২০১৪ বিশ্বকাপ জয়ের খুব কাছে চলে গিয়েছিলেন লিওনেল মেসি।
২০১৪ বিশ্বকাপ জয়ের খুব কাছে চলে গিয়েছিলেন লিওনেল মেসি।

বিশ্বকাপজয়ী জার্মান অধিনায়কের স্বীকারোক্তি

২০১৪ বিশ্বকাপ আর্জেন্টিনারই জেতা উচিত ছিল

ম্যারাডোনা-উত্তর যুগে আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় আক্ষেপ হয়ে আছে ২০১৪ বিশ্বকাপ। লিওনেল মেসির অধীনে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিতবে, ক্যারিয়ারের একমাত্র ও সবচেয়ে বড় গ্লানি থেকে মুক্তি পাবেন মেসি—কত কথাই না হয়েছিল সেবার। সবার প্রত্যাশা ছাপিয়ে আর্জেন্টিনা ফাইনালেও উঠে গিয়েছিল। আর এক ধাপ অতিক্রম করতে পারলেই দেখা মিলত সেই সুদৃশ্য ট্রফিটার।

কিন্তু না, জার্মান মেশিনের কাছে সেদিন মুখ থুবড়ে পড়েছিল উজ্জীবিত আর্জেন্টিনা। মেসি, হিগুয়েইন, লাভেজ্জিরা সেদিন আর্জেন্টিনাকে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বসেরা করতে পারেননি। এরপর কেটে গেছে আট বছর। পরের বিশ্বকাপটা জেতা তো দূর, ফাইনালেই উঠতে পারেনি আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয় রাউন্ডেই বিদায় নিয়েছে ফ্রান্সের কাছে। কিন্তু ২০১৮ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নেওয়ার চেয়ে ২০১৪ সালের ফাইনালে হারটাই এখনও হয়তো বেশি পোড়ায় মেসিদের। সুযোগ পেলে হয়তো টাইম মেশিনে চড়ে জার্মানির বিপক্ষে সে ম্যাচটা আবারও খেলতে চাইবেন মেসিরা। কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব নয়!

২০১৪ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয় জার্মানি।

তবে দীর্ঘ আট বছর পর সে ফাইনাল নিয়ে প্রতিপক্ষ শিবিরের এক কিংবদন্তির মুখ থেকে মেসিরা যা শুনলেন, তাতে বিশ্বকাপ জেতার আনন্দ না পাওয়া হোক, অন্তত একটু হলেও প্রশান্তি পাবেন।

জার্মানির কিংবদন্তি মিডফিল্ডার, ১৯৯০ সালে জার্মানিকে বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়ক, বায়ার্ন মিউনিখ ও ইন্টার মিলানের সাবেক তারকা লোথার ম্যাথাউস জানিয়েছেন, সে বিশ্বকাপটা আর্জেন্টিনারই জেতা উচিৎ ছিল। তাঁর নিজের দেশ ভাগ্যবান ছিল বলেই সে বিশ্বকাপটা জিতেছে। ভাগ্য আর্জেন্টিনাকে সায় দিলে জার্মানি হয়, বিশ্বজয়ের হাসি হাসতেন মেসিরাই।

জার্মানিকে ১৯৯০ বিশ্বকাপ জিতিয়েছিলেন লোথার ম্যাথাউস

ইনফোবে আমেরিকার ক্রীড়া সাংবাদিক রদ্রিগো দুবেনকে দোহায় এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন এই কিংবদন্তি। সেখানেই ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনাল নিয়ে নিজের অনুভূতির কথা জানিয়েছেন ম্যাথাউস। সে ম্যাচের ৫৭ মিনিটে বাতাসে ভেসে নিজেদের ডি-বক্সে আসা বলকে পাঞ্চ করে দলকে বিপৎমুক্ত করতে গিয়ে আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার গঞ্জালো হিগুয়েইনকে হাঁটু দিয়ে ধাক্কা দিয়েছিলেন জার্মান গোলকিপার মানুয়েল নয়্যার।

পড়ে গিয়েছিলেন হিগুয়েইন, পেনাল্টির আবেদনে সরব হয়েছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু সে ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ইতালির রেফারি নিকোলা রিজ্জোলি মেসিদের সে আবেদনে সাড়া দেননি, পেনাল্টি পায়নি আর্জেন্টিনা।

এই ফাউলের কারণেই পেনাল্টি পাওয়া উচিৎ ছিল আর্জেন্টিনার, মনে করেন ম্যাথাউস

ম্যাথাউসের মতে, নয়্যার ফাউল করেছিলেন হিগুয়েইনকে, এবং সে ফাউলের জন্য পেনাল্টি প্রাপ্য ছিল আর্জেন্টিনার, 'ফাইনালে আর্জেন্টিনার জেতা উচিৎ ছিল। মানুয়েল নয়্যারের সে ফাউলে পেনাল্টি দেওয়া উচিৎ ছিল রেফারির। কিন্তু আমরা ভাগ্যবান ছিলাম (যে রেফারি পেনাল্টি দেয়নি)। খুব বড় এক অপরাধ হয়েছিল সেদিন আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। অবশ্যই, নয়্যারের কারণে সেদিন পেনাল্টি হজম করতে হতো আমাদের।'

রেফারি রিজ্জোলি আর্জেন্টিনাকে যদি পেনাল্টি দিতেন, আর মেসি কোনোভাবে যদি সে পেনাল্টি জালে জড়াতে পারতেন, তাহলে হয়তো নব্বই মিনিটের মধ্যেই ম্যাচ জিতে যেত আর্জেন্টিনা। অতিরিক্ত সময়ের ৩০ মিনিট আর খেলতে হতো না। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধেই বায়ার্ন মিডফিল্ডার মারিও গতসার গোলে ম্যাচ জিতে নেয় জার্মানি। আর আর্জেন্টিনার সঙ্গী হয় অন্তহীন আক্ষেপ।

ম্যাথাউসের কথায় সে আক্ষেপ খানিক কমবে কি না, কে জানে!