লিওনেল মেসি যেখানে যাবেন, প্রচারের আলো সেখানে গিয়ে পড়বে—এটাই স্বাভাবিক। মেসি ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলও বদলে গেছে। তাঁর কারণেই দেশটির মানুষের ফুটবল উন্মাদনা অন্য মাত্রায় পৌঁছে গেছে। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক যুক্তরাষ্ট্রের ক্রীড়া অর্থনীতিতে যে প্রভাব ফেলেছেন, সেটাকে কেউ কেউ ‘মেসি–ইফেক্ট’ও বলছেন।
মেসিকে ঘিরে এবার উন্মাদনা দেখা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইংল্যান্ড অঞ্চলের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য ম্যাসাচুসেটসে। মায়ামিতে নাম লেখানোর পর সেখানে যে প্রথমবার খেলতে যাবেন তিনি। সেটাও আজ থেকে ঠিক এক মাস পর, বাংলাদেশ সময় ২৮ এপ্রিল।
অথচ স্থানীয় ক্লাব নিউ ইংল্যান্ড রেভুলেশনের বিপক্ষে মেসির মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) ম্যাচটির জন্য ছাড়া ৬০ হাজার টিকিট এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। রেভুলেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের হাতে এখনো প্রায় পাঁচ হাজার টিকিট আছে। এই টিকিট চাইলে যখন–তখন বিক্রি করতে পারে। তবে টিকিটগুলো কত দামে বিক্রি করা হয়েছে, সে ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি।
ইএসপিএন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বাকি প্রায় পাঁচ হাজার টিকিট বিক্রি হয়ে গেলে নিউ ইংল্যান্ড রেভুলেশনের ঘরের মাঠ ফক্সবরোর জিলেট স্টেডিয়ামে ফুটবল তো বটেই, যেকোনো খেলায় দর্শক উপস্থিতির রেকর্ড হয়ে যাবে।
বর্তমানে জিলেট স্টেডিয়ামে সবচেয়ে বেশি দর্শক নিয়ে ফুটবল ম্যাচ আয়োজনের রেকর্ড ২০০২ সালে এমএলএস কাপে, নিউ ইংল্যান্ড রেভুলেশনের বিপক্ষে লস অ্যাঞ্জেলেস গ্যালাক্সির সেই ম্যাচে ৬১ হাজার ৩১৬ জন মাঠে বসে খেলা দেখেছিলেন।
এ মাঠে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ দর্শক উপস্থিতির রেকর্ডটা হয়েছিল ১৯৯৭ সালে, যুক্তরাষ্ট্র–মেক্সিকোর বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচ দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন ৫৭ হাজার ৮৭৭ জন ফুটবলপ্রেমী।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ফুটবল লিগ (এনএফএল) দল নিউ ইংল্যান্ড প্যাট্রিয়টসেরও ঘরের মাঠ এই জিলেট স্টেডিয়াম। ছয়টি সুপারবোল (এনএফএল চ্যাম্পিয়নশিপ ম্যাচ) জেতা দলটিও এক ম্যাচে এত দর্শক আনতে পারেনি, যতটা মেসির টানে আসতে চলেছেন।
এমএলএসের এক মৌসুমে গড়ে প্রতি ম্যাচে সর্বোচ্চ ৪২ হাজার ৯৪৭ জন দর্শক জিলেট স্টেডিয়ামে স্বাগতিক নিউ ইংল্যান্ড রেভুলেশনের খেলা দেখতে গিয়েছিলেন ২০১৫ সালে। আরেক স্বাগতিক এনএফএলের নিউ ইংল্যান্ড প্যাট্রিয়টস এক মৌসুমে গড়ে প্রতি ম্যাচে সর্বোচ্চ ৬৩ হাজার ১৮ জন দর্শক আনতে পেরেছিল গত বছর। আগামী ২৮ এপ্রিল রেভুলেশনের বিপক্ষে মেসির মায়ামির ম্যাচ দেখতে প্রায় ৬৫ হাজার দর্শক এলে আগের সব রেকর্ড ভেঙে যাবে।
এক মাস আগেই রেভুলেশন–মায়ামি ম্যাচের জন্য ছাড়া সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেলেও মেসি সেই ম্যাচে আদৌ খেলবেন কি না, তা নিয়ে কিছুটা সংশয় থেকেই যাচ্ছে। রেকর্ড আটবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী মহাতারকা বর্তমানে চোটের কারণে মাঠের বাইরে আছেন। হ্যামস্ট্রিং চোট থেকে সেরে ওঠার প্রক্রিয়ায় থাকা মেসি মায়ামির হয়ে সর্বশেষ দুই ম্যাচ এবং জাতীয় দল আর্জেন্টিনার হয়ে এল সালভাদর ও কোস্টারিকার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলতে পারেননি। বাংলাদেশ সময় আগামী রোববার ভোরে এমএলএসের ম্যাচে নিউইয়র্ক সিটির বিপক্ষেও তাঁর খেলার সম্ভাবনা কম।
তবে মায়ামি কোচ জেরার্দো মার্তিনো একটা সুখবর দিয়েছেন। মার্তিনো জানিয়েছেন, তাঁর লক্ষ্য এপ্রিলের শুরুর দিকে কনক্যাকাফ চ্যাম্পিয়নস কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে মেক্সিকান ক্লাব মোন্তেরেইয়ের বিপক্ষে দুই লেগেই শতভাগ ফিট মেসিকে পাওয়া। মেসি যদি মোন্তেরেইয়ের বিপক্ষে খেলেন, তাহলে তিনি নিউ ইংল্যান্ড রেভুলেশনের বিপক্ষেও খেলবেন—ধারণা করাই যায়।
মায়ামিতে যোগ দেওয়ার পর ঘন ঘন চোটে পড়ছেন মেসি। গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর প্রথমবার চোটে পড়েন। পরবর্তী সময়ে ইউএস ওপেন কাপের ফাইনাল এবং এমএলএসের শেষ দিকের কয়েকটি ম্যাচ মিস করেছেন মেসি।
সেই চোট ফিরে আসে প্রাক্–মৌসুম সফরেও। চোটের কারণে হংকংয়ে প্রীতি ম্যাচে তাঁর না খেলা নিয়ে হয়েছে তোলপাড়। এখন লিগের শুরুতেও চোট ভোগাচ্ছে মেসিকে; ভুগছে তাঁর ক্লাবও। তাঁকে ছাড়া সর্বশেষ ম্যাচে নিউইয়র্ক রেড বুলসের কাছে ৪–০ গোলে হেরে গেছে মায়ামি; এমএলএসের ইস্টার্ন কনফারেন্সের শীর্ষস্থান থেকে নেমে গেছে দুইয়ে।