গল্পটা আত্মত্যাগের। ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিজানে প্রথম কোনো ভয়ংকর জঙ্গি হামলা দেখেছিল বাংলাদেশ। সে হামলার শিকার হয়েছিলেন ফারাজ আইয়াজ হোসেন। জঙ্গিরা প্রথমে ছেড়ে দিয়েছিল তরুণ ফারাজকে। কিন্তু জঙ্গিরা বন্ধুকে আটকে রাখায় তাঁদের মৃত্যুর মুখে রেখে ফিরে আসার চিন্তা মাথায় টানেননি ফারাজ। জীবন বিসর্জন দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, শান্তি ও সৌভ্রাতৃত্বই হওয়া উচিত তারুণ্যের আদর্শ।
সেই আদর্শকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফুটবল উন্মাদনা সৃষ্টির লক্ষ্যে টানা তৃতীয়বারের মতো আয়োজিত হয়ে গেল ফারাজ আন্তবিশ্ববিদ্যালয় গোল্ডকাপ। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আজ শিরোপার লড়াইয়ে সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হারিয়ে টুর্নামেন্ট প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছে গণবিশ্ববিদ্যালয়।
শিরোপা যার হাতেই উঠুক, টুর্নামেন্ট নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়। ফুটবলের মাধ্যমে এক ছাতার নিচে এসেছিল ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়। আজ শিরোপার লড়াইয়ে তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে ওঠে স্টেডিয়াম। এরই মাঝে বারবার ফিরে এল ফারাজ। খেলোয়াড়দের থেকে শুরু করে উপস্থিত অতিথিদের মুখেও ফারাজের সাহসিকতার কথা। মৃত্যুঞ্জয়ী ফারাজকে ন্যায়-নীতি ও মানবিকতার মূর্ত প্রতীক বলেছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে চ্যাম্পিয়ন দলের হাতে পুরস্কার তুলে দেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী। আর তরুণ খেলোয়াড়দের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন ফারাজের আত্মত্যাগের বার্তা, ‘মর্মান্তিক হোলি আর্টিজান ঘটনার একমাত্র প্রতিবাদকারী ছিলেন ফারাজ আইয়াজ হোসেন। হামলাকারীরা ফারাজকে চলে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বন্ধুদের মৃত্যুর মুখে রেখে একা চলে যেতে চাননি। তিনি ছিলেন ন্যায়-নীতি-মানবিকতার মূর্ত প্রতীক। ফারাজ জীবন দিয়ে আমাদের বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন, শান্তি ও সৌভ্রাতৃত্ব আমাদের আদর্শ। ফারাজের আত্মদান বৃথা যায়নি। ফারাজ বেঁচে আছেন, বেঁচে থাকবেন মানুষের অন্তরে।’
ফারাজ গোল্ডকাপের ফাইনাল উপলক্ষে আজ নতুন করে সেজেছিল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম। এমন একটি টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য আয়োজক সোনালী অতীত ক্লাবকে ধন্যবাদ দিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান। ‘উই আর ফারাজ’ লেখা টি-শার্ট পরে অনেক সমর্থক মাঠে এসেছিলেন। এমন টুর্নামেন্টের আয়োজনের অংশীদার হতে পেরে খুশি পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানির পরিচালক খন্দকার জায়েদ আহসান, ‘নতুন প্রজন্মকে এক করতে এটা একটা প্রশংসনীয় উদ্যোগ। খেলতে খেলতেই এখানে বন্ধুত্ব হচ্ছে। ফারাজ বন্ধুদের জন্য আত্মত্যাগ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এখানে খেলার সুবাদে যেন সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমে আর না ঢোকে সেটাই আমাদের চাওয়া। এমন টুর্নামেন্টের সঙ্গে থাকতে পেরে আমরা খুশি। ভবিষ্যতে টুর্নামেন্টটা আশা করি আরও জমজমাট হবে।’ সোনালী অতীত ক্লাবের আয়োজনে এই টুর্নামেন্টের সহযোগী পৃষ্ঠপোষক শাহজালাল ব্যাংক ও হা-মীম গ্রুপ।
আরও পড়ুন:
ফারাজ গোল্ডকাপের শিরোপা গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের