৯৫ মিনিটের আত্মঘাতী গোলে ইরানের শুভসূচনা

নিজের জালে বল জড়াচ্ছেন বুহাদ্দুজ। ছবি: রয়টার্স
নিজের জালে বল জড়াচ্ছেন বুহাদ্দুজ। ছবি: রয়টার্স

এমন গোল দিয়ে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও খুশি হতেন। দারুণ ডাইভ, দুরূহ কোণ থেকে এক হেডে গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে গোল আজিজ বুহাদ্দুজের। বদলি নামা এক ফরোয়ার্ডের কাছ থেকে এমন কিছুই আশা করেন কোচ। ঝামেলা হলো, গোলটা নিজেদের জালে দিয়েছেন এই মরোক্কান। ৯৫ মিনিটের এই আত্মঘাতী গোলে ইরানের কাছে হেরে গেল মরক্কো। বিশ্বকাপ ইতিহাসে নিজেদের দ্বিতীয় জয় পেল ইরান।

আত্মঘাতী নয়, ইরান নিজেরাই গোল করতে পারত প্রথমার্ধে। ৪৩ মিনিটে গোলরক্ষককে একা পেয়ে গিয়েছিলেন সরদার আজমুন। সে শট অসাধারণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দিয়েছেন মুনির মোহামেদি। ফিরতি বল পেয়েছিলেন আলিরেজা জাহানবখশ। শটটাও ভালো নিয়েছিলেন জাহানবখশ। কিন্তু সে বলেরও দিক পরিবর্তন করে দিলেন মোহামেদি। এগিয়ে যাওয়ার এত দুর্দান্ত সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করা ইরান দল কোনোভাবেই ব্যাপারটা বিশ্বাস করতে পারছিল না।

এর আগেই অবশ্য গোল হাতছাড়া করার হাস্যকর এক প্রদর্শনী দেখিয়েছে মরক্কো। ডি-বক্সে উড়ে আসা বলে প্রথমে একজন শট নিলেন। সেটা ফিরে এলে শট নিয়েছেন আরেক মরোক্কান খেলোয়াড়। ওতেও কিছু হলো না। এরপর আরও দুবার শট নিয়েও বল জালে পাঠাতে পারল না দলটি। শেষ পর্যন্ত কর্নারেই সন্তুষ্ট হতে হয়েছে তাদের। কর্নার থেকে গোল করার ক্ষমতা যে এ দলের নেই, সেটা তো পুরো ম্যাচেই দেখা গেছে!

গোল করায় ব্যর্থতায় অবশ্য ইরানও কম যায়নি। দারুণ ফুটবল খেলেছে, এটা বলা হয়তো বাড়াবাড়ি হবে। বরং এ ম্যাচ দেখার পর সেন্ট পিটার্সবার্গের মাঠের ঘাস নিয়ে গবেষণা হবে। নির্ঘাত অনেক আরামদায়ক এ ঘাস! না হলে দুই দলেরই খেলোয়াড়ই সুযোগ পেলেই টার্ফে গড়িয়ে নিচ্ছিলেন কেন? দুই-একটি গোছানো পাসের পরই দেখা যাচ্ছিল অনাহূত কোনো ট্যাকল প্রতিপক্ষের। ব্যস, মাঠে পড়ে যাও আর তিন-চার গড়ান দিয়ে নাটকীয় পরিস্থিতির জন্ম দাও! ৯৬ মিনিটের ম্যাচে ৩৬টি ফাউল! সে তুলনায় মাত্র ৪টি হলুদ কার্ড একটু কমই দেখাচ্ছে। কারণ, মাটিতে গড়াগড়ি বেশি হলেও ফাউলগুলো ঠিক রেফারির পকেটে হাত দেওয়ার মতো ছিল না।

মাটিতে গড়াগড়ি দেওয়ার মাঝেও দুই দলই আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ করেছে। দুই অর্ধেই বল দখলে এগিয়ে ছিল মরক্কো, শট নেওয়াতেও তারা। দ্বিতীয়ার্ধে খেলার নিয়ন্ত্রণও ছিল মরক্কোর কাছে। ৯৫ মিনিটে আত্মঘাতী গোল খাওয়ার আগে দ্বিতীয়ার্ধে মরক্কোর গোলে কোনো শট নিতে পারেনি ইরান। কিন্তু এত এত আক্রমণ করেও লাভ হয়নি, কাজের কাজ অর্থাৎ গোল করাতে পারদর্শিতা দেখাতে পারেনি আফ্রিকান দলটি।

গোল পাওয়া যে সম্ভাবনা হয়েছিল সেটাও অবিশ্বাস্য দক্ষতায় থামিয়ে দিয়েছেন আলিরেজা বেইরানভান্দ। ৮০ মিনিটে ম্যাচের সেরা সেভ দেখিয়েছেন বেইরানভান্দ। এলোমেলো খেলার মাঝে হঠাৎ একটি গোছানো আক্রমণ মরক্কোর। আশরাফ হাকিমি থেকে বক্সে বল পেলেন ইউনেস বেলহানদা। মাথা ব্যবহার করে বলটা নামিয়ে দিলেন হাকিম জিয়েশের জন্য। বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শট, বক্সের ডান দিকের নিচু সে শট দুর্দান্ত এক ডাইভে ঠেকিয়ে দিলেন বেইরানভান্দ। সেটাই শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জেতানো সেভে রূপ নিল।