জোড়া গোল করেছেন লেভা
জোড়া গোল করেছেন লেভা

চ্যাম্পিয়নস লিগ

লেভার জোড়া গোলে নাটকীয় ড্রয়েও খাদের কিনারায় বার্সা

নাটকীয়তা বোধহয় একেই বলে! প্রথমার্ধে এগিয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে দুই গোল খেয়ে বার্সেলোনার পিছিয়ে পড়া। সেখান থেকে ৮২ মিনিটে রবার্ট লেভানডফস্কির গোলে সমতায় ফেরা। এরপর ৮৯ মিনিটে আবার গোল খেয়ে পিছিয়ে যাওয়া।

ম্যাচে বার্সা যখন হারের অপেক্ষায় তখন ফের নাটক। যোগ করা সময়ের ২ মিনিটের মাথায় আবার লেভা-চমকে সমতায় বার্সা। শেষ পর্যন্ত ৩-৩ গোলে ম্যাচ শেষ হলেও এখন খাদের কিনারায় আছে জাভি হার্নান্দেজের দল। পরের দুই ম্যাচের যেকোনো একটি জিতলেই বার্সাকে পেছনে ফেলে নকআউটে যাবে ইন্টার।

ইন্টারের বিপক্ষে বার্সেলোনার চ্যাম্পিয়নস লিগ ভাগ্য ম্যাচের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কেঁপে কেঁপে উঠেছে। কাগজে-কলমে হিসাবটা যে শেষ হয়ে যায়নি সে জন্য তারা চাইলে লেভানডফস্কিকে ধন্যবাদ দিতেই পারে। তবে তাতেও আরেকবার গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় ঠেকানো কঠিনই হবে বার্সার জন্য।

পরের ম্যাচে প্লজেনের বিপক্ষে জয় পেলেই নকআউট নিশ্চিত হবে ইন্টারের। বার্সার পক্ষে পরের দুই ম্যাচ থেকে ১০ পয়েন্টের বেশি পাওয়ার সুযোগ নেই। ইন্টার এক ম্যাচ জিতলেই হবে ১০। তবে মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে থেকে নকআউটে যাবে ইন্টার। তবে বার্সার কপাল খুলতে পারে যদি ইন্টার দুই ম্যাচেই পয়েন্ট হারায়। অবশ্য এখানে শর্ত হচ্ছে বার্সাকে আগে নিজেদের দুটি ম্যাচে জয় পেতে হবে। সবমিলিয়ে এই গ্রুপ থেকে বার্সার নকআউটে যাওয়া এখন সুতোয় ঝুলছে।

ইন্টারের উদ্‌যাপন

ন্যু ক্যাম্পে এদিন ম্যাচের শুরু থেকেই গোলের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে বার্সা। বার্সার বাঁচা-মরার ম্যাচটিতে ছেড়ে কথা বলছিল না ইন্টারও। স্বাগতিকদের আক্রমণের জবাবে পাল্টা আক্রমণে তারাও চেষ্টা করে গোল আদায়ের। দুই গোলরক্ষক দেয়াল তুলে না দাঁড়লে এবং কাছাকাছি গিয়ে সুযোগ হাতছাড়া না হলেও ম্যাচের প্রথম ৩০ মিনিটেই হয়ে যেতে পারত ৪-৫ গোল।

বার্সাকে ঠেকাতে দুই উইংক ব্যাককে নিচে নামিয়ে দুর্ভেদ্য দেয়াল তৈরি করে ইন্টার। তবে শুধু গোল বাঁচানোতেই ব্যস্ত থাকেনি ইতালিয়ান ক্লাবটি। যখনই সুযোগ পেয়েছে আক্রমণে গিয়ে বার্সাকে চাপে ফেলতে চেয়েছে। এদিন বার্সার মাঠে ম্যাচের ১০ মিনিটেই অবশ্য অল্পের জন্য ব্যর্থ হয় রাফিনহার প্রচেষ্টা। পরের কিছু সময়ও চাপ অব্যাহত রাখে বার্সা।

সার্জিও রবার্তো ও উসমান দেম্বেলের গোল উৎসব

১৬ মিনিটে অবশ্য অল্পের জন্য বেঁচে যায় বার্সা। এরপর ধীরে ধীরে পূর্ণ ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দেয় কাতালান জায়ান্টরা। বার্সার একের পর এক আক্রমণে এক পর্যায়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে ইন্টার। ৩৬ মিনিটে রাফিনহার আরেকটি দারুণ প্রচেষ্টা অল্পের জন্য জালের ঠিকানা খুঁজে নিতে ব্যর্থ হয়।

তবে ৪০ মিনিটে ভুল হয়নি উসমান দেম্বেলের। সার্জিও রবার্তোর ক্রসে পা ছুঁয়ে দলকে এগিয়ে দেন ফরাসি তারকা। গোল খেয়ে জেগে উঠার চেষ্টা করে ইন্টার। তবে বার্সার প্রেসিংয়ের সঙ্গে লড়াইয়ে পারছিল না। ভাগ্য ভালো হলে প্রথমার্ধে ব্যবধান বাড়াতে পারত স্প্যানিশ ক্লাবটি।

বিরতির পর ৫০ মিনিটে ম্যাচে সমতা ফেরায় ইন্টার। কাছাকাছি জায়গা থেকে আলেসান্দ্রো বাস্তোনির অ্যাসিস্টে দারুণ এক ভলিতে ন্যু ক্যাম্পকে স্তব্ধ করে দেন নিকোলা বারেল্লা।

লিড হারিয়ে মরিয়া হয়ে উঠে বার্সা। ইন্টারও গোল পেয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে আক্রমণে যায়। ৫২ মিনিটে লেভানডফস্কির শট পোস্টের ওপর দিয়ে যায়। একটু পর ইন্টারের দুর্দান্ত এক আক্রমণ অবিশ্বাস্য দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেন বার্সা গোলরক্ষক আন্দ্রে টের স্টেগান। এরপর টানা কয়েকটি আক্রমণে বার্সকে চাপে রাখে ইন্টার।

অবশেষে ৬৩ মিনিটে তেমনই এক আক্রমণ থেকে ইতালিয়ান ক্লাবটিকে লিড এনে দেন লাউতারো মার্টিনেজ। বুক দিয়ে বল রিসিভ করে আর্জেন্টাইন তারকার নেওয়া শটটি দুই পোস্টে প্রতিহত হয়ে ফিরতে ফিরতে জালে জড়ায়। প্রথমার্ধের বার্সেলোনাকে এ সময় চেনাই যাচ্ছিল না।

পিছিয়ে পড়ে চেষ্টা করে একবার ঠিকই লক্ষ্যভেদ করেছিল বার্সা। তবে সেই গোল বাতিল হয় অফসাইডের ফাঁদে। এরপর লেভার দারুণ এক শট আরও দারুণ দক্ষতায় ঠেকান ইন্টার গোলরক্ষক। এরপরও ম্যাচে ফিরতে লড়াই চালিয়ে যায় বার্সা। অবশেষে এ মৌসুমে যার ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরতা দেখিয়েছিল সেই লেভার গোলে ম্যাচে ফিরে আসে ক্লাবটি।

তবে নাটকের তখনও অনেকটা বাকি। ৮৯ মিনিটে আবার এগিয়ে যায় ইন্টার। ইতালিয়ান ক্লাবটিকে এগিয়ে দেন রবিন গোসেনস। এরপর যোগ করা সময়ে ফের লেভার চমক। দুর্দান্ত এক হেডে কাতালান ক্লাবটিকে আবার সমতায় ফেরান এই পোলিশ স্ট্রাইকার। দলের হার এড়ালেও বিদায় ঠেকানোটা লেভাদের জন্য এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।