বসুন্ধরা কিংসের হয়ে দারুণ সময় কাটছে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার রবসনের
বসুন্ধরা কিংসের হয়ে দারুণ সময় কাটছে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার রবসনের

সব ম্যাচে সেরা হতে চান রবসন

ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার বলতে চোখের সামনে যে রকম চেহারা ভেসে ওঠে, তাঁকে দেখে সে রকম মনে হবে না। মাঠের বাইরে দেখে মনে হবে ক্লাসের ফার্স্ট বয়।

বলা হচ্ছে, বসুন্ধরা কিংসের রবসন ডি সিলভার কথা। ফেডারেশন কাপে বসুন্ধরা কিংসের ম্যাচ শেষে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে দৃশ্যটা পরিচিতই হয়ে গেছে এই কয়েক দিনে। দুলকি চালে হেঁটে ম্যাচসেরার পুরস্কার নিতে যাচ্ছেন ব্রাজিলিয়ান এই উইঙ্গার।

প্রথাগত উইঙ্গার হলেও দলের প্রয়োজনে খেলানো হচ্ছে আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে। এর মধ্যে ব্রাজিলিয়ান সুরভি ছড়ানো গোল আছে দুটি। এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচ খেলে সব কটিতেই হয়েছেন ম্যাচসেরা। পুরস্কার অবশ্য একটি করে মোবাইল ফোন।

একটি মোবাইল ফোন ঢাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির চালককে দিয়েছেন। অন্য দুটিও নাকি দিয়ে দেবেন ক্লাবের স্টাফদের।

ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে আজ রবসনের দলের প্রতিপক্ষ আবাহনী লিমিটেড। এমন 'হাই ভোল্টেজ' ম্যাচের আগে রবসনের লক্ষ্য শুনলে আঁতকে উঠবেন আবাহনী সমর্থকেরা।

হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় প্রথম আলোকে রবসন বলেছেন, 'তিনটি ম্যাচে সেরা খেলোয়াড় হয়েছি। আমার লক্ষ্য সব ম্যাচেই সেরা হওয়া।'

অবশ্য শুধু নিজে সেরা হয়েই তৃপ্ত হতে চান না রবসন, দলের জয়টাও তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ, 'সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো দলের ভালো খেলা ও জয়।'

রবসন ভালো খেললে ছন্দে থাকে বসুন্ধরা

রবসনের ম্যাচসেরা হওয়া আর বসুন্ধরার ভালো খেলা অনেকটা একই যোগসূত্রে গাঁথা। বল পায়ে আসার আগ পর্যন্ত মাঠে রবসন খুব শান্ত থাকেন। কিন্তু বল একবার পায়ে এলেই যেন ফুল ফুটতে থাকে।

প্রথম স্পর্শেই খুঁজে পাওয়া যায় ব্রাজিলিয়ান ছাপ। ড্রিবলিংয়ে, পাসে ধরা দেয় লাতিন সৌন্দর্য। কোন সময় কোন অস্ত্র বের করবেন, বোঝা মুশকিল। শরীরের ঝাঁকি, ইনসাইড-আউটসাইড ডজ, পায়ের তলা (বুটের স্পাইক) কথা বলতে থাকে সমানে।

ইউটিউবের সৌজন্যে ঢাকায় রবসনের খেলা ব্রাজিলে বসেই উপভোগ করেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা।

প্রায় ১৬ হাজার কিলোমিটার দূরের এক দেশে রবসন ভালো খেলতে পারলেই তাঁদের আনন্দ, 'আমার সব ম্যাচই ব্রাজিল থেকে দেখেন পরিবারের সদস্য ও বন্ধুরা। আমার খেলা দেখে তাঁরা সবাই খুব খুশি। আমাকে অনুপ্রেরণাও দেয় তাঁরা।'

রবসনের নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ব্রাজিলের বিখ্যাত ক্লাব ফ্লুমিন্সের নাম। সেখান থেকেই ধারে এক বছরের জন্য গত সেপ্টেম্বরে যোগ দেন বসুন্ধরা কিংসে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকাতেই সংসার পেতেছেন স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে থিওকে নিয়ে।

২৮ অক্টোবর ছেলের প্রথম জন্মদিনও করেছেন ঢাকায়। স্ত্রী ও পুত্র নিয়ে ঘুরে এসেছেন কক্সবাজার। বাংলাদেশে তিন মাসের মতো থেকে 'কেমন আছ?', 'আস্তে আস্তে', 'মোটামুটি'—এসব এখন রবসনের ঠোঁটের আগায়।

আর বাংলাদেশ নিয়ে কী বলেন, সেটা রবসনের কাছেই শুনুন, 'তিন মাসের বেশি হয়েছে বাংলাদেশে এসেছি। সবচেয়ে খুশি যেটা করতে পেরে, তা হলো ভালো ফুটবল খেলা। ব্রাজিলের চেয়ে বাংলাদেশের সংস্কৃতি পুরোপুরি আলাদা। আমি বাংলাদেশের সংস্কৃতি খুব উপভোগ করছি। এখানে ভালোই লাগছে আমার।'

রবসনের পায়ে বল এলে ব্রাজিলিয়ান সৌরভ ছড়ায়

বাংলাদেশের জল-হাওয়ার সঙ্গে রবসনের দ্রুত মানিয়ে নিতে পারাটা বসুন্ধরা কোচ অস্কার ব্রুজোনের জন্য বড় এক স্বস্তি।

রবসনকে নিয়ে স্প্যানিশ কোচের মূল্যায়ন, 'আমি সাধারণত নির্দিষ্ট কোনো খেলোয়াড় নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করি না। তবু রবসনের ব্যাপারে বলছি। তার সবচেয়ে ভালো দিক বাংলাদেশে এসে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারা। সে বয়সে তরুণ, উদ্যমী ও কৌশলগতভাবে প্রকৃতিপ্রদত্ত খেলোয়াড়। তাঁর অন্তর্ভুক্তি আমার দলটাকে চাঙা করেছে।'