শিরোপার জন্য লড়তে থাকা দুই দলই প্রথমে আচমকা গোল খেয়ে বসল। পরে আড়মোড়া ভেঙে ঠিকই বেশি গোল দিয়ে নিজ নিজ ম্যাচে জয়ী হলো। মাঝের ৯০ মিনিট ও যোগ করা সময় জুড়ে যা হলো, সে জন্যই হয়তো মানুষ ফুটবল এত ভালোবাসে!
স্টিভেন জেরার্ড ‘চেষ্টা’ করেছেন তাঁর সবটুকু দিয়ে। চেষ্টা করেছেন লিভারপুলের আরেক সাবেক তারকা ফিলিপ কুতিনিও-ও। সিটির মাঠে ২-০ গোলে এগিয়েও গিয়েছিল তাঁরা। কিন্তু ওই যে, ‘চ্যাম্পিয়নস মেন্টালিটি’ বলে একটা কথা থেকেই যায়! চ্যাম্পিয়নদের মানসিকতা। ওই মানসিকতার জোরেই দ্বিতীয়ার্ধের সাড়ে পাঁচ মিনিটে যেন অসুরশক্তি ভর করলো সিটির একেক তারকার মাঝে। ৭৬ থেকে ৮২ - মোটামুটি এই সাড়ে পাঁচ মিনিটে সিটি গোল করল তিনটি। তাতেই নিশ্চিত হলো, উলভারহ্যাম্পটনকে হারিয়েও লাভ হচ্ছে না লিভারপুলের। লিগ শিরোপা যাচ্ছে ম্যানচেস্টার সিটির ঘরেই। চূড়ান্ত স্কোর : ম্যানচেস্টার সিটি ৩-২ অ্যাস্টন ভিলা, লিভারপুল ৩-১ উলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারার্স।
মূল একাদশে ভার্জিল ফন ডাইক, মোহাম্মদ সালাহ - কাউকেই সুযোগ দেননি লিভারপুলের কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ। ওদিকে চোটের কারণে ছিলেন না রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার ফাবিনিও। ফন ডাইকের জায়গায় ইবরাহিমা কোনাতে জুটি বেঁধেছিলেন জল মাতিপের সঙ্গে। রক্ষণভাগে ভার্জিল ফন ডাইক না থাকলে যা হয়, লিভারপুল যে সাধারণত একটু উপরে উঠে এসে ‘হাই লাইন’ পদ্ধতিতে রক্ষণ করে অভ্যস্ত, সে কাজটা ঠিকঠাক হয় না। মাতিপ ও কোনাতের মধ্যে অনেক সময় বোঝাপড়ায় ঘাটতি হয়, যে কারণে কে ওপরে উঠে ‘চার্জ’ করবেন, কে নিচে থেকে সম্ভাব্য বিপদ কাটাবেন - সন্দেহ থেকে যায় অনেক সময়। আজকেও সেটাই হয়েছে। ম্যাচের তিন মিনিটে উলভারহ্যাম্পটনের কাছে ঠিক এ কারণেই গোল খেয়ে বসে লিভারপুল। উলভসের গোলকিপার জোসে সা লম্বা কিকে বল পাঠিয়ে দেন লিভারপুলের ওপরে উঠে থাকা রক্ষণভাগের পেছনের দিকটায় আক্রমণের অপেক্ষায় থাকা মেক্সিকান স্ট্রাইকার রাউল হিমেনেজের কাছে। হিমেনেজ নিখুঁতভাবে বল পাঠিয়ে দেন বক্সে আসা আরেক স্ট্রাইকার পেদ্রো নেতোর কাছে। ব্যস, ১-০!
পরের বিশ মিনিট ভয়ে ভয়েই কাটিয়েছে লিভারপুল। ২৪ মিনিটে ভয় একটু কমান সাদিও মানে। স্প্যানিশ মিডফিল্ডার থিয়াগো আলকানতারার দুর্দান্ত ব্যাকহিল পাসে বল পেয়ে যান এই সেনেগালিজ ফরোয়ার্ড, জোসে সা-কে পরাস্ত করতে বেগ পেতে হয়নি তাঁর।
লিভারপুল যখন গোল হজম করল, অন্তর্জালের কল্যাণে সে খবর পেয়ে ইতিহাদে নিজেদের ম্যাচ দেখতে আসা সিটিভক্তরা ততক্ষণে আনন্দে মাতোয়ারা। যদিও তখনও গোল পায়নি সিটি বা ভিলার কেউই। একাদশ নিয়ে চিন্তা ছিল সিটির। সিটির রক্ষণভাগে চোটসমস্যা আজকের নয়। তাও মৌসুমের শেষ ম্যাচের আগে অনুশীলনে কাইল ওয়াকার ও জন স্টোনসের ফিরে আসাটা আশা জাগিয়েছিল সিটিভক্তদের মনে। শেষমেশ মূল একাদশে পেপ গার্দিওলা স্টোনসকে রাখলেও, ওয়াকারকে নিয়ে ঝুঁকি নিতে চাননি। রক্ষণভাগে তাই সেন্টারব্যাক স্টোনসকে খেলানো হয় রাইটব্যাক হিসেবে, আর দলের অধিনায়ক, রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার ফার্নান্দিনিওকে খেলানো হয় সেন্টারব্যাক হিসেবে। সিটি ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটা আজ খেলতে নেমেছিলেন এই ব্রাজিলিয়ান তারকা। যে দলে আট বছর খেলেছেন, সে দলের হয়ে শেষ ম্যাচটাতেই এত বড় চাপ - ফার্নান্দিনিওর অবস্থাটা একটু চিন্তা করে দেখুন!
ওদিকে অ্যাস্টন ভিলার মূল একাদশে আর্জেন্টাইন গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ ছিলেন না চোটের কারণে। তাঁর জায়গায় নামান হয়েছিল সুইডিশ গোলকিপার রবিন ওলসেনকে। ভিলার জার্সি গায়ে যিনি প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন।
শুরু থেকে ম্যানচেস্টার সিটির ভয়ে অ্যাস্টন ভিলা অবশ্য খোলসবন্দী হয়ে থাকেনি। নিজেরাও সময় সুযোগমতো আক্রমণে উঠে গেছে। যার সুফল এসেছে ৩৭ মিনিটে। দুই ফুলব্যাকের যুগলবন্দীতে অসাধারণ এক গোল পেয়ে যায় স্টিভেন জেরার্ডের দল। লেফটব্যাক লুকা দিনিয়ের ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে দলকে এগিয়ে দেন পোলিশ রাইটব্যাক ম্যাটি ক্যাশ। সিটির মাঠ ইতিহাদে তখন কবরের নিস্তব্ধতা! আর হবে না-ই বা কেন, লিভারপুল আর এক গোল যদি দিয়ে দেয়, আর সিটি অন্তত আর একটা গোল না দিতে পারে, তাহলে যে লিভারপুলই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে!
মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হলো তখন, যখন ফিলিপ কুতিনিও গোল দিয়ে বসলেন। লিভারপুলের সাবেক তারকার এই গোলে সিটি তখন নিজেদের মাঠেই ২ গোলে পিছিয়ে!
এরপর ওই সাড়ে ৫ মিনিটের ঝড়। বের্নার্দো সিলভার জায়গায় জার্মান মিডফিল্ডার ইলকায় গুনদোয়ানকে মাঠে নামিয়েছিলেন পেপ গার্দিওলা। ওই এক সিদ্ধান্তেই লিগ এলো সিটির ঘরে। গুনদোয়ান করলেন জোড়া গোল, রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার রদ্রি করলেন একটা। সিটি জিতে গেল ৩-২ গোলে। ওদিকে বিকল্প হিসেবে মাঠে নামা মোহাম্মদ সালাহ আর লেফটব্যাক অ্যান্ডি রবার্টসন গোল করে দলকে জেতালেও লাভ হলো না।
প্রিমিয়ার লিগের আসর থেকে আরেকটিবার তাই খালি হাতেই ফিরল লিভারপুল।