সাফের দলে জায়গা পেলেন না এলিটা কিংসলি
সাফের দলে জায়গা পেলেন না এলিটা কিংসলি

সর্বোচ্চ গোলদাতা এলিটা কিংসলিকে ছাড়াই সাফের দল

সর্বশেষ ২০২১ সালে মালদ্বীপে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের প্রাথমিক দলে ছিলেন এলিটা কিংসলি। কিন্তু চূড়ান্ত দলে জায়গা হয়নি। এবারও একই ঘটনা। ২১ জুন ভারতের বেঙ্গালুরুতে শুরু হতে যাওয়া আরেকটি সাফে ৩০ জনের দলে ছিলেন এলিটা। কিন্তু আজ ঘোষিত ২৩ জনের দল তিনি নেই।

গত মার্চে সিলেটে সেশেলসের বিপক্ষে ফিফা প্রীতি ম্যাচে তাঁর অভিষেক হয়েছিল বাংলাদেশের জার্সিতে। তখনই বলেছিলেন, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপই তাঁর মূল লক্ষ্য। বাংলাদেশকে জেতাতে চান সাফ। কিন্তু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলার স্বপ্নটা অধরাই রইল নাইজেরিয়ার নাগরিকত্ব ছেড়ে বাংলাদেশি হওয়া এই ফুটবলারের।

অথচ এলিটা কিংসলি এ মৌসুমে বাংলাদেশের ফুটবলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ গোল করেছেন ঘরোয়া খেলায়। ফেডারেশন কাপে ১ গোল ও প্রিমিয়ার লিগে ৮ গোল এলিটার। কিন্তু গোলের ব্যাপারটা বিবেচনায় নেননি কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। আবাহনী লিমিটেডের ৩৩ বছর বয়সী ফরোয়ার্ডের গতি কমে গেছে সত্য, তারপরও বাংলাদেশিদের মধ্যে এখনো তাঁর গোল করার ক্ষমতা বেশি, তা যতক্ষণই মাঠে থাকার সুযোগ পান না কেন।

কোচ বাদ দিয়েছেন ফেডারেশন কাপে ২টি ও লিগে ৩টি গোল করা মোহামেডান স্ট্রাইকার সাজ্জাদ হোসেনকেও। এই দুজনকে দলে না রেখে কোচ নিয়েছেন সুজন রেজার মতো স্ট্রাইকারকে, যাঁর নামের পাশে এ মৌসুমে গোল মাত্র ২টি। একটি করে গোল করেছেন স্বাধীনতা কাপ ও ফেডারেশন কাপে। প্রিমিয়ার লিগে সুমন রেজার কোনো গোলই নেই। দেশের শীর্ষ স্ট্রাইকার গোলহীন একটা লিগ কাটাচ্ছেন। সুমন পুরো মৌসুমে বেঞ্চই গরম করেছেন বেশি। চোটের সমস্যাও ছিল কিছুটা।

সংবাদ সম্মেলনে কোচ হাভিয়ের কাবরেরা ও অধিনায়ক জামাল

সাফের দলে কোচ রেখেছেন ছয়জন ফরোয়ার্ড—ফয়সাল আহমেদ ফাহিম, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, আমিনুর রহমান সজীব, রাকিব হোসেন, সুমন রেজা ও নবাগত রফিকুল ইসলামকে। লিগে ৩টিসহ ফয়সালের মৌসুমে গোল ৭টি। লিগের ২টিসহ সজীবের গোল ৪টি। মোহাম্মদ ইব্রাহিম লিগে করেছেন মাত্র ১টি গোল। ফর্টিসের নবাগত উইঙ্গার রফিকুল ইসলামের কোনো গোলই নেই লিগে। তবে তাঁদের ওপরই কোচ আস্থা রেখেছেন। শুধু আক্রমণ নয়, রক্ষণেও ভঙ্গুর অবস্থা দলের। চোটের কারণে দল থেকে ছিটকে গেছেন সেন্টার ব্যাক  টুটুল হোসেন ও লেফট ব্যাক রিমন হোসেন।

এ ছাড়া পারফরম্যান্স ও অন্যান্য কারণে দল থেকে পড়েছেন মিডফিল্ডার মাসুক মিয়া জনি ও শাহরিয়ার ইমন, গোলকিপার মেহেদী হাসান শ্রাবণ আর ফরোয়ার্ড সাজ্জাদ হোসেন ও এলিটা কিংসলি। তাঁদের মধ্যে শাহরিয়ার ইমন মোহামেডানকে ফেডারেশন কাপ জেতাতে রেখছেন বড় ভূমিকা। তাঁকে বাদ দেওয়া নিয়েও কিছুটা প্রশ্ন আছে।
বাংলাদেশ দল আগামীকাল দুপুর কম্বোডিয়া যাচ্ছে। ১২ জুন সেখানে স্থানীয় টিফি আর্মি এফসির সঙ্গে অনুশীলন ম্যাচ। ১৫ জুন কম্বোডিয়ার সঙ্গে  ফিফা প্রীতি ম্যাচ খেলে সেখান থেকেই বাংলাদেশ চলে যাবে ভারতে।

সাফ মিশনে বের হওয়ার আগে আজ বাফুফে ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন এসেছে দল গঠন নিয়ে। এলিটা কিংসলি, সাজ্জাদ বা ইমনরা বাদ কেন? কেন লিগে কোনো গোল না করা সুমন রেজা দলে? হাভিয়ের কাবরেরা বলেছেন, ‘সাফে আমাদের কঠিন প্রতিপক্ষের সঙ্গে খেলতে হবে। ফুটবলারদের সামর্থ্য আর মানের কথা ভাবতে হবে। কাজেই সেভাবেই আমি দলটা বেছে নিয়েছি। কঠিন প্রতিযোগিতা, খেলোয়াড়দের সামর্থ্য ও মান, এই তিন বিবেচনায় দল নির্বাচন করা হয়েছে।’ আমি মনে করি সুমনের সামর্থ্য বেশি। আশা করি এই দল ভালো কিছু করবে।’

দল নিয়ে প্রশ্ন করলে অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া কোচের দিকেই বল ঠেলেছেন, ‘বুঝতে পারছি আপনারা দল নিয়ে অনেক প্রশ্ন করছেন। কোচ খেলা দেখেছেন এবং অনুশীলন করিয়েছেন। তিনি যেটা ভালো মনে করেছেন, তাঁদেরই নিয়েছেন। এখন যাঁরা আছেন, তাঁদের নিয়েই আমাদের পরিকল্পনা করতে হবে। এই দলটা তাঁর। এখানে আমার কিছু বলার নেই।’

কোচ আগেই বলেছেন এবারের সাফে বাংলাদেশের লক্ষ্য সেমিফাইনালে খেলা। লক্ষ্য নিয়ে প্রশ্ন করলে কোচের উত্তর, ‘ঢাকায় ইতিবাচক ক্যাম্প হয়েছে। আমরা কিছু চোট সমস্যায় ভুগছি। তারপরও আমরা ইতিবাচক আছি।’ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার কথা, ‘আমরা ম্যাচ ধরে ধরে এগোব।’ কোচ-অধিনায়ক ঘুরেফিরে সেমফাইনালে ওঠার ওপরই জোর দিয়েছেন।

বাংলাদেশ স্কোয়াড:

গোলরক্ষক: আনিসুর রহমান, শহিদুল আলম, মিতুল মারমা।
রক্ষণ: তপু বর্মণ, বিশ্বনাথ ঘোষ, তারিক কাজী, রহমত মিয়া, আলমগীর মোল্লা, মেহেদি হাসান, ইসা ফয়সাল।
মাঝমাঠ: মোহাম্মদ হৃদয়, সোহেল রানা, শেখ মোরসালিন, জামাল ভূঁইয়া, মজিবর রহমান, সোহেল রানা, রবিউল হাসান।
আক্রমণ: ফয়সাল আহমেদ, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, আমিনুর রহমান, রাকিব হোসেন, সুমন রেজা ও রফিকুল ইসলাম।