>শেষ মুহূর্তের বিতর্কিত পেনাল্টিতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাছে হেরে চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নিয়েছিল পিএসজি। ম্যাচের পর নেইমার ইনস্টাগ্রামে গালাগাল করেছিলেন উয়েফাকে। এ কাজ করে নিষিদ্ধ হয়েছেন ব্রাজিল তারকা
খাল কেটে কুমির আনা বলতে কী বোঝায়, এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন নেইমার। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে হেরে মেজাজ হারিয়ে ইনস্টাগ্রামে উয়েফাকে গালাগাল করেছিলেন পিএসজি তারকা। উয়েফার চোখ এড়ায়নি বিষয়টি। ব্রাজিল তারকাকে এ কারণে আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে তিন ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ করেছে ইউরোপিয়ান ফুটবলের নিয়ন্ত্রক এ সংস্থা।
চোট তাঁকে মাঠ থেকে ছিটকে ফেলেছিল জানুয়ারির শেষ দিকে। ফরাসি কাপে স্ট্রাসবুর্গের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে পায়ের চোটে পড়েন নেইমার। এ কারণে চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় রাউন্ডে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে দুই লেগে খেলতে পারেননি। নিজে না খেলতে পারলেও সতীর্থদের সমর্থন দেওয়ার জন্য পার্ক দে প্রিন্সেসের ভিআইপি গ্যালারিতে বসে ম্যাচ দুটি দেখেছিলেন নেইমার। হাসিমুখ নিয়ে অবশ্য ফিরতে পারেননি। বিতর্কিত রেফারিংয়ের শিকার হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই বিদায় নিয়েছিল পিএসজি। এ কারণে মেজাজ হারিয়ে উয়েফাকে একহাত নিয়েছিলেন পিএসজির এই ব্রাজিলিয়ান তারকা। রীতিমতো মুখ খারাপ করে গালি দিয়েছিলেন নেইমার।
নেইমারের মেজাজ হারানো অস্বাভাবিক কিছু নয়। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মাঠে শেষ ষোলোর প্রথম লেগ ২-০ গোলে জিতেছিল পিএসজি। একে তো প্রতিপক্ষের মাঠে জয়, সঙ্গে ‘অ্যাওয়ে গোল’-এর সুবিধা—ফিরতি লেগের আগেই অনেকে কোয়ার্টার ফাইনালে দেখছিলেন পিএসজিকে। কিন্তু কে জানত, পিএসজিকে প্রচণ্ড ধাক্কা দিয়ে ছিটকে ফেলবে ইউনাইটেড এবং সেটি তাদেরই ঘরের মাঠে! দ্বিতীয় লেগে ঠিক এই কাণ্ডই ঘটেছিল পিএসজির মাঠ পার্ক দে প্রিন্সেসে। ওলে গুনার সুলশায়ারের মন্ত্রে উজ্জীবিত ইউনাইটেড সেখানে ফিরতি লেগে ৩-১ গোলের জয়ে শেষ আটে উঠেছিল, আর পিএসজিকে বিদায় করে দিয়েছিল চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে। ফলে, টানা তিনবার চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় ঘটে ফরাসি ক্লাবটির। নেইমারের মাথা ঠিক থাকে কীভাবে!
দুই লেগ মিলিয়ে ম্যাচটি ৩-৩ গোলে অমীমাংসিত থাকলেও শ্রেয়তর ‘অ্যাওয়ে গোল’ সুবিধায় শেষ আটে চলে গেছিল ইউনাইটেড। আর ইউনাইটেড সেটি পেয়েছিল ম্যাচের যোগ করা সময়ে চার মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে। ইউনাইটেড বক্সের একটু বাইরে থেকে দূরপাল্লার শট নিয়েছিলেন ইউনাইটেড ডিফেন্ডার ডিয়োগো দালোত। বক্সের ভেতরে বেশ লাফিয়ে উঠে বল ঠেকানোর চেষ্টা করেন পিএসজি ডিফেন্ডার প্রেসনেল কিমপেম্বে। পেছনের দিক মুখ করে লাফিয়ে উঠেছিলেন তিনি। অনিচ্ছাকৃতভাবেই তাঁর পেছনের হাত ছুঁয়ে চলে যায় বল। ইউনাইটেড পেনাল্টির আবেদন করলে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির (ভিএআর) সাহায্য নিয়ে পেনাল্টির নির্দেশ দেন মাঠের রেফারি। মার্কাস রাশফোর্ড স্পটকিক থেকে ইউনাইটেডকে জয়সূচক গোলটি এনে দেন।
বিতর্কিত পেনাল্টি থেকে রাশফোর্ডের ওই গোলেই হার নিশ্চিত হয় পিএসজির। আর এতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন নেইমার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে সেই হ্যান্ডবলের ছবির স্ক্রিনশট পোস্ট করে নেইমার লেখেন, ‘এটা লজ্জার। উয়েফা এখনো চার ব্যক্তির ওপর দায়িত্ব দিয়ে যাচ্ছে, যারা ফুটবল ও ভিএআর রিভিউ নিয়ে কিছুই জানে না। এটি হ্যান্ডবল না। পেছনে হ্যান্ডবল হয় কীভাবে?’ এতটুকু বলেই উয়েফাকে বেশ কিছু খিস্তিখেউড় করেন নেইমার। আর সেটাই নজরে আসে ইউরোপের ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থার।
উয়েফার নৈতিকতা কমিটির আইন অনুযায়ী, ১১ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করেছেন নেইমার। ফলে সামনের মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে তিন ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছেন তিনি। এতে আগামী মৌসুমে প্রথম রাউন্ডের অর্ধেকসংখ্যক ম্যাচ মাঠের বাইরে থাকতে হবে তাঁকে। এর আগে এ ধরনের কাণ্ড করে শাস্তি পেয়েছিলেন লিভারপুলের ক্রোয়েশিয়ান ডিফেন্ডার দেয়ান লভরেন। উয়েফা নেশনস লিগে ক্রোয়েশিয়া-স্পেন ম্যাচের পর স্পেন অধিনায়ক সার্জিও রামোসকে উল্টোপাল্টা বলেছিলেন লভরেন। যে কারণে এক ম্যাচ নিষিদ্ধ হতে হয়েছিল লভরেনকে।