২০০৩ সাফের ফাইনালে রোকনুজ্জামান কাঞ্চনের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ
২০০৩ সাফের ফাইনালে রোকনুজ্জামান কাঞ্চনের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ

২০০৩ সালে সাফের ফাইনালে খেলা ‘ওরা ১১ জন’ কে কোথায়

বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্জন সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়। অস্ট্রিয়ান কোচ জর্জ কোটানের অধীনে প্রথম ও শেষ বারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল শ্রেষ্ঠত্ব বাংলাদেশ নিজেদের করে নিয়েছিল ২০০৩ সালে। ফাইনাল নির্ধারিত সময় ১-১ গোলে অমীমাংসিত থাকলেও মালদ্বীপকে টাইব্রেকারে ৫-৩ ব্যবধানে হারিয়ে জানুয়ারির সেই শীতল সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের দর্শকদের আনন্দে ভাসিয়েছিল হাসান আল মামুন-আমিনুল-সুজন-আলফাজরা।

১৮ বছর আগে সেই সাফের ফাইনালের বাংলাদেশ নেমেছিল দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়, অধিনায়ক রজনী কান্ত বর্মণকে ছাড়াই। দুই হলুদ কার্ডের খড়্গে ফাইনালে তিনি ছিলেন নিষিদ্ধ। গোটা টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দলের রক্ষণ বুক পেতে সামলেছিলেন রজনী। ফাইনালে তাই তাঁকে না পাওয়াটা ছিল বড় ধাক্কাই। মালদ্বীপের বিপক্ষে ফাইনাল শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ আগে হোটেলে অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড রাইট ব্যাক হাসান আল মামুনের হাতে তুলে দিয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন রজনী। বলেছিলেন, ‘বন্ধু আমি তো পারলাম না, দেশের ভারটা তোর হাতে তুলে দিলাম।’

২০০৩ সালে প্রতি ম্যাচেই ছিল বাংলাদেশ দাপট

রজনীর কান্না দেখে সেদিন সতীর্থদের চোখেও ছিল জল। ফাইনালের কিছুক্ষণ আগে এমন কিছু দলের আত্মবিশ্বাসে চিড় না ধরিয়ে বরং সেটি পরিণত হলো শক্তিতে। সেই কান্নার ভেতরেই যে লুকিয়ে ছিল শপথ। সবার ছিল চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা—জিততেই হবে। সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েই ২০০৩ সালের সাফে এসেছিল শিরোপা। এখনো পর্যন্ত সাফে বাংলাদেশের একমাত্র শিরোপা।

সেদিন ফাইনালে ৫-৩-২ ফরমেশনে দলকে খেলিয়েছিলেন জর্জ কোটান। গোলবারে আমিনুল হকের সামনে তিন সেন্টারব্যাক মোহাম্মদ সুজন, নজরুল ইসলাম ও হাসান আল মামুন। রাইট উইং ব্যাক হিসেবে ফিরোজ মাহমুদ হোসেন টিটু ও লেফট উইং ব্যাক মোস্তফা আনোয়ার পারভেজ। মিডফিল্ডে আরিফ খান জয়, মতিউর মুন্না ও আরমান মিয়া। আক্রমণে আলফাজ আহমেদ ও রোকনুজ্জামান কাঞ্চন জুটি।

মতিউর মুন্নার গোল্ডেন গোলেই সেমিতে ভারতকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ

আজ থেকে মালদ্বীপে শুরু হচ্ছে আরও একটি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের আসর। ১৮ বছর ধরে বাংলাদেশ দেখে না শিরোপার মুখ। ১৩ বছর ধরে (শেষ চারটি আসর) বাংলাদেশ পেরোতে পারেনি গ্রুপ পর্বের বাধাই। ফুটবলে সাফল্যহীন সময়ে দাঁড়িয়ে অতীতের স্মৃতি রোমন্থনই ভরসা। প্রিয় পাঠক, ১৮ বছর আগে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে বাংলাদেশ দলের ১১ জন তারকা আজ কেমন আছেন, কোথায় আছেন, কী করছেন, সেটি এক ঝলকে দেখে নিই চলুন...

বাংলাদেশর মধ্যমাঠের শক্তি ছিলেন আরিখ খান জয়

আমিনুল হক

বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা গোলকিপার বলা হয় তাঁকে। ২০০৩ সাফে পুরো টুর্নামেন্টে মাত্র ২ গোল খেয়েছিলেন তিনি। এই তারকা গোলকিপার বর্তমানে রাজনীতিতে ব্যস্ত। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় দায়িত্বে আছেন।বর্তমানে তিনি দলটির ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব।

নজরুল ইসলাম

বুট জোড়া তুলে রাখলেও ফুটবলের সঙ্গেই আছেন এই ডিফেন্ডার। ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময় আবাহনী লিমিটেডে খেলা এই সেন্টারব্যাক বর্তমানে আবাহনীর সহকারী কোচ। ফুটবল ছাড়াও নিজ জেলা নারায়ণগঞ্জে গার্মেন্টস ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে আছেন তিনি।

হাসান আল মামুন

নিয়মিত অধিনায়ক রজনী কান্ত বর্মণের অনুপস্থিতিতে ফাইনালে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এই ডিফেন্ডার। ২০১৬ সালে খেলা থেকে অবসর নেওয়ার পর কোচিংয়ে এসেছেন। চট্টগ্রাম আবাহনীর সহকারী কোচ দিয়ে কোচিং ক্যারিয়ার শুরুর পর বর্তমানে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করছেন।

২০০৩ সাফ ফাইনালের সেই ১১ জন

মোহাম্মদ সুজন

১-১ গোলে ড্র ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়ালে শেষ শটে বল জালে জড়িয়ে বাংলাদেশকে জিতিয়েছিলেন দীর্ঘদেহী এই ডিফেন্ডার। ফুটবল থেকে কিছুটা দূরেই তিনি। নিজ জেলা নারায়ণগঞ্জে তাঁর একটি মার্কেট আছে। দোকান দেখার পাশাপাশি নিজেও ব্যবসা করছেন।

আরমান মিয়া ২০০৩ সালের সাফে ছিলেন দুর্দান্ত

ফিরোজ মাহমুদ হোসেন টিটু

২০১২ সালে ফুটবল থেকে অবসর নিয়েছেন দুর্দান্ত গতির এই রাইটব্যাক। বর্তমানে প্রাইম ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টির সাধারণ সম্পাদকের (সেক্রেটারি জেনারেল) দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া রাজনীতির সঙ্গেও জড়িয়ে তিনি। এ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া উপ কমিটির সদস্য তিনি। ফুটবলের সঙ্গেও আছে সম্পৃক্ততা। বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের দল উত্তরা ক্লাবের সহসভাপতির সঙ্গে ম্যানেজারের দায়িত্বও পালন করছেন।

মোস্তফা আনোয়ার পারভেজ

আনোয়ার পারভেজ নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন কোচিংয়ে। খেলোয়াড় হিসেবে তাঁর যেমন সাফ-সাফল্য আছে, ঠিক তেমনি কোচ হিসেবেও তিনি বাংলাদেশকে জিতিয়েছেন অনূর্ধ্ব-১৫ সাফের শিরোপা। ২০১৮ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবল জিতেছিল বাংলাদেশ।

সাফজয়ী একমাত্র খেলোয়াড় ও কোচ বলা যায় এই লেফট উইং ব্যাককে। বেশ কয়েক বছর ধরেই বাফুফের কোচিং প্যানেলে আছেন তিনি। গত বছর তাঁকে হেড অফ এলিট ইয়ুথ পদে নিয়োগ দিয়েছে বাফুফে।

আরিফ খান জয়

খেলা ছেড়ে পুরো দস্তুর রাজনীতিক এখন তিনি। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। শেষ নির্বাচনে দলে মনোনায়ন পাননি। তিনি এখন নেত্রকোনা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

আরমান মিয়া

মতিঝিল সোনালি অতীত ক্লাবে প্রতিদিন বিকেলে নিয়মিত খেলতে দেখা যায় ২০০৩ সাফের টুর্নামেন্ট সেরা মিডফিল্ডারকে। তবে কোনো দায়িত্ব নিয়ে ফুটবলের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই তাঁর। ঢাকার মোহাম্মদপুরে বসবাসের সঙ্গে করছেন রিয়েল এস্টেট ব্যবসা।

মতিউর রহমান মুন্না

ফুটবল ও ফুটবলীয় বলয় থেকে নিজেকে গুটিয়েই নিয়েছেন মতিউর মুন্না। ২০০৩ সাফে তাঁর গোলেই সেমিতে ভারতকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। যে কোনো কারণে তিনি নিজেকে একটু আড়াল করেই রেখেছেন।

আলফাজ আহমেদ

২০০৮ সালে জাতীয় দল থেকে অবসর নেওয়ার পর ২০১৩ সাল পর্যন্ত ঘরোয়া ফুটবলে খেলেছেন দেশের ইতিহাসের অন্যতম এই সেরা স্ট্রাইকার। পরবর্তীতে হয়েছেন কোচ। বর্তমানে মোহামেডান স্পোর্টিং লিমিটেডের সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে ছিলেন উত্তর বারিধারা ক্লাবের প্রধান কোচ।

রোকনুজ্জমান কাঞ্চন

টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ গোল করেছিলেন। ২০১৮ সাল পর্যন্ত ঘরোয়া ফুটবল খেলা কাঞ্চন বর্তমানে বিজেএমইএ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক। এ ছাড়া বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের দল উত্তরা ক্লাবের কোচ।