>৬ মাসের ব্যবধানে দুই স্প্যানিশ কোচের বিপক্ষে টক্কর দিয়েছে মারুফুলের চট্টগ্রাম আবাহনী।
প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলে গত রোববার মারুফুল হকের চট্টগ্রাম আবাহনী লিখেছে দুর্দান্ত এক প্রত্যাবর্তনের গল্প। নীলফামারীতে স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোনের বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে ৩ গোলে পিছিয়ে গিয়েও আবাহনী শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিতেছে ৪-৩ গোলে। এর আগে অক্টোবরে চট্টগ্রামে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপেও এক স্প্যানিশ কোচের বিপক্ষে কৌশলের লড়াইয়ে শেষ হাসিটা ছিল মারুফুলের। সেবার টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে ভারতীয় ক্লাব গোকুলাম কেরালা এফসির বিপক্ষে ২-১ গোলে পিছিয়ে থেকেও যোগ করা সময়ে ২-৩ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল আবাহনী। ভারতীয় দলটির কোচ ছিলেন স্পেনের ফার্নান্দো আন্দ্রেস সান্তিয়াগো ভালেরা। ৬ মাসের ব্যবধানে দুই স্প্যানিশ কোচকে খেলোয়াড়ের বদলি ও কৌশল বদলেই টেক্কা দিয়েছেন দেশের অন্যতম সেরা এই কোচ, দেখিয়েছেন নিজের ‘মাস্টার ক্লাস’।
নীলফামারীতে ৫৯ মিনিটে ৩ গোল হজমের পরেও দমে যাননি মারুফুল। প্রথমে ফরোয়ার্ড শাখওয়াত রনিকে বদলি হিসেবে নামিয়ে ৪-২-৩-১ ফরমেশন থেকে সড়ে এসে ৪-৩-৩ ফরমেশন করে দেন মারুফুল। ৬৪ মিনিটে অধিনায়ক ও মিডফিল্ডার চার্লস দিদিয়ের ও ৬৭ মিনিটে নিক্সন গুলেমারের গোলে ৩-২ করে চট্টগ্রাম আবাহনী।
৩-০ থেকে ৩-২ হয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামের পালে হাওয়া লাগে। সুযোগ বুঝে হোল্ডিং মিডফিল্ডার মোনায়েম রাজুকে তুলে মারুফুল তাঁর শেষ অস্ত্র ফরোয়ার্ড মান্নাফ রাব্বিকে মাঠে পাঠান ৭৭ মিনিটে। খেলোয়াড়ের বদলের সঙ্গে কৌশলেরও পরিবর্তন। রাব্বিকে রাইট উইংয়ে পাঠানোয় ফরমেশন হয়ে যায় তখন ৪-২-৪। অর্থাৎ পুরোপুরি আক্রমণাত্মক কৌশল। রাইট উইং থেকে মান্নাফ রাব্বিই করিয়েছেন শেষ দুই গোল। ৮৭ মিনিটে রাব্বির ক্রস থেকেই দলকে সমতায় ফিরিয়েছেন নিক্সন। আর অতিরিক্ত যোগ করা সময়ে জয় সূচক গোলটি করেছেন চিনু ম্যাথুই।
সেদিন বসুন্ধরার দুই সেন্টারব্যাক তপু বর্মণ ও নিকোলাস দেলমন্তে দুর্বল হয়ে পড়ার পরেও ‘হাই লাইন ডিফেন্স’ করছিলেন। কোচ মারুফুল এই জায়গাটা কাজে লাগাতে বলেছিলেন মান্নাফ রাব্বিকে, ‘কোচ বলেছিলেন, ঠিকমতো নিচে নামতে পারছে না ওরা। তুমি গোলরক্ষক ও ডিফেন্ডারের মাঝে বল রাখবে। দুটি রাখতে পেরেছি, দুটিই গোল।’
এবার আসা যাক অক্টোবরের ম্যাচে। গোকুলামের বিপক্ষে ২-১ গোলে পিছিয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই মারুফুল জোড়া বদলি হিসেবে মাঠে পাঠিয়েছিলেন সোহেল রানা ও কাউসার আলি রাব্বিকে। প্রথমে সোহেল গোল করিয়ে সমতায় ফিরিয়েছিলেন আর রাব্বি করেছিলেন জয়সূচক গোল। এর আগে গ্রুপ পর্বের ম্যাচেও লাওসের ক্লাব ইয়াং এলিফ্যান্টের বিপক্ষে ২-১ গোলে পিছিয়ে পড়ে ২-৩ গোলে জিতেছিল চট্টগ্রাম আবাহনী।
দলের এমন ফিরে আসা কোনো অঘটন নয় বলেই মনে করেন মারুফুল। খেলোয়াড়দের মানসিকভাবে তৈরি করা ও তাদের ওপর আস্থা রাখার ফলেই এভাবে জেতা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন তিনি, ‘খেলোয়াড়দের মানসিকভাবে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে তৈরি করার চেষ্টা করি। একেবারে শেষ মুহূর্তে গিয়েও মনোযোগ হারালে দল হারতে বা জিততে পারে, এই বিষয়টি খেলোয়াড়দের বারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়।’
বসুন্ধরার বিপক্ষে এমন জয়ের পরেও মারুফুলের কণ্ঠে তাই নেই খুব বেশি উচ্ছ্বাস। কৃতিত্ব দিচ্ছেন খেলোয়াড়দের, ‘৩ গোলে পিছিয়ে থেকে ৪-৩ গোলে জয় পাওয়াটা অবশই বড় কৃতিত্ব। খেলোয়াড়দের এই জন্য ধন্যবাদ। আমি শুধু বলেছিলাম মনোযোগ ধরে রাখো, ওরা গোল করার সুযোগ দেবে। তারা শেষ পর্যন্ত মনোযোগ ধরে রাখতে পেরেছিল, এর জন্য সবকিছু সম্ভব হয়েছে।’
মারুফুলের ক্লাব কোচিং ক্যারিয়ার দারুল ঝলমলে। মাত্র দশ বছরের মধ্যেই দেশ-বিদেশে দশবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি ছয়বার রানার্সআপ হয়েছেন। ২০১৩ সালে শেখ রাসেলকে উপহার দিয়েছেন ট্রেবল শিরোপা। আর ২০১৮ সালে শেষ ট্রফিটা তো মাঝারি সারির আরামবাগের হয়ে রূপকথার জন্ম দিয়ে। একঝাঁক অখ্যাত তরুণকে নিয়ে দুই আবাহনী আর শেখ জামালকে হারিয়ে জিতেছিলেন স্বাধীনতা কাপের শিরোপা।