‘এমএসএন’ এখন অতীত। নেইমারের শূন্যস্থান পূরণ করে এবার ‘এলওএল’ ত্রয়ী নিয়ে মাঠে নামবে বার্সেলোনা। লিওনেল মেসি ও লুইস সুয়ারেজ অবদান রাখছেন ‘এল’ অক্ষরটি দিয়ে। আর বাকি কাজটা সারছেন ওউসমানে ডেমবেলে। ইউরোপিয়ান সংবাদমাধ্যমগুলো যদি ভুল না করে থাকে তবে আজই ফরাসি উঠতি তারকাকে দলে ভেরাচ্ছে কাতালানরা।
ডেমবেলের দলবদলের খবরের পরই সৃষ্টি করা হয়েছে নতুন এই ‘এলওএল’-ত্রয়ী। তবে যে অর্থে ব্যবহৃত হয় এই তিনটি অক্ষর (লাফ আউট লাউড), তাতে এ দলবদল নিয়ে উচ্চকণ্ঠে হাসার মতো কিছু না ঘটলেই ভালো!
এসবই ঠাট্টা, মজা করে বলা। কিন্তু ডেমবেলে যে বার্সায় যাচ্ছেন, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ খবর। হাসি-ঠাট্টার কোনো সুযোগ নেই এতে। জার্মান গণমাধ্যম ‘বিল্ড’ গতকাল জানিয়েছে, বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের ফরাসি স্ট্রাইকার ওউসমানে ডেমবেলেকে ১৫ কোটি ইউরো ট্রান্সফার ফি’তে কিনতে সম্মত হয়েছে বার্সেলোনা। তাঁদের ভাষ্যমতে, মোনাকোয় চ্যাম্পিয়নস লিগের ড্র অনুষ্ঠানে দুই ক্লাবের প্রতিনিধিরা এ ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। তবে আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি। স্প্যানিশ গণমাধ্যম মার্কা জানিয়েছে, ২০ বছর বয়সী স্ট্রাইকারটির সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তি করবে বার্সা।
ডেমবেলের বার্সায় যাওয়া নিয়ে ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে খেলোয়াড়টির পরিবার। মার্কার মতে, ‘বার্সার জন্য ডেমবেলেকে কেনা বাস্তবে পরিণত হবে আজ দুপুর নাগাদ (জার্মান সময়)।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের মাধ্যমে ‘বিল্ড’ জানিয়েছে, ডেমবেলের ট্রান্সফার ফি হিসাবে ১২ কোটি ইউরো দেবে বার্সা। বাকি ৩ কোটি ইউরো দেওয়া হবে ‘অ্যাড-অনস’ (পারফরম্যান্স বোনাসসহ আনুষঙ্গিক শর্তের ভিত্তিতে) হিসেবে। তবে দলবদলের অঙ্ক নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। স্প্যানিশ গণমাধ্যম জানিয়েছে, শুধু ট্রান্সফার ফি হিসেবে দেওয়া হবে ১০ কোটি ৫০ লাখ ইউরো। বাকি ৪ কোটি ৫০ লাখ ইউরো দেওয়া হবে শর্ত হিসেবে। তবে যেকোনোভাবেই অঙ্কটা যে ডর্টমুন্ডের দাবিকৃত ১৫ কোটি ইউরো ছোঁবে, এটা নিশ্চিত।
নেইমার ন্যু ক্যাম্প ছাড়ার পর তাঁর শূন্যতা পূরণে উঠেপড়ে লেগেছে বার্সা। শূন্যতা পূরণে তারা পাখির চোখ করেছিল লিভারপুলের ফিলিপে কুতিনহো ও ওউসমানে ডেমবেলেকে। কুতিনহোকে কেনার চেষ্টায় তিনবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছে কাতালান ক্লাবটি। ডেমবেলের ক্ষেত্রেও অমন কিছুই হতে যাচ্ছিল। প্রথমে ১০ কোটি ইউরো এবং পরে ১৩ কোটি ইউরো—বার্সার এ দুটি প্রস্তাবই নাকচ করে দিয়েছিল ডর্টমুন্ড। শেষ পর্যন্ত তাদের চাহিদামতোই ট্রান্সফার ফি দিয়ে ডেমবেলেকে পেতে যাচ্ছে বার্সা।
ফরাসি রেঁনে থেকে গত বছরের মে মাসে ডেমবেলেকে ১ কোটি ৫০ মিলিয়ন ইউরোয় কিনেছিল ডর্টমুন্ড। তখন বার্সা তাঁকে কিনতে সে রকম আগ্রহ দেখায়নি। মাত্র ১৫ মাসের ব্যবধানে সেই খেলোয়াড়টিকেই বার্সা কিনছে প্রায় ১০ গুণ বেশি দামে! এ নিয়ে অবশ্য নাটক কম হয়নি। ডেমবেলে নিজেই ডর্টমুন্ড ছাড়তে চেয়েছিলেন। দলীয় অনুশীলনে না আসায় তাঁকে নিষিদ্ধও করেছিল সিগন্যাল ইদুনা পার্কের ক্লাবটি।
>বার্সার ইতিহাসে এর আগে সবচেয়ে দামি চার সাইনিং ছিল—নেইমার (৯ কোটি ৭০ লাখ ইউরো, সান্তোস থেকে), লুই সুয়ারেজ (৮ কোটি ১০ লাখ ইউরো, লিভারপুল থেকে), ইব্রাহিমোভিচ (৬ কোটি ৯০ লাখ ইউরো, ইন্টার মিলান), ডেভিড ভিয়া (৪ কোটি ইউরো, ভ্যালেন্সিয়া)। অর্থাৎ, আনুষ্ঠানিক চুক্তি হওয়ার পর ডেমবেলে হবেন বার্সার ইতিহাসে সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়। নিজেদের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো কোনো খেলোয়াড়কে ১০০ মিলিয়ন ইউরোর (১০ কোটি ইউরো) বেশি ট্রান্সফার ফি’তে কিনতে সম্মত হলো বার্সা। এ ছাড়াও নেইমারের (২২ কোটি ২০ লাখ ইউরো) পর ডেমবেলে হবেন ফুটবল ইতিহাসের দ্বিতীয় ব্যয়বহুল সাইনিং
বুন্দেসলিগায় গত মৌসুমে ‘সেরা নবীন’ খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতা ডেমবেলে ডান পায়ের ফুটবলার। ডর্টমুন্ডে গত মৌসুমে ডান প্রান্তেই খেলেছেন বেশির ভাগ সময়। এদিকে বার্সেলোনার পছন্দ বাঁ প্রান্ত দিয়ে প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকে শট নেওয়ার মতো খেলোয়াড়। ডেমবেলে যেহেতু ডান পায়ের খেলোয়াড়, এ কারণে তাঁকে হয়তো বাঁ প্রান্তেই খেলাবে বার্সা। কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দের পছন্দের ৪-২-৩-১ ফরমেশনেও বাঁ প্রান্তে খেলতে পারবেন ডেমবেলে। তখন মেসি হয়তো সেন্টার অ্যাটাকিং মিডফিল্ডে কিংবা ডান প্রান্তে খেলতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বার্সার আক্রমণভাগ আগের মতো ‘ত্রিফলা’ই থেকে যাবে, শুধু পাল্টে যাবে নাম ; ‘এমএসএন’ থেকে ‘এলওএল’—লিও, ওউসমানে ও লুইস! সূত্র: মার্কা, রয়টার্স, ইএসপিএন