থকেরা আশাবাদী ছিলেন ২০২৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে অনুষ্ঠেয় পরের বিশ্বকাপে হয়তো তাঁকে দেখা যাবে। কিন্তু মেসি কিছুদিন আগে নিজেই জানিয়ে দিয়েছেন, সে পর্যন্ত হয়তো তিনি থাকবেন না। তবে নির্দিষ্ট করে কিছুই বলেননি।
আর্জেন্টিনার টিভি চ্যানেল টিভি পাবলিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অবসর নিয়ে কথা বলেছেন ৩৬ বছর বয়সী মেসি। আর্জেন্টিনার সাংবাদিক সোফি মার্তিনেজকে এই সাক্ষাৎকার মেসি দিয়েছিলেন গত মাসে চীন সফরের সময়। সেটি এত দিনে প্রকাশ করেছ টিভি পাবলিকা। সেই সাক্ষাৎকারের একটি অংশে আর্জেন্টিনা দলের কয়েকজন সতীর্থও মেসিকে প্রশ্ন করেছেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন হুলিয়ান আলভারেজ, লিসান্দ্রো মার্তিনেজ, এজেকুয়েল পালাসিও, নিকোলাস তালিয়াফিকো, নাহুয়েল মলিনা, আনহেল দি মারিয়া, মার্কোস আকুনা ও হেরমান পেসেলা।
এজেকুয়েল পালাসিও মেসিকে প্রশ্ন করেছিলেন তাঁর অবসর নিয়ে—আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের জার্সি কবে তুলে রাখতে পারেন? উত্তরে মেসি নির্দিষ্ট করে কিছুই বলেননি, ‘সত্যি বলতে, আমি জানি না কবে। আমার মনে হয় এটা যখন হওয়ার তখনই হবে। মানে, সবকিছু জিতেছি বেশি দিন তো হয়নি। এখন সময়টা উপভোগের। অবসর নেওয়ার মুহূর্তটা কখন সেটা সৃষ্টিকর্তাই বুঝিয়ে দেবেন।’ তবে মেসি মোটামুটি পরিষ্কার করেই বুঝিয়ে দিয়েছেন অবসর বেশি দূরে নেই, ‘যুক্তিতে যেটা আসে, আমার বয়সে তাকিয়ে বলতে পারি, শিগগিরই সেই সময়টা আসবে। তবে এই মুহূর্তে বলতে পারছি না সেটা কখন।’
আর্জেন্টিনার জার্সিতে একসময় খুব কঠিন কেটেছে মেসির। তখন দেশকে কোনো শিরোপা জেতাতে পারছিলেন না। টানা দুটি কোপা আমেরিকার ফাইনালে হারের পাশাপাশি ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠেও হেরেছেন। ২০২১ সাল থেকে পরিস্থিতি পাল্টেছে। আর্জেন্টিনার হয়ে ‘কিছুই না জেতা’ মেসি একে একে জিতেছেন কোপা আমেরিকা, কোপা ফিনালেসিমা ও বিশ্বকাপ। আনন্দের মুহূর্তেও অতীতের দুঃস্বপ্নগুলো মনে হয়েছে। আর্জেন্টাইন তারকা এখনকার সময়টা উপভোগ করতে চান, ‘আপাতত প্রতিটি দিনই উপভোগের কথা ভাবি। জাতীয় দলের হয়ে আমরা খুব কঠিন সময় পার করেছি। সৌভাগ্যবশত কোপা আমেরিকা ও বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছি। সময়টা তাই এখন উপভোগের।’