>চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় রাউন্ডে গত রাতে অ্যাটলেটিকোর মাঠে গিয়ে হেরে এসেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল। প্রথম লেগে ১-০ গোলের এই হারের পরেও লিভারপুলের সামনে সুযোগ আছে নিজেদের মাঠে অপেক্ষাকৃত বড় ব্যবধানে জিতে পরের রাউন্ডে যাওয়ার। সে আশাতেই আছেন দলটির কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ
অ্যাটলেটিকোর মাঠ ওয়ান্দা মেত্রোপলিতানোর সঙ্গে লিভারপুলের সম্পর্ক বেশ মধুর। এই মাঠেই কয়েক মাস আগে নিজেদের ষষ্ঠ চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জিতেছে লিভারপুল, টটেনহামকে হারিয়ে। সেই সুখস্মৃতিতে ভর করে এবারও ম্যাচ জিতবে, এমনটাই ভেবেছিল তারা। কিন্তু তাদের সেই পরিকল্পনায় পানি ঢেলে দিয়েছে ডিয়েগো সিমিওনের ক্লাব। প্রথম লেগে ১-০ গোলে জিতে কোয়ার্টারের পথে এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছে তারা।
তবে অ্যাটলেটিকোর দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা যে এখনই নিশ্চিত নয়, সেটাই ম্যাচ শেষে মনে করিয়ে দিয়েছেন ক্লপ। দ্বিতীয় লেগের খেলা হবে লিভারপুলের অ্যানফিল্ডে। আর নিজেদের মাঠে লিভারপুল যে কতটা ভয়ংকর, সেটা নতুন করে না বলে দিলেও চলছে। গত বার সেমিফাইনালের প্রথম লেগে বার্সেলোনার মাঠে গিয়ে ৩-০ গোলে হেরে আসা লিভারপুল নিজেদের মাঠে দ্বিতীয় লেগে ৪-০ গোলে জিতে ৪-৩ গোলের অগ্রগামিতা নিয়ে উঠেছিল ফাইনালে। নিজেদের মাঠে লিভারপুল বরাবরই এমন। মাঠে আসা হাজার হাজার সমর্থকদের উল্লাসধ্বনি ও চিৎকারে যেন আরও ভয়ংকর এক ক্লাবে পরিণত হয় লিভারপুল। সেটাই আরেকবার সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছেন ক্লপ, ‘আমার মনে হয় না পরের লেগের জন্য আমাকে বিশেষ কিছু করতে হবে। আমাদের সমর্থকেরা প্রস্তুত থাকবে। অ্যানফিল্ডে অ্যাটলেটিকোকে স্বাগতম, খেলা এখনো শেষ হয়নি!’
নিজেদের মাঠে খেলার সুবিধা পুরোদমে নিয়েছে অ্যাটলেটিকো, এটাই মানছেন ক্লপ, ‘আমার মনে হচ্ছিল, আমাদের কাছে শুধু একটা ট্যাংক ছিল। আর ওদিকে অ্যাটলেটিকো বারবার তাদের ট্যাংক ভরছিল পেট্রোল দিয়ে। এই পেট্রোল হল মাঠের সমর্থকদের উত্তেজনা, তাদের আবেগ। আমরা সব সময় অ্যানফিল্ডের সমর্থকদের শক্তি নিয়ে কথা বলি, আজ আমরা ওয়ান্দা মেত্রোপলিতানোর সমর্থকদের শক্তি সম্পর্কেও জানলাম।’
লিভারপুলকে হারানোর জন্য তেমন ‘যুগান্তকারী’ তেমন কিছুই করেননি সিমিওনে। নিজের দলকে গত কয়েক বছর ধরে যেভাবে খেলিয়ে গেছেন, এ ম্যাচেও অ্যাটলেটিকো সেভাবেই খেলেছে। এগারো জন সৈনিক নেমেছিলেন ৪-৪-২ ছকে। মিডফিল্ডের দুজন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার (সল নিগেজ ও টমাস পার্টি) ও বাকি দুজন ওয়াইড মিডফিল্ডার হলেও আরও দুজন প্রথাগত সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারকেই ওয়াইড মিডফিল্ডার হিসেবে খেলিয়েছেন সিমিওনে (কোকে ও টমাস লেমার)। উদ্দেশ্য পরিষ্কার, উইং দিয়ে খেলার প্রয়োজন নেই, মাঠের মাঝখানটার দখল নাও। দ্বিতীয়ার্ধে এই চারজনের মধ্যে অপেক্ষাকৃত উইংয়ে খেলতে অভ্যস্ত লেমারের জায়গায় যখন আরেক ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার মার্কোস ইয়োরেন্তেকে নামান সিমিওনে, তাঁর উদ্দেশ্য আরও পরিষ্কার হয়ে যায়।
সিমিওনে নিজে খেলোয়াড় হিসেবে রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার ছিলেন, গত কয়েক বছর ধরে তাঁর প্রত্যেকটা খেলোয়াড়ের মধ্যে এই রক্ষণাত্মক মানসিকতাটাই ঢুকিয়ে দিয়েছেন। এই ম্যাচও তাঁর ব্যতিক্রম ছিল না। ৪-৪-২ ছকে প্রত্যেকটা খেলোয়াড় একই সঙ্গে মাঠের মধ্যে ওঠানামা করেছেন, একটা ‘প্যাক’ হিসেবে খেলেছেন। ফলে অনেক সময়েই দেখা গেছে মাঠে থাকা বিশজন খেলোয়াড়ের প্রত্যেকেই বল যেখানে আছে, সেখানে জমাট বেঁধে আছেন। অ্যাটলেটিকোর খেলোয়াড়েরা যেহেতু মাঝমাঠ দখল করে বসেছিলেন, সেহেতু মাঝমাঠের দখল নেওয়ার জন্য লিভারপুলের দুই ফুলব্যাক ট্রেন্ট অ্যালেক্সান্ডার-আরনল্ড ও অ্যান্ডি রবার্টসনও নিজেদের স্বভাবমত উইং দিয়ে দৌড় দিতে পারছিলেন না। তাদেরকেও অ্যাটলেটিকোর খেলোয়াড়দের আশেপাশেই থাকতে হচ্ছিল। উইং দিয়ে আক্রমণ করতে গেলে মিডফিল্ডে অ্যাটলেটিকোর চেয়ে লিভারপুলের সৈন্য কমে যেত যে! তখন প্রতি আক্রমণে গোল খেয়ে বসার একটা ভয় ছিল।
এই কৌশল অবলম্বন করে লিভারপুলের দুই ফুলব্যাককে আক্রমণের দিক দিয়ে নিষ্ক্রিয় রাখেন সিমিওনে। আর মাঝে মধ্যে সুযোগ পেলে প্রতি আক্রমণে উঠে লিভারপুলের গোল বরাবর শট নেওয়া, এভাবেই খেলেছে অ্যাটলেটিকো। ম্যাচের চার মিনিটেই কর্নার থেকে পাওয়া বল জটলায় পেয়ে গোল করে বসেন সল নিগেজ। সে গোল আর শোধ করা হয়ে ওঠেনি লিভারপুলের। বেশ কিছু দুর্দান্ত সুযোগ পেলেও গোল করতে ব্যর্থ হন মোহাম্মদ সালাহরা।
অপেক্ষা এখন দ্বিতীয় লেগের। সিমিওনে যেভাবে নিজেদের মাঠের ধক্তিকে কাজে লাগিয়ে এক লেগ জিতলেন, ক্লপ কী পারবেন অ্যানফিল্ডের জাদু আরেক বার করে দেখাতে? সেটাই দেখার অপেক্ষা।