প্রশ্ন বাদল রায়ের

‘সালাউদ্দিন সাহেব তো অনেক শক্তিশালী, আমাকে কেন হয়রানি করছেন’

সভাপতি পদে এক ঘণ্টা দেরিতে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছিলেন বাদল রায়। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কাছে সেটা গ্রহণযোগ্য হয়নি। তাই আগামী ৩ অক্টোবর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) বহুল আলোচিত নির্বাচনে বৈধ প্রার্থী বলেই গণ্য হবেন বাদল রায়। অন্য দুই সভাপতি প্রার্থী কাজী সালাউদ্দিন ও শফিকুল ইসলামের চেয়ে বেশি ভোট পেলে বাদলই হবেন বাফুফের নতুন সভাপতি।

শারীরিক অসুস্থতাকে কারণে দেখিয়ে তিনি নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন ১২ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে। তাঁর স্ত্রী সেদিন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের চিঠি নিয়ে বাফুফে ভবনে এসে বলেছিলেন, ‘বাদলের শরীর ভালো নয়। তাই সে নির্বাচন করবে না।’ ব্যাপারটা এখানেই শেষ ভেবেছিলেন সবাই। কিন্তু আজ মোহামেডান ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আবার নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিলেন বাদল রায়। তবে তাঁর সমর্থকেরা বলছেন, চাপের মুখেই আবার এই ঘোষণ দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।  

নির্বাচনের এক মাস আগেই প্যানেলসহ নিজেকে সভাপতি ঘোষণা করতে চেয়েছিলেন উনি (কাজী সালাউদ্দিন)।
বাদল রায়

কিন্তু প্রশ্ন আসছে কেন আবার প্রত্যাহারের ঘোষণা? বাদল বলেন, ‘১২ সেপ্টেম্বর আমার স্ত্রীর বাফুফে ভবনে যেতে এক ঘণ্টা লেগেছে। সময় চলে যাওয়ার কারণে আমার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে আইনগতভাবে একটা সমস্যা হয়েছে। সমস্যাটা ইচ্ছা করলে সমাধান করা যেত। সালাউদ্দিন সাহেবের তো শক্তি অনেক। চাইলেই পারতেন সমস্যার সমাধান করতে। আমাকে কেন হয়রানি করছেন, আমি জানি না। আমি মনে করি সবাই নির্বাচন করবেন। উনিও এটা ফেস করতে পারবেন বলে আমি মনে করি।’

এক প্রশ্নের উত্তরে বাদল রায় বলেন, ‘আপনারা সবাই জানেন, নির্বাচনের এক মাস আগেই ওনার প্যানেলসহ নিজেকে সভাপতি ঘোষণা করতে চেয়েছিলেন উনি (কাজী সালাউদ্দিন)। এগুলোই ওনার পছন্দ হয়নি। নির্বাচনে এসব মোকাবিলা করতে হয়। উনি তো বড় সংগঠক।’ নির্বাচনে কাউকে সমর্থন দিচ্ছেন কি না প্রশ্নে তাঁর উত্তর, ‘আমি জানি দুজন সভাপতি প্রার্থী আছেন। এখন দুজনের ব্যাপারে এ মুহূর্তে আমার কোনো মন্তব্য নেই। আমার শরীরটা ভালো না। তাই সরে দাঁড়াচ্ছি। জানি এতে তৃণমূলের সংগঠকেরা কষ্ট পাবে।’

অনেকে হয়তো মনে করছেন আমার ওপর খুব চাপ আছে। আসলে চাপ না। আমি আবারও বলছি, শারীরিক অসুস্থতার কারণে নির্বাচন থেকে সরে যাচ্ছি। আমাকে ভোট দিলেও আমি কাজ করতে পারব কি না তা নিয়ে সংশয় আছে।

সরে গেলও বেশি ভোট পেলে নির্বাচিত হয়ে গেলে দায়িত্ব নেবেন কিনা প্রশ্নে বলেন, ‘নির্বাচনে কি হবে না হবে, সেটা পরে দেখা যাবে। তবে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে আমি আমার তৃণমূলের সংগঠকদের সঙ্গে প্রতারণা করতে পারব না। আমার শরীর খারাপ। এটা আমার জানানো দরকার, জানিয়ে দিয়েছি। এখন কাউন্সিলররা সিদ্ধান্ত নেবেন, তারা কী করবেন। তবে আমি অনেক কষ্ট নিয়ে সরে দাঁড়াচ্ছি।’

সংবাদ সম্মেলনের একবার চোখ মুছতে দেখা যায় ২০০৮ সাল থেকে তিন মেয়াদে বাফুফের এই সহসভাপতিকে। পাশে বসা স্ত্রী মাধুরী রায়ও চোখ মোছেন। আপ্লুত ছিলেন দুজনই। নিজেই বলেন, ‘ফুটবল ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না।’ চাপ বা অনুরোধের মুখে সরে যাচ্ছেন কি না প্রশ্নে তাঁর কথা, ‘আমি এটা ওভাবে বলতে পারব না। অনেকে হয়তো মনে করছেন আমার ওপর খুব চাপ আছে। আসলে চাপ না। আমি আবারও বলছি, শারীরিক অসুস্থতার কারণে নির্বাচন থেকে সরে যাচ্ছি। আমাকে ভোট দিলেও আমি কাজ করতে পারব কি না তা নিয়ে সংশয় আছে। যখনই প্রয়োজন হবে তখনই সংবাদ সম্মেলন করব। আপনারা ডাকলেই আসব।’

জীবনের সব জায়গায় ব্যর্থতার দায় নিতে হয়। কিন্তু আমাদের এখানে নেই
বাদল রায়

সঙ্গে যোগ করেন, ‘তৃণমূলের সংগঠকেরা বড় অসহায়। তাদের জন্যই আমার মনটা কাঁদত। তারা কীভাবে নিবে আমি জানি না। তাদের হয়তো খুব কষ্ট হবে। তারপরও আমি আজ আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেকে প্রত্যাহার করলাম। যারা প্রার্থী, ভোটার ডেলিগেট আছেন, তারা যার যার এলাকার বড় বড় মানুষ। আপনারা চিন্তা ভাবনা করেই ভোট দেবেন।’

১৯৭৭ সালে মোহামেডান ক্লাব দিয়ে ঢাকার ফুটবলে তাঁর যাত্রা। ১৯৮৯ সালে শেষও মোহামেডানে। অন্য কোনো ক্লাবে খেলেননি। মোহামেডান ও ফুটবল অন্ত প্রাণ বাদল রায় বলেন, ‘আমি চাই ফুটবল ফেডারেশনে শক্তিশালী একটি কমিটি হোক। যারা কাজ করবেন তারাই নির্বাচন করেন। যারা কাজ করবেন না, তাদের দয়া করে আপনারা ভোট দেবেন না। এটাই আমার অনুরোধ। আমি সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা চাই, আপনারা দীর্ঘদিন ধরে আমাকে অনেক ভালোবাসেন। ভালোর জন্য সব সময় আপনারা পরামর্শ দিয়েছেন। কোনো ভুল ত্রুটি না থাকলে ক্ষমা করবেন।’