১ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে শীতকালীন দলবদলের মৌসুম। মৌসুমের শুরুতে দলের মধ্যে সৃষ্ট হওয়া সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে শূন্যস্থান পূরণের জন্য হাজির হয় এই দলবদল মৌসুম। এ দলবদলে কোন দলের কী সমস্যা, কোন দলের বিভাগে দরকার নতুন মুখ—এ নিয়ে নিয়মিত আলোচনা করা হবে প্রথম আলোতে। আজ প্রথম পর্বের দল হিসেবে থাকছে ম্যানচেস্টার সিটি।
‘পেপ আর কত খেলোয়াড় নেবেন?’
ম্যানচেস্টার সিটি ও পেপ গার্দিওলা সম্পর্কে ধারণা রাখা সবার মুখেই এই প্রশ্ন। দলে এত খেলোয়াড় থাকার পরেও লেস্টার সিটি থেকে গ্রীষ্মকালীন দলবদলের মৌসুমে ৬৭ মিলিয়ন পাউন্ড দিয়ে কিনে এনেছেন রিয়াদ মাহরেজকে। তখন মনে হয়েছিল দলের বেঞ্চে বসে থাকা ছাড়া কোনো কাজ থাকবে না তাঁর। গার্দিওলা এমন এক দল বানিয়েছেন যাতে শুধু প্রথম একাদশ নয় দলের বেঞ্চে কে থাকবে এ নিয়েও অদৃশ্য লড়াই হয়!
তবে মাহরেজকে নিয়ে নতুন এক ট্যাকটিকস ব্যবহার করে জবাব দিয়েছেন গার্দিওলা। যদিও এখনো সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে যেতে পারেনি গার্দিওলার দল। সিটির সবচেয়ে বড় শক্তিমত্তাই এখন হয়ে উঠেছে দুর্বলতা। সেরা একাদশ ঠিক করতে না পারছেন না পেপ।
গত মৌসুমে অসাধারণ একটি দল নিয়ে অবিশ্বাস্য সব রেকর্ড গড়ে প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জিতেছেন। কিন্তু বাকি সব ট্রফিতে কিছু অর্জন করতে পারেননি পেপ। লিগ কাপকে শীর্ষস্থানীয় ক্লাবগুলো কেউ তেমন একটা গুরুত্ব দেয় না। চ্যাম্পিয়নস লিগের দুই লেগেই লিভারপুলের কাছে হেরেছেন গার্দিওলা। অথচ ম্যানচেস্টার সিটির লক্ষ্য ইউরোপে নিজেদের আধিপত্য দেখানো। চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে খেলার পরও বোর্ড ম্যানুয়েল পেলেগ্রিনির বদলে গার্দিওলাকে নিয়ে এসেছে। এরপর ৬০০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে ফেলেছেন, কিন্তু পেলেগ্রিনির সাফল্য তিন মৌসুমে এখন পর্যন্ত ছুঁতে পারেননি গার্দিওলা।
সর্বশেষ মৌসুম ছিল গার্দিওলার অধীনে ম্যানচেস্টার সিটির সেরা মৌসুম। কিন্তু এবার শুরুতে সাফল্য পেলেও চেলসির কাছে হারের পর থেকেই দুর্বলতা বেড়িয়ে পড়ছে। খেলোয়াড়দের চোট এতে বেশি ভূমিকা রেখেছে। গত মৌসুমের প্রায় পুরোটাই হাসপাতালেই ছিলেন লেফটব্যাক মেন্ডি।এ মৌসুমে শুরুতে একটু আশা দেখিয়ে আবারও চোটের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়েছেন। পারিবারিক জটিলতার ডেভিড সিলভার অনেকটা সময় না থাকা, জন স্টোনসের চোট ও শুরুতেই চোটের কারণে কেভিন ডি ব্রুইনার বাইরে চলে যাওয়া বিপদে ফেলেছে দলকে।
তবুও সমস্যা সামলে উঠেছিলেন গার্দিওলা। কেভিন ডি ব্রুইনার জায়গায় বের্নাদো সিলভা খুব ভালোভাবেই মানিয়ে নিয়েছেন, সঙ্গে ছিলেন মাহরেজও। প্রিমিয়ার লিগে দ্বিতীয় স্থান আর চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় পর্ব নিশ্চিত করেছে ম্যানচেস্টার সিটি। কিন্তু মূল সমস্যার সমাধান এখনো পাচ্ছেন না গার্দিওলা। দলের ভালো পারফরমেন্সের জন্য প্রয়োজন ভালো দলীয় সমন্বয়। প্রথম একাদশে ম্যাচের ঘুড়িয়ে দেওয়ার মতো খেলোয়াড় প্রয়োজন সবার। গার্দিওলার এমন খেলোয়াড়ের অভাব নেই। সেই সঙ্গে অন্য দলের ম্যাচ বদলে দেওয়া আটকানোর ক্ষমতাও থাকা লাগে দলের। এভাবেই দল সৃষ্টি করতে হয়। এখানেই কোনো উত্তর পাচ্ছেন না স্প্যানিশ কোচ।
সিটির একরাশ তারকা আর সৃষ্টিশীল খেলোয়াড়দের মাঝে হারিয়ে যাওয়া এক নাম ফার্নান্দিনহো। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারদের কখনোই কেউ আলোতে আনতে চান না। কিন্তু একজন কাসেমিরো রিয়াল মাদ্রিদের জন্য যতটা গুরুত্বপূর্ণ, সিটির জন্য ফার্নান্দিনহো তাই। গার্দিওলা এই ব্রাজিলিয়ানের বিকল্প কাউকে খুঁজে পাচ্ছেন না। ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে তাঁর অনুপস্থিতিতে স্টোনসকে খেলানো হয়েছিল। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। ফলে ঘরের মাঠেও প্যালেসের মতো দল সিটিকে হারিয়ে দিয়েছে!
গার্দিওলা যদিও জোর গলায় বলছেন এই শীতকালীন দলবদলের মৌসুমে তাঁর কাউকে দরকার নেই, তবুও সিটি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নতুন খেলোয়াড়ের জন্য। তবে দলবদলের মৌসুমে সবার আগেই খেলোয়াড় কেনা শেষ পেপ গার্দিওলার। যুক্তরাষ্ট্রের গোলরক্ষক জ্যাক স্টিভেনকে ইতিমধ্যে নিজের দলে ভিড়িয়েছেন। ফার্নান্দিনহোর বিকল্পও তাঁকে খুঁজে নিতে হবে জানুয়ারিতে। সে সঙ্গে অন্য কোথাও যদি প্রয়োজন হয়, সে জায়গাটি হলো লেফট ব্যাক। দলের লেফট ব্যাক বেঞ্জামিন মেন্ডি তো কদিন পরপরই চোটের কারণে মাঠের বাইরে যাচ্ছেন। জিনশেঙ্কো আর ডেলফ দিয়ে মোটামুটি চালিয়ে নেওয়া যাচ্ছে বটে। গার্দিওলার চোখ লেস্টার সিটির ডিফেন্ডার বেন চিলওয়েলের দিকে। এ ছাড়াও নজর আছে চুক্তি নিয়ে অসন্তুষ্ট বার্সেলোনার লেফট ব্যাক জর্ডি আলবার দিকেও।