৬০ বছর আগে-পরের দুটি ছবি। ১৯৫৮ বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে পেলে, কিলিয়ান এমবাপ্পের হাতে ২০১৮ বিশ্বকাপের ট্রফি। রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালের পর পাশাপাশি ‘টিনএজার’ দুই ফুটবলারের এই দুটি ছবি অনেকবার দেখেছেন ফুটবলপ্রেমীরা। দুজনের বেশ তুলনাও হয়েছে তখন। পেলের পর দ্বিতীয় টিনএজ ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল করে এমবাপ্পেই তৈরি করেছিলেন উপলক্ষটা। সেই দুজনকে এবার আর আলাদা ছবিতে নয়, দেখা গেল একসঙ্গে, একই ফ্রেমে।
দুজনকে এক করেছে ঘড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান উবলো। এমবাপ্পের পৃষ্ঠপোষক এই প্রতিষ্ঠানের এক প্রচারণা অনুষ্ঠানে পরশু হাজির হয়েছিলেন দুই প্রজন্মের দুই বিশ্বকাপজয়ী। পাশাপাশি বসে গল্প করেছেন, তারপর সংবাদমাধ্যমের সামনে একজন অন্যজনকে নিয়ে কথাও বলেছেন। সেই কথাতেই বেরিয়ে এসেছে এমবাপ্পেকে নিয়ে পেলের মুগ্ধতা, পেলের প্রতি এমবাপ্পের শ্রদ্ধা।
এমবাপ্পেই বেশি খুশি হয়েছেন সম্ভবত। পেলে যদি কারও সম্পর্কে বলেন, ‘ও আমার ১০০০ গোলের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলতে পারে’, তিনি কি খুশি না হয়ে পারেন! অবশ্য ফরাসি ফরোয়ার্ডের প্রশংসা করতে গিয়ে পেলে বরাবরই বেশ উদার। গত ডিসেম্বরেই ২০তম জন্মদিনে পা রাখা এমবাপ্পেকে শুভেচ্ছা জানিয়ে টুইট করেছিলেন, ‘বিশেষ প্রতিভাবান যারা, তারাই শুধু শুরুতেই নিজেদের মেলে ধরতে পারে। শুভ জন্মদিন, কিলিয়ান। সবে ২০-এ পা রাখলে তুমি। সামনে আরও কত চমক যে দেখাবে, সে কথা ভেবে আমি রোমাঞ্চিত।’
এরপর গত জানুয়ারিতে ফ্রান্স ফুটবল সাময়িকীর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে আবার জানিয়েছেন এমবাপ্পেকে নিয়ে মুগ্ধতার কথা, ‘সে উনিশে বিশ্বকাপ জিতেছে। আমি জিতেছিলাম সতেরোয়। মজা করে ওকে বলেছিলাম, তুমি তো আমাকে ধরেই ফেলেছিলে প্রায়! আমার বিশ্বাস, সে-ই হবে নতুন পেলে। অনেকেই ভেবেছিল, আমি ঠাট্টা করছি। কিন্তু এটা মোটেই রসিকতা ছিল না।’
পরশু প্যারিসে আরও একবার নিজের প্রশংসা বন্যায় ভাসালেন ফুটবলের রাজা। তারপর ফরাসি ফরোয়ার্ডকে নিয়ে একটা ভবিষ্যদ্বাণীও করলেন, ‘ওর পক্ষে আমাকে ছোঁয়া সম্ভব। আমি ঠিক ১০২৫ গোল করেছিলাম। তাই ১০০০ গোল করা তার পক্ষেও সম্ভব।’
১৭ বছর বয়সে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন পেলে, এমবাপ্পে জিতেছেন উনিশে। দুজনেই বয়স ২০ হওয়ার আগে বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল করার কীর্তি গড়েছেন। এ কারণেই একজনের সঙ্গে অন্যজনের তুলনা। তবে বিনয়ী এমবাপ্পে অবশ্য এই তুলনায় কিছুটা বিব্রতও। কোনোভাবেই তিনি পেলেকে ছুঁতে পারবেন মনে করেন না, ‘যদি পাড়ামহল্লার মাঠের গোলও হিসাব করি, যদি প্লে-স্টেশনে করা গোলও ধরি, তবু ১০০০ গোলের মাইলফলক ছোঁয়া সম্ভব হবে বলে মনে করি না। আমরা সবাই শুধু তাঁর কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টাই করতে পারি।’
২০ বছর বয়সী এমবাপ্পের সবসুদ্ধ গোল ১০৩টি। আর পেলে ২১ বছর বয়সে জিতে যান দ্বিতীয় বিশ্বকাপটিও। ব্রাজিল কিংবদন্তিকে তাই অন্য উচ্চতায় রাখছেন এমবাপ্পে, ‘রাজা একজনই থাকেন। তিনি সেখানেই আছেন। আর আমি কিলিয়ান স্রেফ নিজের সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টাই করতে পারি, আমার ক্লাব এবং জাতীয় দলকে জেতানোর জন্য।’
তবে পেলের সঙ্গে এই যে তাঁর নামটাও উচ্চারিত হচ্ছে, এটাও কম মনে করেন না এমবাপ্পে, ‘তুলনাটা (আমার কাছে) অভিভূত হওয়ার মতোই। তবে আমি ভালো করেই জানি, তিনি যা করে গেছেন, কখনোই আমি তা করতে পারব না।’
এসব তুলনা ভুলে গিয়ে পিএসজি স্ট্রাইকার তাই মন দিতে চান ফুটবল উপভোগের মন্ত্রে, ‘যখন পেলে খেলতেন, তখন তিনি ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার কথা ভাবেননি। তিনি খেলাটাকে উপভোগ করতে চেয়েছেন এবং এর মধ্য দিয়েই তাঁর দেশ এবং ক্লাবকে সাহায্য করেছেন। যা আমিও পিএসজি এবং ফ্রান্স দলের জন্য করতে চাই। এরপর মানুষই বলবে, আমি সেরা কি না। কেউ সেরা হলে সবাই তাকে সেরাই বলবে। এটা নিজের বলার দরকার নেই। এটা আমার লক্ষ্যও নয়।’