অনূর্ধ্ব-২৩ এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে ‘ডি’ গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ দলগুলো দেখে যে শঙ্কাটা তৈরি হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত সেটাই হলো সত্যি। টানা তিন ম্যাচ হেরে গ্রুপের তলানিতে থেকে বাছাইপর্ব শেষ করেছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে কুয়েতের কাছে ১-০ গোলে হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচে উজবেকিস্তানের কাছে ৬-০ গোলে উড়ে যাওয়া; আজ শেষ ম্যাচে তাসখন্দের পাখতর স্টেডিয়ামে সৌদি আরবের কাছে বাংলাদেশ হেরেছে ৩–০ গোলে।
স্বাভাবিকভাবে কোনো ম্যাচে ৬ গোল খাওয়ার পর খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস নেমে যায় তলানিতে। পরবর্তী ম্যাচে প্রতিপক্ষ সমপর্যায়ের দল হলে লড়াই করার মতো তবু কিছু থাকে। কিন্তু প্রতিপক্ষ যদি হয় সৌদি আরবের মতো দল, তাহলে তো লড়াইটা আরও কঠিন হয়ে যায়। আজ হয়েছেও তাই। ১৯ মিনিটের মধ্যে ২ গোল খাওয়ার পর আগের ম্যাচের মতো বড় হারের শঙ্কাই জেগেছিল। শেষ পর্যন্ত ১৩৮ ধাপ এগিয়ে থাকা দলের বিপক্ষে ৩ গোলের বেশি খায়নি বাংলাদেশ।
বাছাইপর্বে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে গোলকিপার। পাপ্পু হোসেনের কয়েকটি ভুলের খেসারত দিতে হয়েছিল কুয়েতের বিপক্ষে। আজ তাঁকে বসিয়ে একাদশে খেলানো হয় মিতুল মারমাকে। এর আগে জাতীয় দলের সঙ্গে থাকা এই গোলকিপারের প্রতিটি মুভেই ফুটে উঠছিল সন্ত্রস্ত ভাব। দ্বিতীয় গোলে অনেক বড় দায় আছে তাঁর। ২৫ মিনিটের মধ্যেই মিতুলকে উঠিয়ে নামানো হয় পাপ্পুকে। আগের ভুল শুধরে আজ বাংলাদেশকে কয়েকবার রক্ষা করেছেন তিনি।
অনূর্ধ্ব-২৩ দলের ৪ ডিফেন্ডার রহমত মিয়া, রিয়াদুল হাসান, টুটুল হোসেন ও ইয়াছিন আরাফাত জাতীয় দলের। স্বাভাবিকভাবে কোচের মূল ভরসার জায়গাজুড়ে ছিলেন তাঁদের নিয়ে গড়া রক্ষণভাগ। অথচ বাছাইপর্বে তাঁরা নিজেদের আলাদাভাবে প্রমাণ করতে পারেননি। বক্সের মধ্যে থেকে তাঁদের সামনে লাফিয়ে উঠে বা আলতো স্পর্শে প্রতিপক্ষের ফরোয়ার্ডরা গোল করেছেন।
আজ সমীকরণটা ছিল পরিষ্কার। ২ গোলের ব্যবধানে যারাই জিতবে, তারাই চলে যাবে পরবর্তী পর্বে। বাস্তবিক অর্থে প্রতিপক্ষ সৌদি আরব বলে আগেই হাত তুলে নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না বাংলাদেশের। প্রথমার্ধে ‘ডেপথ ডিফেন্ডিং’ কৌশল বেছে নিয়েছিলেন মারুফুল হক। ৪ ডিফেন্ডারের সঙ্গে ৩ মিডফিল্ডার ও দুই উইঙ্গারকে মাঝমাঠের নিচেই দেখা গিয়েছে। বল ঘুরেছে সৌদি আরবের খেলোয়াড়দের পায়ে। সৌদি আরবের খেলোয়াড়েরা দীর্ঘদেহী হওয়ায় বাতাসে বেশি খেলার চেষ্টা করেছেন তাঁরা।
এই কৌশলেই গোলের খাতা খোলে সৌদি আরব। ডান প্রান্ত থেকে ক্রসে বক্সের মধ্যে লাফিয়ে উঠে হেডে গোল করেন অধিনায়ক ও ডিফেন্ডার সাউদ আবদুল্লাহ। তাঁর সঙ্গে বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা থাকলেও কোনো বাধাই সৃষ্টি করতে পারেননি। অহেতুক পোস্ট ছেড়ে বের হয়ে এসে বলের নাগাল পাননি গোলকিপার মিতুল। কোথায় এই ক্ষতে প্রলেপ দেবেন মিতুল, উল্টো ৩ মিনিট পরেই করলেন আরেক বড় ভুল।
ফ্রি–কিক থেকে আয়মান ইয়াহইয়ার নেওয়া বাঁকানো শট মিতুল সঠিকভাবে পাঞ্চ না করতে পারায়, বক্সের মধ্যে সৌদি আরবের খেলোয়াড়দের সামনে পড়ে। দুরূহ কোণ থেকে জোরালো শটে বল জালে জড়িয়ে দেন জিয়াদ মুবারক। ১৯ মিনিটের মধ্যেই পরবর্তী রাউন্ডের কাজ সেরে নেয় সৌদি আরব। অন্যদিকে বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা নিজেদের মধ্যে পাস খেলার সামর্থ্যও দেখাতে পারছিলেন না। প্রতিপক্ষের চাপে বারবার ভুল পাস বা অহেতুক বল উড়িয়ে মেরে দায় সেরেছেন রহমত, টুটুলরা।
দ্বিতীয়ার্ধে মাথা তোলার চেষ্টা ছিল ইয়াসিন আরাফাত, ফয়সাল আহমেদদের। প্রতিপক্ষের অর্ধে নিজেদের মধ্যে পাস খেলতে পেরেছেন। তবে গোল ব্যবধান কমানোর মতো তা যথেষ্ট ছিল না। উল্টো ৭০ মিনিটে ৩-০ করেন আয়মান আহমেদ। ডান প্রান্তের কাটব্যাক গোলমুখ থেকে পা ছুঁয়ে গোলটি করেন আয়মান। অথচ তিনি এই কাজটি করেছেন বাংলাদেশের দুই সেন্টারব্যাক টুটুল ও রিয়াদুলের মাঝ থেকে।
৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে আগেই চূড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত করে রেখেছিল কুয়েত। বাংলাদেশকে হারিয়ে সেরা রানার্সআপ দল হিসেবে চূড়ান্ত পর্বের টিকিট কেটেছে সৌদি আরবও। এই গ্রুপের আরেক দল উজবেকিস্তান তো স্বাগতিক হিসেবেই খেলবে এশিয়ান কাপ।