ম্যাচের তখন ৩৬ মিনিট। উড়ে আসা এক বল দখল নেওয়ার জন্য ঝাঁপ দিলেন লিভারপুলের লেফট উইঙ্গার সাদিও মানে। তাঁকে মার্ক করতে থাকা আর্সেনালের জাপানি রাইটব্যাক তাকেহিরো তোমিয়াসুও বল দখলের জন্য ঝাঁপ দিলেন। দুজনের কেউই নাগাল পেলেন না, উল্টো পড়ে গেলেন দুজনই। মানে ফাউল করেছেন—এ দাবিতে সাইডলাইন থেকে সরব হলেন মিকেল আরতেতা। একটু বেশিই প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ফেলেছিলেন আর্সেনাল কোচ! তা দেখেই হয়তো লিভারপুলের কোচ আর তাঁর সহকারীও তেতে গেলেন!
ভাগ্য ভালো, বেশ কয়েকজন ম্যাচ কর্মকর্তা ছিলেন সে সময়। নয়তো কে জানে, ক্লপ-আরতেতার মধ্যে একচোট হাতাহাতিই হয়ে যেত হয়তো! পরে বোঝা গেল, ক্লপকে গালাগালও করেছেন আরতেতা।
কিন্তু আর্সেনালের জন্য সে ঘটনা বুঝি আরও বড় ধাক্কা হয়েই এল! সে ঘটনার আগে লিভারপুল-আর্সেনাল সমানে-সমান টক্কর দিলেও এর পরেই লিভারপুলের খেলোয়াড়েরা আরও উদ্বুদ্ধ হয়ে খেলা শুরু করেন, গমগমে অ্যানফিল্ডও গর্জে ওঠে। আর্সেনালের তরুণ দলটা আর তা সামলাতে পারেনি। নিজেদের মাঠে আর্সেনালকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে লিভারপুল। তবে ম্যাচ শেষে দুই কোচের কথা শুনে মনে হয়েছে, মাঠের ভেতরকার রাগারাগি মাঠেই ফেলে এসেছেন তাঁরা।
৩৯ মিনিটে ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার-আরনল্ডের ফ্রি কিকে মাথা ছুঁইয়ে লিভারপুলকে এগিয়ে দেন ওই মানেই। দ্বিতীয়ার্ধে দিওগো জোতা, মোহাম্মদ সালাহ ও তাকুমি মিনামিনোর গোল মিলিয়ে বড় জয় লিভারপুলের।
তবে ম্যাচের পর আর্সেনাল কোচ আরতেতা নিজেই স্বীকার করেছেন, মিটমাট হয়ে গিয়েছে দুজনের মধ্যে, ‘তিনি (ক্লপ) তাঁর দলের পক্ষ নিচ্ছিলেন, আমি আমার। এটাই। আর কিছু না। ম্যাচে এ রকম হয়েই থাকে। ব্যাপার না এসব। হ্যাঁ, আমি ম্যাচ শেষে ক্লপের সঙ্গে কথা বলেছি, তাঁকে অভিনন্দনও জানিয়েছি। এসব মুহূর্ত মাঠেই রেখে আসতে হয়।’
সে ঘটনার জন্য রেফারি মাইকেল অলিভার দুই কোচকেই হলুদ কার্ড দেখিয়েছেন। ক্লপ স্বীকার করেছেন, সাইডলাইনে যা হয়েছে, তার জন্য হলুদ কার্ড প্রাপ্য ছিল তাঁর।
‘সাদিও কোনো ফাউল করেনি, কিন্তু যেভাবে ওদের বেঞ্চ এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানাল, মনে হলো যেন মানে লাল কার্ড পাওয়ার মতো কিছু একটা করে ফেলেছে। আমি ওদের জিজ্ঞাসা করলাম, এ রকম পরিস্থিতিতে কী চান আপনারা? এমন পরিস্থিতি আতলেতিকোর বিপক্ষেও হয়েছিল। তারা চাইছিল, সাদিও যেন একটা হলুদ কার্ড দেখে। এমন মনোভাব একেবারেই ঠিক নয়। তবে যা হয়েছে, সেটার জন্য আমার হলুদ কার্ড প্রাপ্য। মুহূর্তের উত্তেজনায় অমনটা হয়ে গেছে। আরতেতার প্রতিক্রিয়াও ভালো ছিল না, তাই আমিও প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছি’ - বলেছেন ক্লপ।
তবে দুই কোচের মধ্যে যা-ই হোক না কেন, অ্যানফিল্ডে এসে আর্সেনাল নিজেদের ভাগ্য বদল করতে পারেনি। লিগে নিজেদের মাঠে আর্সেনালের বিপক্ষে সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচের প্রতিটিতেই অন্তত তিনটি গোল করেছে লিভারপুল। কালকের আগে সব টুর্নামেন্ট মিলিয়ে টানা ১০ ম্যাচে অপরাজিত ছিল আর্সেনাল, সে আত্মবিশ্বাসও খেয়েছে ধাক্কা।
এর আগে নিজেদের মাঠে আর্সেনালের বিপক্ষে লিগে টানা সাত ম্যাচ জয়ের রেকর্ড ছিল লিভারপুলের, ১৯৮১ থেকে ১৯৮৮ সালের মধ্যে। ক্লপের লিভারপুল নিজেদের মাঠে যেভাবে খেলে আর্সেনালের বিপক্ষে, সে রেকর্ডও অক্ষুণ্ন থাকবে বলে মনে হচ্ছে না।
প্রিমিয়ার লিগে আর্সেনালের বিপক্ষে এ নিয়ে ১০১ গোল করা হয়ে গেল লিভারপুলের। লিগে শুধু নিউক্যাসলের বিপক্ষেই এর চেয়ে বেশি গোল করেছে দলটা (১০৫)।
এই জয়ে পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় স্থানে চলে এল লিভারপুল। ১২ ম্যাচ পর ২৯ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকা চেলসির চেয়ে ৪ পয়েন্ট পিছিয়ে আছে ক্লপের দল।
তবে তিনে থাকা ম্যানচেস্টার সিটি (১১ ম্যাচে ২৩ পয়েন্ট) আজ নিজেদের মাঠে এভারটনকে হারালে লিভারপুলকে টপকে দুই নম্বরে উঠে যাবে। আর্সেনাল ১২ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে আছে পয়েন্ট তালিকার পাঁচ নম্বরে।