হাতে ছোট ছোট পতাকা। সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের লোগোওয়ালা পতাকা হাতে সারি বেঁধে বাফুফের সংবাদ সম্মেলনকক্ষে ঢুকলেন আরিফুল ইসলাম, হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস, জামাল ভূঁইয়া, জুয়েল রানারা। ছাইরঙা টি-শার্ট পরা ফুটবলাররা একটু বাদেই খোশগল্পে মেতে উঠলেন। কেউ ব্যস্ত হয়ে পড়লেন সতীর্থদের সঙ্গে সেলফি তুলতে। একটু পরই বাফুফে কর্তাদের হাতে দলবদলের আনুষ্ঠানিক কাগজপত্র তুলে দিলেন ক্লাবের ম্যানেজার নাসিরউদ্দিন চৌধুরী।
প্রিমিয়ার লিগের নবাগত দল সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব। গত মৌসুমে পেশাদার লিগের দ্বিতীয় স্তর চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে দ্বিতীয় হয়ে প্রিমিয়ারে এসেছে। কিন্তু ক্লাবটির প্রতিষ্ঠাতা তরফদার রুহুল আমিনের চোখ সব সময়ই ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরে। ক্লাবটি যে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে পেশাদার লিগে এসেছে, সেটা তাদের গত কয়েক মাসের কার্যক্রম দেখলেই বোঝা যায়। এই মৌসুমের দল নিবন্ধনের আগে কলকাতায় দলটি প্রাক্-মৌসুম অনুশীলন করে এসেছে গত মার্চে। কোথায় তাদের দুর্বলতা সেটি খতিয়ে দেখেছে। শুধু তা-ই নয়, গত মৌসুমে প্রিমিয়ারের সব দলের প্রতিটি ম্যাচের ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে তবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোথায় কোন খেলোয়াড় প্রয়োজন।
এই দলটিকে অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া ও ম্যানেজার নাসিরউদ্দিন দুজনই বললেন, ‘ওয়েল ব্যালান্সড।’ তরুণ ও অভিজ্ঞদের মিশেলেই গড়া হয়েছে দলটি। গত মৌসুমের চ্যাম্পিয়নশিপে খেলা দলের নয়জনকে রেখে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের আটজনের সঙ্গে করা হয়েছে চার বছরের চুক্তি। দলের সবচেয়ে শক্তিশালী দিক রক্ষণভাগ। আবাহনী থেকে যোগ দেওয়া পাঁচ ফুটবলারের দুজনই ডিফেন্ডার—আরিফুল ইসলাম ও তপু বর্মণ। মাঝমাঠ শক্তিশালী হয়েছে হেমন্ত ও জামাল ভূঁইয়াকে নিয়ে। মাঝমাঠে দেখা যাবে কলম্বিয়ার দেইনের আন্দ্রেসকেও। আক্রমণভাগে জুয়েল রানা, কলম্বিয়ান হ্যাম্বার ব্যালেন্সিয়া ওলে এবং ক্যামেরুনের আলভি ফোকোও ফোপা। তবে আরও একজন ভালো মানের বিদেশি খেলোয়াড়ের খোঁজে রয়েছে দলটি। গোলরক্ষক আবাহনী থেকে আসা সাইফুল ইসলাম, চট্টগ্রাম আবাহনীর আনিসুর রহমান জিকো ও আরামবাগের পাপ্পু হোসেন।
এই দলটিকে চ্যাম্পিয়নই দেখতে চান জামাল ভূঁইয়া। শুধু লিগ নয়, মৌসুমের তিনটি শিরোপাই জিততে চান বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ডেনিশ ফুটবলার, ‘এটা নতুন দল। আমরা নতুন ইতিহাস গড়তে চাই। একটা বড় দলের মতোই সব ট্রফি জিততে চাই। প্রধান লক্ষ্য অবশ্যই লিগ শিরোপা।’
ব্রিটিশ কোচ কিম্বার্লি গ্রান্ট এরই মধ্যে অনুশীলন শুরু করে দিয়েছেন। পরশু শক্তিশালী মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচে ৫-৪ গোলে জিতেছে সাইফ স্পোর্টিং। ম্যানেজার নাসিরউদ্দিন এই দল নিয়েই যেতে চান বহুদূর, ‘যে পরিকল্পনা কাগজে-কলমে করেছি, সেটা যদি মাঠের খেলায় ফুটে ওঠে, তাহলে অবশ্যই লিগ জেতার সুযোগ রয়েছে আমাদের।’
প্রিমিয়ার লিগে এসেই চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে নবাগত সাইফ স্পোর্টিং বড় চমকই দেবে বাংলাদেশের ফুটবলে।