সেমিফাইনালে ওঠার আনন্দে মাতোয়ারা রহমতগঞ্জের খেলোয়াড়েরা
সেমিফাইনালে ওঠার আনন্দে মাতোয়ারা রহমতগঞ্জের খেলোয়াড়েরা

সাত গোলের রোমাঞ্চে সেমিফাইনালে রহমতগঞ্জ

অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচে শেষ পর্যন্ত শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের হার। দলটিকে ৪–৩ গোলে হারিয়ে ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে পৌঁছে গেছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ক্লাব রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি।

২০১৯–২০ মৌসুমের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর স্বপ্ন এখন দেখতেই পারে রহমতগঞ্জ। সেবার ফেডারেশন কাপের ফাইনালে উঠেছিল দলটি। শিরোপার লড়াইয়ে অবশ্য বসুন্ধরা কিংসের কাছে হারতে হয় ৩–১ গোলে।

সেমিফাইনালে সেবার মোহামেডানকে হারিয়েছিল রহমতগঞ্জ। কাকতালীয় ব্যাপার, সেই মোহামেডান এবারও শেষ চারে রহমতগঞ্জের সামনে। ৬ জানুয়ারি হবে ৩৩তম ফেডারেশন কাপের দুটি সেমিফাইনাল ম্যাচ। আরেক সেমিফাইনালে সাইফ স্পোর্টিংয়ের প্রতিপক্ষ আজ আবাহনী লিমিটেড–শেখ জামাল লড়াইয়ের জয়ী দল।

দারুণ জয়ের উদযাপন রহমতগঞ্জের খেলোয়াড়দের

আজ কমলাপুর স্টেডিয়ামে ফেডারেশন কাপের তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে সব হিসাব পাল্টে দিয়েছে রহমতগঞ্জ। বলা ভালো, হিসাব পাল্টে দেন রহমতগঞ্জের ঘানার ফরোয়ার্ড ফিলিপ আজাহ। তাঁর জোড়া গোলে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় রহমতগঞ্জ। এরপর তাঁর পেনাল্টি আটকে শেখ রাসেলকে ম্যাচে রাখেন অভিজ্ঞ গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম।

দ্বিতীয়ার্ধে ব্যবধান ২-২ করেই ক্ষান্ত হয়নি শেখ রাসেল। এক গোল ব্যবধানে এগিয়েও যায় দলটি। কিন্তু অতিরিক্ত সময়ে ১১৮ মিনিটে খন্দকার আশরাফুল ইসলামের গোলে হৃদয় ভাঙে শেখ রাসেলের খেলোয়াড়দের।

২৮ মিনিটে রহমতগঞ্জকে প্রথম এগিয়ে নেন আজাহ। মাঝমাঠ থেকে সানডে সিজোবার থ্রু পাস ধরে বক্সে ঢুকে পড়েন তিনি, পেছনে ছুটছিলেন শেখ রাসেলের দুই ডিফেন্ডার। কিন্তু বেশি সময় না নিয়ে ডান পায়ের জোরালো শটে গোলরক্ষক আশরাফুলকে পরাস্ত করেন আজাহ।

৩৭তম মিনিটে ১–১ হতে পারত। কিন্তু বক্সের বাইরে থেকে পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড রুতি তাবারেজের শট পোস্ট ঘেঁষে বাইরে। ৪৩ মিনিটে ২–০ প্রায় হয়েই যাচ্ছিল। তিনবার চেষ্টা করেও বল জালে জড়াতে পারেনি রহমতগঞ্জ। শেষ পর্যন্ত এনামুল গাজীর নেওয়া শট গোললাইন থেকে ফিরিয়ে দেন সাদ উদ্দিন। পরপরই শেখ রাসেল ডিফেন্ডার রহমত মিয়ার ফ্রি–কিক দূরের পোস্টে লেগে ফিরে আসে।

ফেডারেশন কাপের ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন দেখছে রহমতগঞ্জ

প্রতি–আক্রমণে ২–০ করেছে রহমতগঞ্জ। নিজেদের অর্ধ থেকে ওয়ালী ফয়সাল বল বাড়ান সামনে। আজাহর গায়ের সঙ্গে লেগে থাকা সাদ উদ্দিন বল কেড়ে নিতে না পারেননি। বক্সের ভেতর থেকে ডান পায়ের বুলেট গতির শটে আজাহর দ্বিতীয় গোল।

৬৩ মিনিটে প্রায় ৩০ গজ দূরে দারুণ ফ্রি–কিকে গোল করেন শেখ রাসেলের ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড থিয়াগো এদুয়ারদো। ৮১ মিনিটে রহমতগঞ্জ বক্সে রুতি তাবারেজকে ফাউল করে বসেন সিয়োভুজ আসরোরভ। পেনাল্টিতে সহজেই কিরগিজস্তানের আইজার আখমাতোভ করে দিলেন ২-২।

এরপরেই ম্যাচ নিল নাটকীয় মোড়। ২–০ গোলে পিছিয়ে থাকা শেখ রাসেল এগিয়ে গেল ৩–২ গোলে। তাবারেজের পাস ধরে বক্সে ঢুকে এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে কোনাকুনি শটে গোল করলেন রাসেলের ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার এইলতন মাচাদো। গোলের উদ্‌যাপনে জার্সি খুলে হলুদ কার্ডও দেখেন মাচাদো। কিন্তু নাটকের তখনো বাকি।

৮৯তম মিনিটে আজাহর দূরপাল্লার শট শেখ রাসেল বক্সে নাসিরউদ্দিন চৌধুরীর পায়ে লাগে। সুযোগের অপেক্ষায় থাকা সানডে সিজোবার শটে ৩–৩। আবাহনীর সাবেক স্ট্রাইকার দুর্দান্ত গোল রহমতগঞ্জকে ম্যাচে ফেরান।

অতিরিক্ত সময়ে গোল নেই। টাইব্রেকারে ম্যাচ গড়াচ্ছে ভেবে নিয়ে গোলকিপার তুষারকে তুলে ওমর ফারুককে মাঠে পাঠান রহমতগঞ্জ কোচ গোলাম জিলানী। কিন্তু টাইব্রেকারের দরকার হয়নি। আশরাফুলের গোলে হতাশায় ডোবে শেখ রাসেল।

স্বাধীনতা কাপে শেষ আট থেকে বিদায় নিয়েছিল শেখ রাসেল। এবার ফেডারেশন কাপেও একই অভিজ্ঞতা। বড় বাজেটের দল মৌসুমের প্রথম দুটি টুর্নামেন্টেই ব্যর্থ।