এক সময় বিশ্ব কাঁপানো পুসকাস-ককসিসদের হাঙ্গেরি এখন আর ইউরোপ বা বিশ্ব ফুটবলের পরাশক্তি নয়। তার ওপর এবার গ্রুপ পর্বে হাঙ্গেরির জায়গাও হয়েছে মৃত্যুকূপে। পথ চলাটা আসলেই কঠিন হবে মার্কো রসির দলের।
দল: হাঙ্গেরি
ফিফা র্যাঙ্কিং
৩৭
যাঁরা আছেন দলে
গোলরক্ষক
পিটার গুলাকসি (আরবি লাইপজিগ), অ্যাডাম বোগদান (ফেরেনৎভারোস), দেনেস দিবুশ (ফেরেনৎভারোস)
সেন্টারব্যাক
উইলি অরবান (আরবি লাইপজিগ), অ্যাডাম ল্যাং (ওমোনিয়া), আকোস কেসকেস (লুগানো), আত্তিলা শালাই (ফেনেরবাচে)
রাইটব্যাক/রাইট উইংব্যাক
লোইক নেগো (ফেহেরভার), এন্দ্রে বোতকা (ফেরেনৎভারোস), গার্গো লভরেঙ্কসিস (ফেরেৎভারোস), আত্তিলা ফিওলা (ফেহেরভার), বেন্দেগুজ বোল্লা (ফেহেরভার)
লেফটব্যাক/লেফট উইংব্যাক
ফিলিপ হোলেন্দার (পার্টিজান বেলগ্রেড)
সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার/ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার
অ্যাডাম ন্যাগি (ব্রিস্টল সিটি), ডেভিড সিগার (ফেরেনৎভারোস), দানিয়েল গাজদাগ (ফিলাডেলফিয়া ইউনিয়ন)
অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার
লাজলো ক্লাইনহেইসলার (ওসিয়েক), আন্দ্রাস শায়েফের (দুনাশকা স্ত্রেদা)
উইঙ্গার/ওয়াইড মিডফিল্ডার
টামাস চেরি (মেজোকোয়েভেসদি), রোলান্ড সালাই (ফ্রাইবুর্গ), কেভিন ভারগা (কাসিমপাসা), রোলান্ড ভারগা (ইত্তিহাদ কালবা), সাবোলজ শোয়েন (এফসি ডালাস)
স্ট্রাইকার
অ্যাডাম শালাই (মেইঞ্জ), নেমানিয়া নিকোলিচ (ফেহেরভার), ইয়ানোস হান (পিএকেএস)
কোচ
মার্কো রসি
অধিনায়ক
অ্যাডাম শালাই
ইউরোতে সেরা সাফল্য
তৃতীয় স্থান (১৯৬৪)
গ্রুপে প্রতিপক্ষ
পর্তুগাল (১৫ জুন)
ফ্রান্স (১৯ জুন)
জার্মানি (২৩ জুন)
শক্তি
গ্রুপপর্বের তিন ম্যাচের দুটি হাঙ্গেরি খেলবে নিজেদের মাটিতে, এটা ওদের জন্য একটা ভালো দিক। দুই লাইপজিগ তারকা পিটার গুলাকসি ও উইলি অরবানের উপস্থিতির কারণে রক্ষণভাগ হাঙ্গেরির অন্যতম শক্তির জায়গা। প্রায় অর্ধযুগ ধরে লাইপজিগের গোলবার সামলানো গুলাকসির ওপর রসির অনেক আস্থা। শুধু শট আটকানোই নয়, ‘সুইপার কিপার’ হিসেবে নিচ থেকে আক্রমণ রচনা করার কাজটাও ভালোই পারেন গুলাকসির। লাইপজিগ ডিফেন্ডার উইলি অরবান তো ইউলিয়ান নাগলসমান, রালফ রাংনিক, রালফ হাসেনহাটলের মতো কোচের অধীনে দুই শতাধিক ম্যাচ খেলেছেন। তাঁর অভিজ্ঞতা ও সামর্থ্য কাজে লাগাতে চাইবে হাঙ্গেরি।
দুর্বলতা
দমিনিক জবোস্লাইয়ের মতো তারকার অনুপস্থিতি হাঙ্গেরির শক্তি বেশ কমিয়ে দিয়েছে। বাছাইপর্বে আইসল্যান্ডের বিপক্ষে হাঙ্গেরির জয়ের নায়ক ছিলেন জবোস্লাই। অনেকের মতে, পুসকাস-ককসিস পরবর্তী যুগে হাঙ্গেরির সবচেয়ে বড় প্রতিভা জবোস্লাই, গত জানুয়ারিতেই যিনি নাম লিখিয়েছেন লাইপজিগে। স্ট্রাইকারদের গোলহীনতাও হাঙ্গেরির চিন্তার কারণ।
সম্ভাব্য একাদশ ও খেলার কৌশল (৩-৫-২)
সভেন গোরান এরিকসন ও মিরসেয়া লুসেচকুর মতো কোচের অধীনে খেলেছেন খেলোয়াড়ি জীবনে। নিজের দেশ হাঙ্গেরি ছাড়াও কোচিং করিয়েছেন ইতালি ও স্লোভাকিয়ার বিভিন্ন ক্লাবে। হাঙ্গেরির বুদাপেস্ট হনভেদের হয়ে লিগও জিতেছেন। মার্কো রসির এই বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা তাঁকে কোচ হিসেবে পোক্ত করেছে। হাঙ্গেরিকে বেশ কিছু কৌশলে খেলিয়ে অবশেষে থিতু হয়েছেন ৩-৫-২ ছকে।
গোলকিপার গুলাকসির সামনে তিন সেন্টারব্যাকের মধ্যে লাইপজিগের উইলি অরবানের জায়গা নিশ্চিত। অরবানের ডানদিকে সেন্টারব্যাক হিসেবে খেলার জন্য লড়বেন ২০১৬ ইউরোতে রাইটব্যাক হিসেবে খেলা অ্যাডাম ল্যাং, রসির হয়ে বুদাপেস্ট হনভেদের হয়ে লিগ জেতা এন্দ্রে বোতকা ও ফেরেনৎভারোসের লিগজয়ী ডিফেন্ডার আত্তিলা ফিওলা। ফিওলা আবার ৩-৫-২ ছকে রাইট উইংব্যাক হিসেবেও খেলতে পারেন। কোচ মার্কো রসি যদি একটু রক্ষণাত্মক খেলাতে চান দলকে, রাইট উইংব্যাক হিসেবে রক্ষণ-সতর্ক ফিওলাকে খেলাবেন, যে জায়গায় এমনিতে অপেক্ষাকৃত আক্রমণাত্মক উইংব্যাক লোইক নেগো খেলে থাকেন। অরবানের বাঁ পাশের সেন্টারব্যাক হিসেবে আত্তিলা শালাইয়ের খেলার সম্ভাবনা বেশি। লেফট উইংব্যাক হিসেবে সার্বিয়ান ক্লাব পার্টিজান বেলগ্রেডের হয়ে লেফট উইঙ্গার হিসেবে খেলা ফিলিপ হোলেন্দারের জায়গা মোটামুটি পাকা।
চোটের কারণে দমিনিক জবোস্লাই ও জোল্ত কালমারের অনুপস্থিতি হাঙ্গেরির মাঝমাঠ একরকম এলোমেলো করে দিয়েছে। ফলে দলের রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার অ্যাডাম ন্যাগির দায়িত্ব আরও বেড়ে গেছে। ২০১৬ ইউরোতে পাদপ্রদীপের আলোয় আসা ন্যাগি এখনো হাঙ্গেরির অবিচ্ছেদ্য অংশ। রক্ষণে বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া থেকে শুরু করে পেছন থেকে নিখুঁত পাস দিয়ে আক্রমণ গড়ে তোলা ভালোই পারেন ন্যাগি। বাকি দুই মিডফিল্ডার হিসেবে জবোস্লাই আর কালমারের জায়গায় খেলার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি ২০১৬ ইউরোর আরেক প্রতিভা, ‘হাঙ্গেরিয়ান পল স্কোলস’ নামে পরিচিত লাজলো ক্লাইনহেইসলার ও ডেভিড সিগারের।
২০১৬ ইউরোতে আলো ছড়ানো দলের অধিনায়ক অ্যাডাম শালাইয়ের কার্যকারিতা এখন আর আগের মতো নেই। নিজের ক্লাব মেইঞ্জের হয়েই নিয়মিত সুযোগ পান না। তাও অভিজ্ঞ এই স্ট্রাইকার হাঙ্গেরি আক্রমণভাগের বড় আস্থা। প্রথাগত স্ট্রাইকার হিসেবে তাঁর শক্তি ও মুভমেন্ট কাজে লাগাতে চাইবে দলটা।
হয়তো এবার আমরা কোনো পয়েন্টই পাব না। তা-ও আমরা কীভাবে হারছি, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি চাইব ম্যাচ হারলেও আমরা যেন বড় দলগুলোর সঙ্গে সমানভাবে টেক্কা দিইমার্কো রসি, হাঙ্গেরি কোচ
প্রত্যাশা ও বাস্তবতা
ইউরোর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স ও তিনবারের ইউরোজয়ী জার্মানিকে নিয়ে গড়া গ্রুপে থেকে অঘটনের স্বপ্ন দেখাই বাড়াবাড়ি হাঙ্গেরির জন্য। তিন পয়েন্ট নিশ্চিত ধরে নিয়েই হয়তো হাঙ্গেরির বিপক্ষে নামবে বাকি তিন দল। কিন্তু ফুটবলে আগেই এমন কিছু বলে দেওয়া কঠিন। ২০১৪ বিশ্বকাপে ইতালি, উরুগুয়ে ও ইংল্যান্ডের গ্রুপে থাকার পরেও কোস্টারিকা হয়েছিল গ্রুপের সেরা। প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ পড়েছিল ইংল্যান্ড আর ইতালি। গত ইউরোতেই তো দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠারও আশা করেনি হাঙ্গেরি। কিন্তু পর্তুগাল, আইসল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ার গ্রুপ থেকে হয়েছিল গ্রুপের সেরা। এই আশাতেই এবারও থাকবে হাঙ্গেরি।