মাজিয়ার সঙ্গে এবার পেরে ওঠেনি বসুন্ধরা কিংস
মাজিয়ার সঙ্গে এবার পেরে ওঠেনি বসুন্ধরা কিংস

এএফসি কাপ

মাজিয়ার কাছে বড় হার কিংসের

পায়ে বল রেখে লাভ কি, যদি দল গোলের সুযোগ কাজে লাগাতে না পারে! আবার রক্ষণ সামলেও কোনো দল ম্যাচ জিতে বেরিয়ে যেতে পারে, যদি তারা গোলের সুযোগ কাজে লাগায়। আজ মালদ্বীপের মালেতে এএফসি কাপের ‘ডি’ গ্রুপের ম্যাচে এমন ‘পাঠ’ই পেয়েছে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস। পায়ে পায়ে বলের দখল রেখেও শেষ পর্যন্ত মালদ্বীপের মাজিয়া স্পোর্টস অ্যান্ড রিক্রিয়েশন ক্লাবের বিপক্ষে কিংস হেরেছে ৩–১ গোলে।

কোচ অস্কার ব্রুজোন এএফসি কাপের মূল পর্বের প্রথম অ্যাওয়ে ম্যাচে জয় চেয়েছিলেন। সেটি চাওয়া বিরাট কিছু ছিল না। এই মাজিয়ার বিপক্ষেই কিংসের এ ম্যাচের আগে ছিল শতভাগ জয়ের রেকর্ড। এএফসি কাপেই মাজিয়ার বিপক্ষে দুটি ম্যাচ খেলে দুটিতেই জিতেছিল তারা। ২০২১ সালে মালেতেই মাজিয়াকে হারিয়েছিল ২–০ গোলে, গত বছর কলকাতায় ১–০ গোলে। কিন্তু আজ সেই মাজিয়ার বিপক্ষেই দেখা গেল নখদন্তহীন এক কিংসকে। বলের দখল পুরো ম্যাচে নিজেদের কাছে রাখলেও প্রতিপক্ষের সীমানায় গিয়ে খেই হারানো, কুড়িয়ে পাওয়া গোলের সুযোগ কাজে লাগাতে না পারা, রক্ষণের ব্যর্থতা; সর্বোপরি পুরো ম্যাচেই এলোমেলো ফুটবল—বসুন্ধরাকে ডুবিয়েছে এসবই।

মাজিয়ার বিপক্ষে এলো না প্রত্যাশিত জয়

রক্ষণে তপু বর্মণ ছিলেন না আজ। বিশ্বনাথ, তারিক কাজী, সাদউদ্দিন ও উজবেকিস্তানের ইউলদাশোভ। তারিক কাজীর ভুল পাস থেকেই ম্যাচের ১৫ মিনিটে গোল করে এগিয়ে যায় মাজিয়া। গোলটি হয় খেলার ধারার বিপরীতেই। তারিকের ভুল পাস ধরে প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে আচমকা দূর পাল্লার শটে গোলকিপার আনিসুর রহমানকে পরাস্ত করেন মাজিয়ার বালবানোভিচ। এর আগে কিংসের ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড দরিয়েলতন গোমেজ করেন অমার্জনীয় এক মিস। গোল হওয়ার আগের মিনিটেই পেছনে থেকে বাড়ানো থ্রু প্রায় ফাঁকায় পেয়ে গিয়েছিলেন দরিয়েলতন। কিন্তু তাঁর শটটি চলে যায় পোস্টের বাইরে দিয়ে। দরিয়েলতন অবশ্য গোল পেতে পারতেন ম্যাচের পঞ্চম মিনিটে। একটি কর্নার থেকে তাঁর হেড মাজিয়ার গোলকিপার হাসান শরীফ কোনোমতে রক্ষা করেন।

রবসন সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি

কিংসের বড় ভরসার দুই নাম দুই ব্রাজিলিয়ান রবসন দা সিলভা ও দরিয়েলতন। আজ মাজিয়ার বিপক্ষে এ দুজন কিংসকে উদ্ধার করতে পারেননি। গফুরভ, রাকিব, মোরছালিনরা সেভাবে আক্রমণ তৈরি করতে পারছিলেন না দেখে রবসন নিচে নেমে আক্রমণে উঠছিলেন। কিন্তু মাজিয়ার ডিফেন্স লাইনে সেই আক্রমণগুলো বারবার ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসছিল। আজকের ম্যাচ কিংসের খেলায় সবচেয়ে হতাশাজনক ব্যাপার ছিল আক্রমণগুলোকে ঠিকভাবে সাজাতে না পারা।

দরিয়েলতন সহজ গোলের সুযোগ নষ্ট করেছেন

দ্বিতীয়ার্ধের একটা সময় প্রায় পুরোটা জুড়েই কিংস খেলেছে মাজিয়ার বক্সের সামনে। কিন্তু একটা আক্রমণেও বিপদের মুখোমুখি ফেলতে পারেনি তারা প্রতিপক্ষকে। কিংস ফরোয়ার্ডরা মাজিয়ার গোলে শট নিতেও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। তবে ৫৭ মিনিটে দরিয়েলতন নিজে গোলে শট নিতে না পারলেও সেই বল থেকেই ক্রস করেছিলেন। কিন্তু রাকিব হোসেনের হেড গোলকিপার শরিফ সহজেই ধরে ফেলেন। প্রথমার্ধের ৩৯ মিনিটে রাকিব দিক পরিবর্তন করে বাম দিকে এসে একটা ভালো ক্রস ফেলেছিলেন মাজিয়ার রক্ষণে। কিন্তু সেটি থেকে বিশ্বনাথের এলোমেলো এক হেডে কাজের কাজ হয়নি।

কিংসের সঙ্গে পায়ে পায়ে খেলে গেছে মাজিয়া। রক্ষণে তারা আজ সফল। তবে বালবানোভিচের সেই দূরপাল্লার প্রথম গোলের পর তারা বেশ কয়েকটি প্রচেষ্টা চালিয়েছে দূরপাল্লার শট নিয়ে। তারা দ্বিতীয় গোলটি পায় দূরপাল্লারআরেকটি শট থেকেই। এই গোলের জন্যও কিংসের রক্ষণভাগকে দায়ী করা যায়। নিজেদের বক্সে মাজিয়ার একটি আক্রমণে কিংসের কোনো ডিফেন্ডারই ঠিকভাবে বল উড়িয়ে দিতে পারেননি। বল ঘুরছিল দুই দলের খেলোয়াড়দের মাথায়। এমনি করে বল উড়ে এসে হাসান রাইফের পায়ের ওপর পড়লে তিনি চলন্ত বলেই শট নিয়ে গোল করেন।

কোচ অস্কার ব্রুজোন কাল বলেছিলেন এএফসি টুর্নামেন্টে কোনো ম্যাচ খেলতে নামলে ছোটখাট ভুলগুলোই পার্থক্য তৈরি করে দেয়। তাই তিনি নিজ দলের খেলোয়াড়দের সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু আজ পুরো ম্যাচে বসুন্ধরা ছোটখাট ভুল নয়, মৌলিক বিষয়গুলোই ঠিকমতো বাস্তবায়ন করতে পারেনি। সে কারণেই জয় যে ম্যাচে প্রত্যাশিত, সে ম্যাচে হারই হয়েছে সঙ্গী।

ম্যাচের যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে আলি ফাসিরের গোলে স্কোরলাইন ৩–০ করে ফেলে মাজিয়া। তৃতীয় মিনিটে ইব্রাহিম করেন সান্ত্বনাসূচক গোল। তাঁর গোলটি ছিল হেড থেকে।

কিংস আগামী ২ অক্টোবর নিজেদের মাঠ কিংস অ্যারেনায় গ্রুপের অন্য দল ভারতের ওড়িশা এফসির বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামবে।