'টোটাল ফুটবলে' দীক্ষিত ওমান, পারবে বাংলাদেশ?

এবার বাংলাদেশের সামনে ওমান জাতীয় দল। ছবি : ওমান এফএ`র অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট
এবার বাংলাদেশের সামনে ওমান জাতীয় দল। ছবি : ওমান এফএ`র অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট

তিন ম্যাচে এক পয়েন্ট। বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের যৌথ বাছাইপর্বে নিজেদের গ্রুপে বাংলাদেশ যে খুব সুবিধাজনক অবস্থানে আছে, বলা যাবে না। ছয় দেশের গ্রুপে এক পয়েন্ট নিয়ে সবার নিচে আছেন জামাল ভূঁইয়ারা। যদিও গত ১৫ অক্টোবর কলকাতার যুব ভারতীয় ক্রীড়াঙ্গনে ভারতের বিপক্ষে জিততে জিততে ১-১ গোলে ড্র করাটা দলকে আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে। আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে ১০ অক্টোবর ঢাকায় এশিয়ান কাপ চ্যাম্পিয়ন কাতারের সঙ্গে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। সে ম্যাচে ২-০ গোলে হারলেও কাতারের চোখে চোখ রেখে খেলে বাংলাদেশ নিজেদের শক্তির জায়গাটা বুঝতে পেরেছে। সে ম্যাচে গোল মিসের মহড়া না দিলে ফলটা অন্যরকম হওয়ারও সুযোগ ছিল।

এই দুই ম্যাচের আত্মবিশ্বাসকে সঙ্গে নিয়েই জেমি ডের শিষ্যরা এ মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্যেরই আরেক দেশ ওমানে। মাসকাটে বৃহস্পতিবার স্বাগতিকদের মুখোমুখি হবে দল। কাতারের পর নিজেদের গ্রুপের দ্বিতীয় সেরা দল এই ওমানের বিপক্ষে কেমন করবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ কি পারবে কাতার ও ভারত ম্যাচের পারফরম্যান্সের পুনরাবৃত্তি করে দারুণ কিছু করে দেখাতে?

কাজটা যথেষ্ট কঠিন হবে সন্দেহ নেই। শুধু কঠিনই নয়, এটি অনেকটা পাহাড় ডিঙানোর মতো ব্যাপারই। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ৮৪তম অবস্থানে থাকা এই ওমান দলটি আসলে কেমন? বাংলাদেশের বিপক্ষে যে স্কোয়াড ঘোষিত হয়েছে, তাতে আছে অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের মিশেল। প্রিয় পাঠক আসুন ম্যাচের আগে ওমানের শক্তিমত্তার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক...

ওমানের মধ্যে ডাচদের ‘টোটাল ফুটবল ডিএনএ’ এই এরউইনই ঢোকাচ্ছেন। ছবি : ওমান এফএ`র অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট

প্রথমেই পরিচিত হওয়া যাক দলটার কোচ সম্পর্কে। ওমানের কোচ হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন ডাচ কোচ এরউইন কোম্যান। এই ‘কোম্যান’ নামটি কি একটু চেনা চেনা লাগছে? লাগারই কথা। কিংবদন্তি ডাচ তারকা রোনাল্ড কোম্যানের বড় ভাই তিনি। খেলোয়াড়ি জীবনে মিডফিল্ডার হিসেবে খেলা এই তারকা আশির দশকে নেদারল্যান্ডসের জাতীয় দলে মার্কো ফন বাস্তেন, রুড খুলিত, ফ্রাঙ্ক রাইকার্ডদের সতীর্থ ছিলেন। খেলেছেন পিএসভির মতো ক্লাবে। বুটজোড়া তুলে ফেলার পর কোচ হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেছেন। ডাচ ক্লাব ফেইনুর্দের কোচ ছিলেন, ছোট ভাই যখন সাউদাম্পটন আর এভারটনের মতো ক্লাবের কোচ ছিলেন তখন তাঁর সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এরউইন। ওমান দলকে ডাচদের সেই বিখ্যাত ‘টোটাল ফুটবল’ এর মন্ত্রে দীক্ষিত করছেন এরউইন, বলাটা বাহুল্য হবে না বোধ হয়!

গোলরক্ষক ফায়েজ আল রুশাইদি। ছবি : ওমান এফএ`র অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট

গোলরক্ষক হিসেবে ওমান দলটায় জায়গা করে নিয়েছেন ফায়েজ আল রুশাইদি, আলী আল হাবসি, ইবরাহিম আল মুখাইনি ও আহমেদ আল রাওয়াহি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের পুরোনো দর্শকেরা হয়তো আলী আল হাবসিকে চিনে থাকবেন। তিনি কয়েক বছর আগেও বোল্টন ওয়ান্ডারার্স, উইগান অ্যাথলেটিক ও রিডিংয়ের মতো ক্লাবগুলোতে খেলে গিয়েছেন। এখন বয়স হয়ে গিয়েছে ৩৭, স্বাভাবিকভাবেই দলের মূল গোলরক্ষকের জায়গাটা তাঁর কাছে নেই। দলের মূল গোলরক্ষক এখন ফায়েজ আল রুশাইদি। ২০১০ সালে অভিষিক্ত এই গোলরক্ষক এখন খেলছেন ধোফার ক্লাবে। এ বছর ওমানের হয়ে প্রতিটি ম্যাচেই খেলেছেন তিনি।

মূলত ৪-২-৩-১ ছকেই ওমান দলকে খেলিয়ে থাকেন এরউইন। মূল ছক এটা হলেও ক্ষেত্রবিশেষে ৪-৪-২ ছকে খেলিয়ে থাকেন দলকে। অর্থাৎ যে ছকই হোক না কেন, রক্ষণভাগে চারজন খেলোয়াড়ের উপস্থিতি নিশ্চিত। রাইটব্যাক হিসেবে ওমান দলে ডাক পেয়েছেন আবদুল আজিজ আল ঘিলানি। তিনিই দলের মূল রাইটব্যাক। গত কয়েকটা ম্যাচে তাকেই এই জায়গায় খেলিয়েছেন এরউইন। এ ছাড়াও বহুদিন পর দলে ডাক পেয়েছেন আরেক রাইটব্যাক সাদ সুহাইল। ঘিলানির আগে অভিজ্ঞ সুহাইলই ওমানের মূল রাইটব্যাক ছিলেন।

>

আগামীকাল ওমানের সুলতান কাবুস স্পোর্টস কমপ্লেক্সের মাঠে বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের যৌথ বাছাইপর্বের ম্যাচে ওমানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। দল হিসেবে ঠিক কতটা শক্তিশালী তারা?

রক্ষণভাগের বাম দিকে থাকবেন কোচের মূল ভরসার লেফটব্যাক আলী আল বুসাইদি। সেন্টারব্যাক হিসেবে দলে নেওয়া হয়েছে মোহাম্মদ আল মুসাল্লামি, মোহাম্মদ ফারাজ আল রাওয়াহি, ওমরান আল হাদি, ফাহমি দোরবিন ও আবদুল সালাম আমের। মূল একাদশের দুজন সেন্টারব্যাকের মধ্যে মোহাম্মদ আল মুসাল্লামির জায়গা নিশ্চিত। তাঁর সঙ্গী হিসেবে মূল একাদশে জায়গা পাওয়ার জন্য লড়বেন বাকি তিনজন। এর মধ্যে কাতার, আফগানিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে ওমরান আল হাদি খেলেছিলেন, কেজেই এই ম্যাচেও তাঁর থাকার সম্ভাবনাই বেশি। বলা যায়, বাংলাদেশের বিপক্ষে এক রকম পূর্ণশক্তির রক্ষণভাগ নিয়েই নামবে ওমান।

সম্ভাব্য ৪-২-৩-১ ছকে দুজন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার খেলেন। এই দুই জায়গায় খেলানোর জন্য এরউইন কোম্যান দলে নিয়েছেন চারজনকে - আহমেদ মোবারক কানু, হারিব আল সাদি, মোহাম্মদ আল ঘাফরি ও মোহসিন জওহর। মোবারক, হারিব ও মোহসিন - তিনজনই ওমান দলে ঘুরেফিরে নিয়মিত খেলেন। বিশেষ করে আহমেদ মোবারক। ওমান দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড় তিনি। দলের অধিনায়কত্বও তিনিই করেন। সেই ২০০৩ সাল থেকে খেলে যাচ্ছেন, এখনো চিরসবুজ এই তারকা জাতীয় দলের হয়ে খেলে ফেলেছেন ১৭৪ ম্যাচ। মোবারকের সঙ্গে হারিব ও মোহসিনের মধ্যে একজন বা দুজনকেই খেলাতে পারেন এরউইন। একজন খেললে ছক যথারীতি ৪-২-৩-১ থাকবে, কিন্তু দুজন খেললে ওমানের ছক হয়ে যাবে ৪-৩-৩।

আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে দলে নেওয়া হয়েছে আহমেদ আল কাবি ও ইয়াসিন আল শিয়াদিকে। দুজনের কেউই ওমানের হয়ে এ বছর কোনো ম্যাচ খেলেননি। বাংলাদেশের বিপক্ষেও যে খেলবেন, সে সম্ভাবনা কম।

আক্রমণভাগের অন্যতম বড় ভরসা মোহসিন আল ঘাসানি। ছবি : ওমান এফএ`র অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট

উইঙ্গার হিসেবে দলে আছেন আল মুনধির আল আলাউই, আরশাদ আল আলাউই ও জহির আল আঘবরি। ওমানের সিব ক্লাবের তরুণ উইঙ্গার জহির আল আঘবরির খেলায় এরউইন বিশেষ মুগ্ধ হয়েছেন, বাংলাদেশের বিপক্ষে তাঁকে মাঠে দেখা যেতে পারে। নির্ভরযোগ্য উইঙ্গার রাঈদ আল ইব্রাহিম চোটের কারণে আছেন দলের বাইরে, তাঁর জায়গাতেই মাঠে নামতে পারেন জহির আল আঘবরি। আরেক উইঙ্গার হিসেবে থাকতে পারেন মুনধির।

অধিনায়ক আহমেদ মোবারক। ছবি : এএফপি

স্ট্রাইকার হিসেবে দলে নেওয়া হয়েছে চারজনকে— মোহসিন আল ঘাসানি, আবদুল আজিজ আল মুকবালি, সাঈদ আল রুজাইকি ও ইসাম আল সুবহি। এর মধ্যে আল ঘাসানি ও আল মুকবালি নিয়মিত খেলে থাকেন ওমানের হয়ে। স্ট্রাইকার হিসেবে খেলার পাশাপাশি উইঙ্গার হিসেবে খেলতেও পারদর্শী আল ঘাসানি। ২০১৭ সালে জাতীয় দলে অভিষিক্ত আল ঘাসানি এ পর্যন্ত ১৩ ম্যাচ খেলে করেছেন দুই গোল। ওদিকে আল মুকবালি পুরোদস্তুর স্ট্রাইকার। পুরোদস্তুর স্ট্রাইকার হিসেবে আরবের গালফ কাপে ওমানের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা সাঈদ আল রুজাইকিকেও নেওয়া হয়েছে। ফলে মূল একাদশের প্রধান স্ট্রাইকার হওয়ার লড়াইটা আল মুকবালি ও আল রুজাইকির মধ্যেই হবে। 

নিজেদের মাঠে খেলা, তাও আবার পয়েন্ট তালিকার সবচেয়ে নিচে থাকা দলটার বিপক্ষে। এত কিছুর পরেও বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচটাকে নতুন খেলোয়াড় পরখ করে নেওয়ার উপলক্ষ হিসেবে নিচ্ছে না ওমান। অন্তত তাঁদের ঘোষিত দলটা দেখে সেটা মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয়। দলে যাদের ডেকেছেন এরউইন কোম্যান, অনায়াসেই সম্ভাব্য সবচেয়ে শক্তিশালী ওমানি দলটার সামনেই পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ।