আর্সেনালের জার্সিতে সর্বশেষ কবে দেখেছেন ওজিলকে?
আর্সেনালের জার্সিতে সর্বশেষ কবে দেখেছেন ওজিলকে?

সেই এরদোয়ানের দেশেই যাচ্ছেন ওজিল

জার্মানির হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছেন, কিন্তু নিজের শিকড় কখনো আড়াল করার চেষ্টা করেননি মেসুত ওজিল। তুরস্কের বংশোদ্ভূত জার্মান হিসেবেই নিজের পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তাঁর পেশাদার ক্যারিয়ারে আঁচড়ও ফেলেছে।

প্রায় এক বছর বসে থাকার পর মুক্তির পথ খুঁজতে সেই এরদোয়ানের দেশেই যাচ্ছেন ওজিল। আর্সেনালের স্কোয়াডে নাম না থাকা ওজিল অবশেষে ক্লাবকে বিদায় বলে দিচ্ছেন, যোগ দিচ্ছেন তুরস্কের ক্লাব ফেনারবাচেতে।

ওজিলের ফেনারবাচেতে যোগ দেওয়ার খবর অবশ্য আগেই এসেছে। কিন্তু আর্সেনালের সঙ্গে ওজিলের চুক্তি তো এখনো শেষই হয়নি। ফলে তুর্কি ক্লাব এখনো এ দলবদলের ঘোষণা দিতে পারছে না। আর্সেনাল এখনো এ ব্যাপারে কোনো কিছু নিশ্চিত করে জানায়নি। তবে ফেনারবাচে কোচ ইঙ্গিত দিয়েছেন, শিগগিরই তাঁর ক্লাবের জার্সিতে দেখা যাবে ৩২ বছর বয়সী জার্মান প্লে-মেকারকে।

ইস্তাম্বুলে কাটানো সময় নিয়ে নতুন করে টুইট করেছেন ওজিল।

২০১৮ বিশ্বকাপের আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সঙ্গে ছবি তুলে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন ওজিল ও আরেক তুরস্ক বংশোদ্ভুত জার্মান ইলকায় গুন্দোয়ান। বিশ্বকাপে জার্মানি গ্রুপ পর্বে বাদ পড়ায় সে বিতর্কের আগুন আরও বেড়েছে। দল বাদ দিয়ে জার্মানরা কেন যেন ওজিল আর গুন্দোয়ানের সমালোচনাতেই বেশি মেতেছে! সে বিতর্কের দায় মেটাতে জার্মান দল থেকে অবসরই নিয়েছেন ওজিল। পরে আর্সেনালের জার্সিতেও ফর্ম হারিয়ে ফেলেন।

একদিকে মাঠে ভালো খেলছিলেন না, ওদিকে উইঘুর মুসলিমদের নিয়ে কথা বলায় আর্সেনালের স্পনসর প্রতিষ্ঠানের চক্ষুশূল হয়েছেন বলেও খবর বেরিয়েছিল। করোনার পর থেকেই তাই আর্সেনালে ব্রাত্য হয়ে পড়েছেন ওজিল। প্রিমিয়ার লিগ ও ইউরোপা লিগে এ মৌসুমের স্কোয়াডে ওজিলকে রাখেননি কোচ মিকেল আরতেতা।

এতে অবশ্য আর্সেনালেরই ক্ষতি হচ্ছিল। ক্লাবের সবচেয়ে বেশি বেতনভোগী খেলোয়াড় ওজিল। বার্ষিক দুই কোটি পাউন্ড বেতন না খেলেই পাচ্ছিলেন এই মিডফিল্ডার। তাই ওজিল অবশেষে ক্লাব বদলানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আর্সেনালের অখুশি হওয়ার কিছু নেই। শোনা যাচ্ছে, সাড়ে তিন বছরের চুক্তিতে ফেনারবাচে যাচ্ছেন ওজিল। ক্লাবের কোচ এরল বুলুত আকারে–ইঙ্গিতে সেটা স্বীকার করে নিয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে বুলুত বলেছেন, ‘মেসুত ওজিলের পরিস্থিতি কয়েক দিনের মধ্যেই পরিষ্কার হবে।’ গতকাল দলের খেলা শেষে আরও বলেছেন, ‘মেসুতের নাম অনেক পরিচিত। সে আসার আগে আমার পক্ষে এ ব্যাপারে মন্তব্য করা সম্ভব নয়।’

দাতব্য কাজে সময় ব্যয় করছেন ওজিল।

ওজিলের এজেন্ট এরকুত সোগুত বুধবার বলেছিলেন, খুব দ্রুত ওজিলের চুক্তির সমস্যার সমাধান হবে। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে স্প্যানিশ লিগ জেতা এই মিডফিল্ডার ১ জানুয়ারি থেকেই যেকোনো ক্লাবের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন চুক্তি নিয়ে। আর্সেনালের সঙ্গে জুন পর্যন্ত চুক্তি থাকলেও যদি ক্লাব রাজি হয়, এই দলবদলেই ক্লাব ছাড়ার সম্ভাবনা তখনই জানিয়েছেন সেগুত, ‘১ জানুয়ারির আগে আইনি কারণে আমরা এ নিয়ে কথা বলতে পারিনি। এখন আমরা বিভিন্ন প্রস্তাব ভেবে দেখব। চুক্তির অঙ্ক নিয়ে আলোচনা করব। গ্রীষ্ম পর্যন্ত আর্সেনালেই থাকতে পারেন ওজিল, আবার এখনই যেতে পারেন। মেসুতের ইচ্ছা থাকার, কিন্তু ফুটবলে আপনি কিছুই বলতে পারেন না। সবকিছু অনেক দ্রুত বদলায়। আপাতত জানুয়ারি ও গ্রীষ্মের সব প্রস্তাবই ভেবে দেখা হচ্ছে। যদি জানুয়ারিতেই যেতে চাই, তাহলে আর্সেনালের সঙ্গে কথা বলতে হবে। গ্রীষ্মে গেলে তো দরকার হবে না। এখন এটাই পরিস্থিতি। আগামী ৭ বা ১০ দিনে সবকিছু পরিষ্কার হবে। যেহেতু দলবদলের বাজার খুলেছে, এখন সবকিছু দ্রুত হতে পারবে।’

ওদিকে আর্সেনাল ওজিলের পূর্বপুরুষের দেশের ফেরায় বাধা হয়ে উঠতে পারে। ওজিলের চুক্তির শেষ অংশটুকু মনঃপূত না হলে ওজিলকে নাকি ছাড়বে না তারা। অন্তত কোচ আরতেতা কাল এমনটাই বলেছিলেন, ‘যদি দুই পক্ষেরই ভালো হচ্ছে এমন প্রস্তাব আসে, তাহলেই হবে। মেসুত ও তার ভবিষ্যতের জন্য এবং ক্লাবের ভালো হবে এমন প্রস্তাব হতে হবে। তেমন প্রস্তাব এলেই আমরা রাজি হব। না হলে সে এখানেই থাকবে।’