>নেপালে অনুষ্ঠিত এসএ গেমসের ফুটবলে পাঁচ দলের মধ্যে তৃতীয় হয়েছে বাংলাদেশ। গেমসের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভুটানের বিপক্ষেও হেরেছে বাংলাদেশ। এই ফলাফলকেই দেশের ফুটবলের মানদণ্ড বলছেন দেশের একমাত্র উয়েফা ‘এ’ লাইসেন্সধারী কোচ মারুফুল হক।
প্রত্যাশা আর বাস্তবতার মাঝে এ যেন আকাশ-পাতাল পার্থক্য। সোনা জয়ের লক্ষ্য নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসের ফুটবলে অংশগ্রহণ করেছিল বাংলাদেশ। সোনা তো অনেক দূরের বাতিঘর, পা রাখা যায়নি সে মঞ্চেই। পাঁচ দলের টুর্নামেন্টে তৃতীয় হয়ে জামাল ভূঁইয়াদের অর্জন ব্রোঞ্জ। ৪ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের একমাত্র জয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। গেমসের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পাওয়া গিয়েছে ভুটানের কাছে হারের স্বাদ। স্পষ্টত দেশের ফুটবলের ব্যর্থতার করুণ ছবিই ফুটে উঠেছে কাঠমান্ডুতে। সে ছবিকেই দেশের ফুটলের মানদণ্ড বলছেন বাংলাদেশের অন্যতম সেরা কোচ মারুফুল হক।
ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী থাকা ফুটবলে গত বছর আলো হয়ে এসেছিল ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমস। মাঝে ঘরের মাঠে সাফ ফুটবলের গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়লেও এশিয়াড থেকে ফুটবলারদের পারফরমেন্সে দেখা যাচ্ছিল উন্নতির ছাপ। বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বেও জামালদের লড়াকু পারফরমেন্স প্রশংসা পেয়েছে। ফলে প্রায় জাতীয় দলটায় অনূর্ধ্ব-২৩ দলের মোড়কে এসএ গেমসে অংশগ্রহণ করায় ফুটবলপ্রেমীদের চোখ ছিল শিরোপায়। সে স্বপ্নে আরও আশা জুগিয়েছিল সবচেয়ে বড় শক্তি ভারতের অনুপস্থিত। কিন্তু কোনো সুযোগই নিতে পারেনি বাংলাদেশ।
‘দুর্বল’ ভুটানের কাছে হেরে শুরু, দ্বিতীয় ম্যাচে আত্মঘাতী গোলের সুবাদে মালদ্বীপের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র। যদিও এই ম্যাচে রেফারির ভুলে গোল বঞ্চিত হয়েছিল বাংলাদেশ। তৃতীয় ম্যাচে এসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১-০ গোলের একমাত্র জয়। ফাইনালে খেলার জন্য শেষ ম্যাচে জয়ের বিকল্প ছিল না। কিন্তু বাঁচা মরার ম্যাচে নেপাল যুবাদের বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরে যায় বাংলাদেশ ‘জাতীয় দল’। ভুটান-নেপালের কাছে হেরে পাঁচ দলের মধ্যে তৃতীয় হওয়াকেই বাংলাদেশের ফুটবলের মানদণ্ড হিসেবে চিহ্নিত করলেন জাতীয় দলের সাবেক কোচ মারুফুল, ‘ভুটান ও নেপালের কাছে হারই বর্তমান দেশের ফুটবলের মানদণ্ড। অন্যরা পরিকল্পনা করে সামনের দিকে এগিয়ে গিয়েছে। আর আমরা আমাদের জায়গায় রয়ে গিয়েছি। ফুটবলের উন্নতি করতে হলে একাডেমিক ভিত্তিক ফুটবলে জোড় দিয়ে খেলোয়াড় তৈরি করতে হবে। বুড়ো বয়সে এসে খেলতে খেলতে ফুটবল শেখা খেলোয়াড়দের নিয়ে মাঝে মাঝে দুই একটা অঘটন পাওয়া গেলেও সাফল্য সম্ভব নয়। শক্তিশালী জাতীয় দলের জন্য প্রয়োজন মানসম্পন্ন ফুটবলার। যে কাজটি নেপাল খুব ভালো ভাবেই করতে পেরে এখন আমাদের হারিয়ে দিচ্ছে। সেই সুফল পেতে শুরু করেছে ভুটানও।’
অথচ এসএ গেমসের আগেও লড়াকু বাংলাদেশকে দেখেছে দর্শকেরা। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের শেষ ম্যাচে ওমানের কাছে ৪-১ গোলে হারার আগে ভারতের বিপক্ষে জিততে জিততে ১-১ গোলে ড্র ও ঘরের মাঠে কাতারের বিপক্ষে ২-০ গোলের লড়াকু হার। প্রায় সে দলটিকেই কিনা কাঠমান্ডুতে চিনতে হলো সবুজ জার্সি দেখে। আক্রমণে পরিকল্পনার কোনো ছাপ নেই। নিচ থেকে অহেতুক বল উড়িয়ে মারা, চাপের মধ্যে বল পায়ে রাখতে না পারা, মিস পাসের ছড়াছড়ি, লম্বা থ্রোইনে বারবার ব্যর্থ হয়েও কৌশল না বদলানো, আর যার সব শেষ হয়েছে দুই উইং থেকে অগোছালো ক্রসে। চোখের জন্য একেবারেই দৃষ্টিকটু ছিল জেমি ডের দলের পারফরম্যান্স।
বাস্তবতায় চোখ রেখে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব ও এসএ গেমসের পারফরমেন্সের পার্থক্য করলেন মারুফুল, ‘আমাদের সম পর্যায় বা আমাদের ভালো দলের বিপক্ষে আমাদের লক্ষ্যই থাকে ঠেকিয়ে রাখা। সেখানে আমাদের হারানোর কিছুই ছিল না। ফলে ডিফেন্ডিং করে ঠেকিয়ে রাখা গেলেই সন্তুষ্টি ছিল। কিন্তু যেই আমাদের ওপর জয়ের চাপ সৃষ্টি হয়েছে, ফুটে উঠেছে আমাদের দুর্বলতা। এখন যেভাবে চলছে এখান থেকে বের হয়ে আসার কোনো সম্ভাবনায় নেই। মাঝে মাঝে দুই একটা চমক দেখানো গেলেও সাফল্য পাওয়া যাবে না। গোড়ায় গিয়ে খেলোয়াড় তৈরি করতে হবে।’
মারুফুল নতুন কোনো কথা বলেননি। একাডেমির কথাটি গত আট-নয় বছরে বাংলাদেশের ফুটবলে খুব আলোচিত বিষয়। ফিফার অর্থায়নে সিলেট বিকেএসপিকে ফুটবল একাডেমি করেও সেটি বন্ধ করে দিয়েছে বাফুফে। যদিও চলতি বছরে বাড্ডার বেরাইদে বাফুফের অধীনে শুরু হয়েছে একটি একাডেমির কার্যক্রম। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়ে এই একটি শুরু করতে পেরেই যেখানে বাফুফের তৃপ্তির ঢেকুর, সেখানে তিনটি একাডেমি চালাচ্ছে অল নেপাল ফুটবল ফেডারেশন, দুইটি আছে ভুটান ফুটবল ফেডারেশনেরও।