দানে দানে পাঁচ দান! চারটি ফাইনালে কেঁদে বাড়ি ফিরেছেন, একবার তো হারের পর আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসরই নিয়ে ফেলেছিলেন। সেখান থেকে আবার আর্জেন্টিনার জার্সিতে ফিরে এসেছেন লিওনেল মেসি, ফিরেছেন শিরোপা মঞ্চেও। বার্সেলোনার হয়ে পরিচিত মঞ্চটায় এবার তাঁর ওঠা আর্জেন্টিনার জার্সিতে। ব্রাজিলের মাটিতে ব্রাজিলকেই হারিয়ে আজ আর্জেন্টিনাকে এনে দিলেন কোপা আমেরিকার শিরোপা—আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ২৮ বছরে দেশটির প্রথম।
এমন দিনে মেসির উচ্ছ্বাস বাধাহীন হওয়াই স্বাভাবিক। হচ্ছেও। তবে এর মধ্যেও অতীত ভুলে যাননি আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। এমন দিনে গঞ্জালো হিগুয়াইন, হাভিয়ের মাচেরানো, সের্হিও রোমেরোদের কথাও মনে পড়ছে তাঁর।
২০১৮ বিশ্বকাপের পর ঘটে যাওয়া পালাবদলে আর্জেন্টিনা এখনো লো সেলসো, দি পল, লওতারো মার্তিনেজদের নিয়ে গড়া, যে দলের প্রাণ হয়ে আছেন মেসি। সেই দলকে নিয়ে নিজের আর আর্জেন্টিনার আক্ষেপ ঘোচানো শিরোপা এনে দিয়েছেন ঠিকই, তবে এমন দিনে মেসি ভুলে যাচ্ছেন না হিগুয়াইন, মাচেরানোদের নিয়ে গড়া আগের আর্জেন্টিনাকেও। যে আর্জেন্টিনা তারকায় ঠাসা ছিল, কিন্তু সে আর্জেন্টিনা শুধু হারের কষ্টই সয়েছে।
আনহেল দি মারিয়া, সের্হিও আগুয়েরোরা এখনো দলের সঙ্গে আছেন, তবে দলে তাঁদের জায়গা এখন আর আগের মতো নিশ্চিত নয়। তবু আর্জেন্টিনার জার্সিতে শিরোপা জেতার অভিজ্ঞতাটা তো হয়েছে তাঁদের। হিগুয়াইন-মাচেরানোর মতো তারকাদের যে কপাল হয়নি। ২০১৪ বিশ্বকাপের পর ২০১৫ ও ২০১৬ কোপা আমেরিকা টানা তিন বছরে আর্জেন্টিনার তারকা ফরোয়ার্ডে ঠাসা সেই দল ফাইনালে উঠেও হেরে গিয়েছিল।
মেসির কষ্টটা অবশ্য আরেকটু বেশি। এই তিন ফাইনালের আগে ২০০৭ কোপা আমেরিকায়ও রানার্সআপ হওয়ার বেদনা জুটেছিল তাঁর। কষ্টটা এত পরিচিত বলেই হয়তো তাঁর পুরোনো সঙ্গীদের এখন কেমন লাগতে পারে তা অনুধাবন করতে পারছেন মেসি। স্বপ্ন তো সবারই একই ছিল!
সে কারণে কোপা আমেরিকার ফাইনাল শেষে আজ সংবাদ সম্মেলনে উঠে মেসির মনে উঁকি দিয়ে গেল পুরোনো সতীর্থদের কথা, ‘ফিদেওকে (দি মারিয়া) বলছিলাম যে আজকের ফাইনালটা ওর প্রতিশোধ নেওয়ার ফাইনাল হবে, তা-ই হয়েছে। এই ট্রফিটা আমি আগের সব সতীর্থদের সঙ্গেও ভাগাভাগি করতে চাই, যারা শিরোপার খুব কাছে গিয়েছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত জেতা হয়নি। এই ট্রফিটা ওদের জন্যও।’
অনেক কষ্টের শেষে আসা শিরোপাটার আনন্দ মেসি হয়তো ভাষায় ব্যাখ্যা করার মতো অবস্থায় নেই। তবু সংবাদ সম্মেলনে যখন প্রশ্ন হলো এ নিয়ে, আর্জেন্টিনা অধিনায়কের উত্তর, ‘পাগলাটে ব্যাপার! যে আনন্দটা হচ্ছে আমার, এটাকে ভাষায় বোঝানোর সামর্থ্য নেই। আগে অনেকবারই এমন মঞ্চ থেকে কষ্ট নিয়ে ফিরেছি, কিন্তু জানতাম কোনো না কোনো একসময় এমন কিছু হবে।’
পুরোনো সতীর্থদের পাশাপাশি তাঁর কষ্টের ভাগীদার তো মেসির পরিবারও ছিল। শিরোপা জয়ের মুহূর্তে সবার আগে তাদের কথাই মনে এসেছে মেসির, ‘ম্যাচ শেষ হওয়ার পর আমার পরিবারের কথা মনে পড়েছে। কতবার একসঙ্গে কষ্টে পুড়েছি আমরা। (ফাইনালে হারের পর টুর্নামেন্ট শেষে) ছুটিতে গেলে প্রথম কয়েক দিন হতাশাতেই কাটত আমাদের। এবার সবকিছু অন্য রকম হবে।’