>
গতকাল কিরগিজস্তানকে ২-১ গোলে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। ম্যাচসেরা হয়েছেন সানজিদা আক্তার।
ম্যাচসেরা হয়ে যেন বিপদেই পড়ে গেলেন সানজিদা আক্তার! তা না হলে তো আর ম্যাচ শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হতে হয় না তাঁকে। আর তাঁর মুখ থেকে কথা বের করা গণমাধ্যমকর্মীদের জন্যও বেশ হ্যাপা! সবুজ মাঠে দেখা ‘যোদ্ধা’ সানজিদাকে সংবাদ সম্মেলনে দেখলে প্রশ্ন জাগে—এই মেয়েটাই কি কিছুক্ষণ আগে প্রতিপক্ষ দলকে তছনছ করে করে এসেছেন?
গতকাল কিরগিজস্তানকে ২-১ গোলে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বঙ্গমাতা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। গ্যালারির দর্শকদের অনেকে তখনো নিজের আসনটিও খুঁজে পাননি! কেউ কেউ আবার স্টেডিয়ামে ঢুকি-ঢুকছি করছেন...। ঠিক তখনই কিছু বুঝে ওঠার আগেই ২৯ সেকেন্ডের মাথায় অতিথিদের বুকে ছুরি চালিয়ে দিলেন সানজিদা। দ্বিতীয়ার্ধে তাঁর ক্রস থেকে গোল করেছেন কৃষ্ণা রানী সরকার। ব্যস ম্যাচসেরার ৫০০ ডলার উঠে গেল সানজিদার হাতে। সংবাদ সম্মেলনে সানজিদার উদ্দেশে প্রথম প্রশ্নটা ছিল—টাকাটা কী করবেন? বাংলাদেশ দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়ের সহজ জবাব, ‘অ্যাকাউন্টে রাখব...’ বলেই হাসতে চাইলেন; সেই হাসি আবার হাত দিয়ে আড়াল করার ব্যর্থ চেষ্টাও করলেন খানিকটা!
শুরুর গোলটা দেখে অনেকেই বলবেন কিরগিজ গোলরক্ষকের অমন ভুলের সুযোগেই হয়েছে গোলটা। এ বক্তব্যের পেছনে যুক্তি অবশ্যই রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের ফুটবলারদের আক্রমণে গিয়েও ফলোআপে না যাওয়ার যে বদনাম আছে, শেষ পর্যন্ত সেই ফলোআপে ছিলেন বলেই সানজিদা গোলটা করতে পেরেছেন। কৃষ্ণার ক্রস কিরগিজ গোলরক্ষক গালকিনা ইরিনার হাত ফসকে বের হয়ে যায়। ফলোআপ থেকে এসে টোকা দিয়ে বল পাঠান জালে।
সানজিদা গোলের খাতা খুলেই থামেননি; রাইট উইং দিয়ে গতির ঝড় তুলে প্রতিপক্ষের লেফটব্যাককে ঘোল খাইয়েছেন বারবার। দুর্দান্ত গতির সঙ্গে বলের নিয়ন্ত্রণটাও ছিল অসাধারণ। এ ছাড়া উইঙ্গার হিসেবে কখন ক্রস করতে হবে, আর কখন কাটব্যাক; ফুটবলের এই মৌলিক জ্ঞানটাও তাঁর যথেষ্টই লক্ষ করা গেছে।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় গোলটা এসেছে সানজিদার ক্রস থেকেই। নিজের গোলের চেয়ে সতীর্থকে দিয়ে করানো গোলটাকেই এগিয়ে রাখছেন বাংলাদেশ দলের জয়ের নায়ক, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল জেতা, জিতেছি। গোল করেছি, গোল করিয়েছি। গোল করাতে পারলে আমার বেশি ভালো লাগে। আমার ক্রস থেকে কৃষ্ণা গোল করতে পারায় অনেক খুশি হয়েছি।’
মনে করিয়ে দেওয়া ভালো, ২০১৪ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক ফুটবলের বাছাইয়ে এশিয়ার সেরা ৭ নম্বর খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন ময়মনসিংহ জেলার কলসিন্দুরের এই মেয়ে। ২০১৬ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ বাছাইপর্বের বাধা টপকে বাংলাদেশকে চূড়ান্ত পর্বের টিকিট অর্জনেও অন্যতম অবদান ছিল তাঁর। এরপর মাঝে চোটের কারণে হয়েছিলেন নিজের ছায়া। দুঃসময় কাটিয়ে অনেক দিন পর পাওয়া গেল সেই চেনা সানজিদার ঝলক। কে জানে হয়তো নিজের সেরাটা জমিয়ে রেখেছেন নকআউট পর্বের জন্য।