হ্যারি কেইন গোলের রাস্তা ভালো চেনে

বিশ্বকাপের সব ম্যাচই কঠিন। কোনো ম্যাচেই কাউকে হালকাভাবে নেওয়া যায় না। তাই আগে থেকে নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন, কারা জিতবে। একটা ম্যাচ দেখার পর বলা যাবে, কারা কেমন করতে পারে। তবে দলগুলোর শক্তিমত্তা, ম্যাচ জেতানো খেলোয়াড় এবং ঐতিহ্য বিবেচনায় কিছু পূর্বানুমান করা যেতেই পারে। আজ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় দিনে ইরানের বিপক্ষে ইংল্যান্ড, সেনেগালের বিপক্ষে নেদারল্যান্ডসের জয়ের সম্ভাবনাই বেশি দেখছি। যুক্তরাষ্ট্র-ওয়েলস ম্যাচটা সমানে সমান হতে পারে। শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে যাবে মনে হচ্ছে। তবে জয়ের ব্যবধান খুব একটা বড় হবে না।

কাতার বিশ্বকাপে ইরান সবচেয়ে বয়স্ক দল। বয়সী খেলোয়াড়েরা কতটা কী করতে পারে, সেটা হবে দেখার। দিন শেষে ইরানের বিপক্ষে ইংল্যান্ডই প্রাধান্য নিয়ে খেলবে আমার বিশ্বাস। আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা এবং যেকোনো পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার সামর্থ্য মিলিয়ে ইংল্যান্ডই এগিয়ে। দলটিতে আছে হ্যারি কেইনের মতো স্ট্রাইকার, যে গোলের রাস্তা ভালো চেনে।

ইংল্যান্ড অধিনায়ক হ্যারি কেইন ও জর্ডান হেন্ডারসন

ইংল্যান্ড ফুটবল দল সম্পর্কে সব সময় একটা বলা বলা হয়, কাগুজে বাঘ। বিশ্বকাপের আগে ব্রিটিশ মিডিয়া বিরাট শোরগোল তোলে তাদের দল নিয়ে। কিন্তু ৫৬ বছর ধরে তারা বিশ্বকাপ জেতে না। একটা পর্যায়ে গিয়ে হয়তো থমকে যায়। এর কারণ ইংল্যান্ডের ক্লাব কাঠামোয় বিদেশিদের প্রাধান্য। বিদেশিরাই ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ছড়ি ঘোরায়, পার্থক্য গড়ে দেয়।

ইংল্যান্ডের ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটি বা লিভারপুল এখন ইউরোপের বড় শক্তি। সেটা বিদেশি খেলোয়াড় নিয়ে। কিন্তু শুধু নিজেদের খেলোয়াড় নিয়ে যখন ইংল্যান্ড জাতীয় দল মাঠে নামে, তখন আর সেভাবে বড় কিছু করে উঠতে পারে না।

তবে ইংল্যান্ডের ভালো দিক, ওরা বিশ্বকাপে নিয়মিত খেলে। ফুটবল প্রিয় জাতি হিসেবে সুনাম আছে দেশটার। হারলে ভালো দলের কাছেই হারে। ইংল্যান্ডের নিজস্ব খেলোয়াড়দের মানও খারাপ নয়। সব মিলিয়ে ইংল্যান্ড অবশ্যই একটা শক্তি।

নেদারল্যান্ডস এবার তরুণ্যনির্ভর দল এবং বেশ সম্ভাবনাময়। ওদের খেলার একটা ধরন আছে, ছন্দ আছে। ডাচ কোচ ভালো ট্যাকটিশিয়ান, এই বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি বয়সী কোচও। তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী খেলোয়াড়েরা মাঠে সেরাটা দিতে পারলে সেনেগালের বিপক্ষে নেদারল্যান্ডসের জেতাই উচিত।

সেনেগাল তাদের মূল খেলোয়াড় সাদিও মানেকে হারিয়ে ফেলেছে চোটের কারণে। মানেকে নিয়েই পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন কোচ, সেই পরিকল্পনায় বড়সড় ধাক্কা খেতে হলো। সাদিও মানের অনুপস্থিতি সেনেগালের খেলায় ভীষণ প্রভাব ফেলবে, করিম বেনজেমার চোটের কারণে ফ্রান্সের খেলায় যেমন প্রভাব পড়বে।

আফ্রিকার দলগুলোর মধ্য মরক্কোর খেলা দেখতে আমার ভালো লাগে, তাদের খেলায় একটা ছন্দ থাকে। অন্য আফ্রিকান দলগুলোয় হয়তো দু-একজন দুর্দান্ত খেলোয়াড় আছে, বাকি দলগুলো শরীরনির্ভর, কনুই চালিয়ে খেলতে অভ্যস্ত। সেনেগালও সেই গোত্রের দল। কনুই চালানো বা শরীরনির্ভর খেলাই ওদের ছন্দ নষ্ট করে।

তা ছাড়া আফ্রিকান দলগুলো ম্যাচের একটা সময়ে গতি হারিয়ে ফেলে। নিজেদের খেলা নিজেরাই নষ্ট করে। তবে হাল আমলে একটু বদল আসছে, ওরা বিদেশি কোচ নিচ্ছে। তারপরও আমি বলব, শরীরভিত্তিক না খেলে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে খেললে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে লড়তে পারে সেনেগাল।

যুক্তরাষ্ট্র-ওয়েলস ম্যাচে লড়াই হবে আমার ধারণা। তবে ম্যাচটা দেখে তেমন আনন্দ পাব না ধরেই নিচ্ছি। কারণ, সে রকম উপভোগ্য উপকরণ নেই দুই দলের খেলায়। যে কেউ জিততে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে তরুণ দল, তরুণেরা আনন্দ নিয়েই খেলবে। ভাববে হারানোর কী আছে। এই উজ্জীবনী শক্তিই শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে জেতাবে মনে হচ্ছে।