ফ্রান্স নয়, স্পেনের হয়ে খেলছেন লাপোর্ত।
ফ্রান্স নয়, স্পেনের হয়ে খেলছেন লাপোর্ত।

স্পেনের হয়ে খেলার কারণ ব্যাখ্যা করলেন লাপোর্ত

ইউরোর স্পেন দলে একটা বড় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। গত আট বছরে যে দৃশ্যের সঙ্গে সবাই পরিচিত হয়ে উঠেছিল, তা আর দেখা যাচ্ছে না। স্পেনের রক্ষণের বাঁ দিকটা এত দিন সামাল দিতেন সের্হিও রামোস। কিন্তু চোট থেকে পরিপূর্ণভাবে সুস্থ হয়েছেন কি না, এ নিয়ে সন্দেহ থাকায় সদ্য রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়া এই ডিফেন্ডারকে এবার ইউরোর স্কোয়াডেই রাখেননি কোচ লুইস এনরিকে। স্পেন দলে রামোসকে যে জায়গায় নিয়মিত দেখা যেত, সেটা এখন বুঝে নিয়েছেন এমেরিক লাপোর্ত।

ইউরোর দল ঘোষণার আগেও স্পেনের হয়ে খেলা হয়নি এই ডিফেন্ডারের। সেই খেলোয়াড়ই এনরিকের মূল ভরসা। শুধু রামোসের চোটই তাঁকে জায়গা পাইয়ে দিয়েছে, এমন নয়; বরং স্পেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে গিয়ে বহু আগেই লাপোর্তকে নিয়ে পরিকল্পনা সাজিয়ে রেখেছেন এনরিকে। যদিও কাজটা কঠিন ছিল, হাজার হলেও এই ডিফেন্ডার তো জাতিগতভাবে ফ্রেঞ্চ।

শুধু ফ্রান্সে জন্ম বলেই নয়, দেশটির হয়ে বয়সভিত্তিক দলেও খেলেছেন লাপোর্ত। কিন্তু জাতীয় দলে আর খেলা হচ্ছিল না তাঁর। অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়াটাই তাঁর দেশ বদলানোর কারণ বলে জানিয়েছেন লাপোর্ত।

সিটির রক্ষণে একটু গুরুত্ব হারিয়েছেন লাপোর্ত।

ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে এ মৌসুমে খুব বেশি খেলতে পারেননি লাপোর্ত। তবে গত মৌসুমে দলটির রক্ষণের মূল অস্ত্র ছিলেন। এর আগে স্পেনের অ্যাথলেটিক বিলবাওতে খেলতেন এই সেন্টারব্যাক। আর এই ক্লাবের হয়ে খেলাটাই তাঁকে স্পেনে খেলার সুযোগ করে দিয়েছে।

একটু খুলেই বলা যাক। স্পেনের ক্লাবগুলোর মধ্যে বিলবাও একটা বিশেষ নীতি অনুসরণ করে। আর তা হলো, চাইলেই যেকেউ এই ক্লাবে খেলতে পারেন না, বা যেকাউকে কিনে আনা যায় না এই ক্লাবে। শুধু বাস্ক অঞ্চলে জন্ম নেওয়া বা বেড়ে ওঠা অথবা এই অঞ্চলের একাডেমিতে বেড়ে ওঠা খেলোয়াড়দেরই নেওয়া হয় বিলবাওর এই ক্লাবে। আরেকটি উপায় হলো বাস্ক অঞ্চলের কারও বংশোদ্ভূত হলে খেলা যায় সে ক্লাবে।

স্পেনের অনুশীলনে লাপোর্ত।

জন্ম ফ্রান্সে হলেও লাপোর্তের পরদাদারা বাস্ক অঞ্চলের। আর সে সুবাদেই মাত্র দ্বিতীয় ফ্রেঞ্চ খেলোয়াড় হিসেবে ১৬ বছর বয়সে বিলবাওতে যোগ দিয়েছিলেন লাপোর্ত। আর ২৭ বছর বয়সে এসে পরদাদার দেশের হয়েই আন্তর্জাতিক ফুটবল খেললেন।

নিজের জন্মভূমির কথা ভুলে স্পেনকে কেন বেছে নিয়েছেন, সেটা স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কার কাছে খুলে বলেছেন লাপোর্ত, ‘এটা বেশ অনেক আগের অনেক লম্বা এক গল্প। এনরিকে আমাকে ফোন করেছিলেন এবং বলেছিলেন আমাকে পেতে চান তিনি। জানতে চেয়েছিলেন ইউরো খেলতে চাই কি না। আমাকে এটাও বলেছেন যদি স্পেনকে বেছে নিই, তাহলে আমার ইউরো খেলার ভালো সম্ভাবনা আছে। এ কথায় আমি খুবই খুশি হয়েছিলাম।’

লাপোর্ত জানতেন, এভাবে অন্য দেশকে বেছে নেওয়ায় সমালোচনা হতে পারে, কিন্তু বহুদিন অপেক্ষা করার পরও ফ্রান্স দলে ডাক না পাওয়া তাঁর সিদ্ধান্ত সহজ করে দিয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক একটি বড় টুর্নামেন্টে খেলার প্রলোভন তো আছেই, ‘এটা আপনাকে বিরক্ত করবেই। আপনি কখনোই সবাইকে খুশি করতে পারবেন না। এটা খুব স্পর্শকাতর বিষয়ও। কিন্তু দিন শেষে আমার মনে হয় সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছি। আমি সবার প্রতি সব সময় শ্রদ্ধা দেখাতে চেয়েছি এবং আমি খেলতে চাই।’

স্পেন রক্ষণের নেতৃত্ব পেয়েছেন লাপোর্ত।

স্পেনের হয়ে ইউরোতে খেলতে পেরে কত তৃপ্ত, সেটা লাপোর্তকে দেখলেই বোঝা যায়। আজ পোল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে তাই নিজের স্বপ্ন পূরণ নিয়েই কথা বলেছেন এই ডিফেন্ডার, ‘আমি খুব স্বচ্ছন্দ বোধ করছি এবং খুবই সুখী। জীবনের এমন এক পর্যায়ে আছি, সেখানে আমি আনন্দে আছি এবং আমি এর সদ্ব্যবহার করতে চাই। আমার নিজেকে একটা বাচ্চার মতো মনে হচ্ছে, যার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। আমি এখানে খেলার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছি এবং প্রতিটা সেকেন্ড আনন্দে চমকে উঠছি।’

লাপোর্ত জানিয়েছেন, তাঁর পরিবারের সবাই এ সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। বছরের পর বছর তাঁকে উপেক্ষা করেছে ফ্রেঞ্চ ফুটবল ফেডারেশন। কোচ দিদিয়ের দেশম স্কোয়াডে ডেকেও তাঁকে মাঠে নামাননি, এমনটাও হয়েছে। অবশ্য এখন হয়তো স্পেন দেশমকে ধন্যবাদই দেবে মাঠে না নামানোর জন্য! প্রীতি ম্যাচে একটুর জন্যও যদি দেশম লাপোর্তকে মাঠে নামাতেন, স্পেন তাহলে এভাবে দলে টানতে পারত না বাঁ পায়ের এই সেন্টারব্যাককে।

শেষে স্পেনের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত যে যৌক্তিক, সেটা বুঝতে পেরেছেন সবাই, ‘এটা বেশ স্পর্শকাতর ব্যাপার, তাই আমি আগে আমার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। আমার ইচ্ছার কথা বলায় তাঁরা ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন। তাঁরা এটা বেশ পরিষ্কারভাবেই দেখেছে। স্পেন আমার ক্যারিয়ারজুড়েই যা দিয়েছে, এর সঙ্গে ফ্রান্সের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা সবাই আমার অবস্থার কথা জানত। শুধু যে স্পেনের হয়ে খেলছি, তা–ই নয়, ফ্রান্স যে আমাকে ডাকছে না, সেটাও। আমি বহুদিন অপেক্ষা করেছি কিছু একটার জন্য। আমি এ নিয়ে কথা বলিনি, তাই একটু অবাক হয়েছে। কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত খুশি কারণ তারা জানত, আমি কী চাই।’