>বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব এলেই অনেকেই ফিরে যান ১৯৮৯ সালের মার্চের এক সন্ধ্যায়। স্থান, ঢাকা স্টেডিয়াম। সেদিন ডিয়েগো ম্যারাডোনা ভর করেছিল বাংলাদেশের এক ফুটবল তারকার ওপর।
৩০ বছর আগে সেই সন্ধ্যাটি খুব করেই মনে পড়ে সৈয়দ রুম্মান বিন ওয়ালি সাব্বিরের। তাঁর তো মনে পড়বেই। সেই সন্ধ্যার অন্যতম নায়ক যে ছিলেন তিনিই। কিন্তু সেই সন্ধ্যাটি যে ভুলতে পারেন না বাংলাদেশের অনেক ফুটবলপ্রেমীই। ১৯৮৯ সালে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকায় ৩-১ গোলে জিতেছিল বাংলাদেশ। সে ম্যাচে কী দুর্দান্ত এক গোলই না করেছিলেন সাব্বির। মুহূর্তের জন্য হয়ে গিয়েছিলেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা প্লে মেকারের সেই গোলটিই যে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশের সেরা গোল হয়ে আছে।
সেদিন থাইল্যান্ডের বিপক্ষে সে জয়ে সাব্বির ছাড়াও গোল করেছিলেন সত্যজিৎ দাস রূপু, এবারের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের ম্যানেজার যিনি। আর ওয়াসিম ইকবাল। কিন্তু বাকি দুটি গোল ছাপিয়ে সাব্বিরের গোলটি অন্য মাত্রা পেয়েছে। প্রায় নিজেদের সীমানা থেকে বল ধরে একাই চার থাই খেলোয়াড়কে কাটিয়ে সেটি করেছিলেন তিনি। অনেকটা ছিয়াশির বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করা ম্যারাডোনার ‘শতাব্দীর সেরা’ গোলটির মতো। চোখ ধাঁধানো সেই গোলটি সে প্রজন্মের ফুটবলপ্রেমীদের চোখে লেগে থাকবে।, ৩০ বছর পরেও সেটি নিয়ে আলোচনা হবে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমাদের দুর্ভাগ্য যে সে গোলটির কোনো ভিডিও ফুটেজ এ প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার কোনো উপায় নেই। সে সময় দেশের একমাত্র টেলিভিশন চ্যানেল বিটিভিতে ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছিল বটে, কিন্তু সেই ভিডিও রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের আর্কাইভে যত্ন করে রেখে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা কেউ অনুভব করেছেন কিনা, তার কোনো প্রমাণ নেই।
দুই যুগের বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়া সেই গোলের গল্পটা এখনো সাব্বিরের কণ্ঠে তরতাজা, ‘মাঝমাঠের ওপর আর নিজেদের অ্যাটাকিং থার্ডের মাঝখান থেকে বলটি পেয়েছিলাম। তিন বা চারজন হবে কাটিয়েছিলাম। একজনের পর আরেকজনকে কাটিয়ে গোলটি করেছিলাম। সতীর্থদের উচ্ছ্বাস ও গ্যালারির দর্শকদের উন্মাদনা দেখেই বুঝেছিলাম বিশেষ গোল করে ফেলেছি। এটাই আমার জীবনের সেরা গোল।’
গোল নিয়ে উচ্ছ্বাস থাকলেও সাব্বিরের কাছে সেই জয়ের আলাদা কোনো মাহাত্ম্য নেই, ‘তখন আমরা নিয়মিত থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়াকে হারাতাম। কখনো আমরাও তাদের কাছে হারতাম। একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। ফলে জয় নিয়ে বাড়তি কোনো উচ্ছ্বাস নেই।’ অ্যাওয়ে ম্যাচে, ব্যাংককে থাইদের কাছে ১-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ।
১৯৯০ বিশ্বকাপের বাছাইয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে থাইল্যান্ড ছাড়া অন্য দুটি দল ছিল চীন ও ইরান। চীনের বিপক্ষে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে দুইটি ম্যাচেই ২-০ ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ। লড়াই করেই। অন্যরকম লড়াই হয়েছিল ইরানের বিপক্ষে। ঘরের মাঠে ২-১ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। একমাত্র গোলটি এসেছিল শেখ মোহাম্মদ আসলামের পা থেকে। সে ম্যাচে পেনাল্টি মিস করেছিলেন সাব্বির। মিসটি নিয়ে এখনো আক্ষেপ করেন ফুটবলপ্রেমীরা। অ্যাওয়ে ম্যাচে তেহরানে শেষ মুহূর্তের গোলে ১-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ।