রোববার সোচি থেকে রোস্তভ অন দোনে এসে পৌঁছেছে ব্রাজিল দল। সঙ্গে সঙ্গে তাদের সমর্থক গোষ্ঠী। রোস্তভ অন দোন এখন হলুদ সর্ষে খেতের নগরী। লালের মধ্যে সাদা ক্রসের সুইস পতাকাও দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সেটি বিন্দুর মতো। দোন নদীর তীরে ছবির মতো সুন্দর স্টেডিয়ামে ব্রাজিল যে সমর্থনের প্রবল দাপট নিয়ে বিশ্বকাপ অভিযাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে, সেটি না বললেও চলছে।
সুন্দর শহরটিকে দুভাগ করে বয়ে চলেছে দোন। নদীটি মনে করিয়ে দেয় বাংলাদেশের আশুগঞ্জ-ভৈরবের মেঘনার কথা। সেতু পেরিয়ে এপারে আসতে চোখে পড়বে অসংখ্য স্পিডবোট, নৌকা। বন্দরের কোলাহল। হঠাৎ মনে হতে পারে, এই নদীতে নৌকায় ভাসতে ভাসতে নিশ্চয়ই সাহিত্য সৃষ্টির রসদ পেয়েছেন আন্তন চেখভ। বিশ্বসাহিত্যের অমর ছোটগল্পকার ও নাট্যকার চেখভের জন্ম এখানেই। নদীর ডান পারে রয়েছে তাঁর ভাস্কর্য। উত্তর ককেশাস পর্বতমালাবেষ্টিত বৃহত্তর রোস্তভ আলেক্সান্ডার পুশকিন, নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক আলেক্সান্ডার সোলঝেনিৎসিনেরও স্মৃতিধন্য। শহরটির চারদিকে ইতিহাসের রেণু ছড়ানো।
বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস ও ডেনমার্কের মিলিত আয়তনের সমান এই রোস্তভ অঞ্চল। নদীর ওপরের সেতুতে উঠলে রোমাঞ্চ লাগবে, যখন জানবেন সেতুটাই এশিয়া ও ইউরোপ মহাদেশের সীমান্ত। বাঁ দিকের এশিয়ায় পড়েছে স্টেডিয়াম। ডান দিকটা ইউরোপের অন্তর্গত। অর্থাৎ ২০১৮ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচটি নেইমাররা খেলছেন এশিয়ায়।
ফেবারিট সব দলই রাশিয়া বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম পৃষ্ঠা উল্টে ফেলেছে। সেই পৃষ্ঠাগুলোর কোথাও উজ্জ্বলতা, কোথাও সামান্য ধূসরতা। সবচেয়ে ঔজ্জ্বল্য ছড়িয়ে ড্র করেছে জোড়া ফেবারিট স্পেন ও পর্তুগাল। ওই ম্যাচেই হ্যাটট্রিক করে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো তাঁর নামটি তুলে দিয়েছেন বিশ্বকাপ জনতার মুখে মুখে। সোচিতে রোনালদো-আলো ফোটার পরদিন স্পার্তাক মস্কোয় মেসির নিষ্প্রভতায় আর্জেন্টিনা ড্র করেছে আইসল্যান্ডের সঙ্গে।
এই প্রতিবেদন লেখার সময় আরেক ফেবারিট জার্মানি মস্কোর লুঝনিকিতে সংগ্রাম করছে মেক্সিকোর সঙ্গে। রোস্তভের প্রেসবক্সের বড় টেলিভিশনের পর্দায় সব সাংবাদিকের চোখ। সংশয়াচ্ছন্ন অনেকের মন। ব্রাজিলকেও আজ ঝাঁকুনি দেবে না তো সুইজারল্যান্ড?
সুইজারল্যান্ড খুব বড় কোনো নাম নয়। তবে তাদের লড়াই প্রতিপক্ষের সমীহ কুড়োয় সব সময়ই। গত ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপজয়ী স্পেনকে প্রথম ম্যাচে হারিয়ে দিয়েছিল সুইজারল্যান্ড। ব্রাজিলিয়ান বিশাল সাংবাদিক বহরেও ভয় কিংবা আশঙ্কার একটা চোরা স্রোত বইয়ে দিচ্ছে সুইসরা। তবে কয়েকজন সাংবাদিক একমত হলেন, গ্রুপে ব্রাজিলের এই একটাই ফাঁড়া।
ব্রাজিল সমর্থক ফেরেইরা ও কার্লোস বড় একটা সাম্বা গ্রুপ নিয়ে এসেছেন রাশিয়ায়। দোন সেতুর এপারে এসে দলটি রীতিমতো জমিয়ে দিল সাম্বা বাসা নোভার সুর তুলে। যাওয়ার পথে যে কেউ দাঁড়িয়ে পড়ছে দলটির সুর শুনে। সেলফি তুলছে। সাম্বার সুরে নাচছে। একলা পথিক হয়ে পতাকা জড়িয়ে যাচ্ছিলেন সুইস সমর্থক জোনাথন। পাকড়াও হয়ে গেলেন সাম্বা দলটির কাছে। ফেরেইরা জোরে চিৎকার করেন, ব্রাজিল। জোনাথন তাঁর পতাকার দিকে আঙুল তুলে নরম গলায় বলেন, সুইজারল্যান্ড।
আর কিছুক্ষণের ব্যবধানেই জানা যাবে রোস্তভ জয় দিয়ে শুরু হলো কি না নেইমারদের। তবে এখানে জড়ো হওয়া হলুদ সর্ষে খেত (ব্রাজিল সমর্থকেরা) আশায় দুলছে, নেইমার-জাদুতে প্রথম ম্যাচেই জিতবে বড় ব্যবধানে। শেষ দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে যেভাবে ক্রোয়েশিয়া ও অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে চার মাসের চোট আঘাতের চিহ্ন ধুয়েমুছে ফেলে জ্বলে উঠেছেন, তেমনই আলো ছড়াবেন নেইমার। হেলিকপ্টারের মতো উড়ে চলবে ব্রাজিল। স্মরণ করিয়ে দেওয়া যাক, রোস্তভ অন দোন শহরে তৈরি হয় হেলিকপ্টার।