>ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে কাল উইলি কাবায়েরোর শিশুতোষ ভুলে প্রথম গোলটা হজম করেছে আর্জেন্টিনা। এমন ভুল তিনি কীভাবে করলেন?
হোর্হে সাম্পাওলি তাহলে উইলি কাবায়েরোকে চিনতে ভুল করেছিলেন!
রাশিয়া বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা স্কোয়াডে কাবায়েরোকে দেখেই অনেকে ভ্রুকুটি করেছিলেন। কারণ, সেরা সময়টা বহু আগেই পেছনে ফেলে এসেছেন ৩৬ বছর বয়সী এই গোলরক্ষক। বিশ্বকাপে খেলার কথা এই গোলরক্ষক নিজেও কখনো ভেবেছেন কি না সন্দেহ। সার্জিও রোমেরোর চোট তাঁর কপাল খুলে দিয়েছিল। তারপরেও প্রশ্ন থেকেই গিয়েছিল, বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার গোলবার সামলানোর মতো যথেষ্ট দক্ষতা তাঁর আছে কি না! এই গোলরক্ষকের ওপর নির্ভরই–বা করা যায় কতটুকু!
হোর্হে সাম্পাওলি ফুটবল বিশ্লেষকদের এ প্রশ্নের তোয়াক্কা করেননি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের গত মৌসুমে মাত্র ৩ ম্যাচ খেলার সুযোগ পাওয়া গোলরক্ষকের ওপরই ভরসা রেখেছিলেন সাম্পাওলি। অথচ স্কোয়াডে ছিলেন ফ্রাঙ্কো আরমানির মতো গোলরক্ষক; গত মৌসুমে রিভারপ্লেট গোলপোস্টে যাকে নিয়মিতই দেখা গেছে। কাবায়েরো চেলসির গোলরক্ষক বলেই কি তাঁর ওপর ভরসা রেখেছিলেন সাম্পাওলি?
জবাব নেই। কাল রাতের পর থেকে কোনো প্রশ্নেরই জবাব খুঁজে পাচ্ছেন না আর্জেন্টাইন–সমর্থকেরা। বিশ্বকাপ–স্বপ্ন যখন খাদের কিনারায় তখন জবাব মেলাটা একটু কঠিনই। কাল কাবায়েরো যে দুঃস্বপ্ন দেখিয়েছেন সেটা ভুলতেই তো তাঁদের বহু নির্ঘুম রাত লেগে যাবে। কাবায়েরোর শিশুতোষ ভুলটাই যে আর্জেন্টিনার হারের একমাত্র কারণ, তা কিন্তু নয়। তবে হারের বড় দায় সেটিরই। সেই অবিশ্বাস্য ভুলের পথ ধরে আর্জেন্টিনার প্রথম রাউন্ড থেকে ছিটকে পড়ার সমীকরণটাও এখন বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
আইসল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই কাবায়েরোকে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। গোললাইনে নড়বড়ে ছিলেন। প্রতিপক্ষের ক্রস সেভাবে প্রতিহত করতে পারেননি। কাল তো কাবায়েরো নিজেও বুঝেছেন, প্রায় ১৮ বছর পেশাদার ফুটবলে কাটিয়ে দেওয়ার পরেও আন্তর্জাতিক ফুটবলে তিনি কতটা অনুপযোগী। দেশের হয়ে ৫টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা কাবায়েরোর ক্যারিয়ারে যতি পড়ে যেতে পারে এখানেই। পড়বে না কেন? ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে কাবায়েরো তো প্রথমার্ধ থেকেই নড়বড়ে ছিলেন। ৫৩ মিনিটে তাঁর ভুলে আর্জেন্টিনা যে গোলটা হজম করেছে, সেটা কিন্তু প্রথমার্ধেও হতে পারত।
বিবিসি ধারাভাষ্যকার ও লিভারপুল কিংবদন্তি মার্ক লরেনসন অন্তত এমনটাই মনে করছেন, ‘বোঝাই গিয়েছিল এমন কিছু যেকোনো সময় ঘটতে পারে। সে তখন কী ভেবেছিল কে জানে!’ আসলে প্রথমার্ধ থেকেই রক্ষণভাগের সতীর্থদের সঙ্গে কাবায়েরোর বোঝাপড়াটা সেভাবে দেখা যায়নি। ব্যাকপাস নিয়ে সেটা আবার ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে দু-তিনবার ফাঁড়া গেছে তাঁর ওপর দিয়ে। আর ৫৩ মিনিটে যা ঘটল সেটা আর্জেন্টিনা–সমর্থকদের মতো কাবায়েরো নিজেও ভুলে যেতে চাইবেন।
গ্যাব্রিয়েল মার্কাদোর ব্যাকপাস পেয়েছিলেন কাবায়েরো। বলটা তাঁকে আবারও ফেরত দিতে গিয়ে গড়বড় করে ফেলেন। দুজনের মাঝে আন্তে রেবিচ দাঁড়িয়ে থাকায় বলটা চিপ করে মার্কাদোর কাছে পাঠাতে চেয়েছিলেন কাবায়েরো। কিন্তু ঠিকমতো চিপ করতে না পারায় বলটা বেশি ওপরে উঠে যায় আর সেই সুযোগে দারুণ ভলিতে গোল করেন রেবিচ। এই গোলটা দেখলে যে কেউ মনে করবে আর্জেন্টিনার ৪৪ মিলিয়ন মানুষের চাপ যেন একা কাবায়েরোর ওপর! আর সেই চাপ নিতে গিয়েই তিনি বল ঠিক জায়গামতো ফেরত পাঠাতে পারেননি।
ভুলটা হওয়ার পর চোখ বন্ধ করে তাঁর মাথায় হাত দেওয়ার দৃশ্যটা কালকের ম্যাচে গোটা আর্জেন্টিনা দলেরই প্রতিচ্ছবি। বিবিসি ধারাভাষ্যকার সেস ফ্যাব্রেগাসের মতে, কাবায়েরোর ওই দৃশ্য আর আর্জেন্টিনা দল ‘একজন ভেঙে পড়া মানুষ’-এর প্রতিচ্ছবি বহন করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তাঁর হাস্যকর ভুল নিয়ে ঠাট্টা-রসিকতা চলছে। একজনের টুইট, ‘কাবায়েরোর ভুলটা দিয়ে আর্জেন্টিনা দলকে বোঝা যায়।’
কাবায়েরোর সেই অবিশ্বাস্য ভুলের ভিডিও লিংক: