ফাইনালে উঠে চ্যাম্পিয়নও হয়েছিল ইতালি। কোচ মার্সেলো লিপ্পির হাতে বিশ্বকাপ
ফাইনালে উঠে চ্যাম্পিয়নও হয়েছিল ইতালি। কোচ মার্সেলো লিপ্পির হাতে বিশ্বকাপ

২০০৬ বিশ্বকাপ

সংবাদকর্মীদের পশ্চাৎদেশ দেখিয়ে ফাইনালে উঠেছিল ইতালি

জিনেদিন জিদানের ‘ঢুঁস কান্ডে’র জন্য ২০০৬ বিশ্বকাপ মনে রাখবেন অনেকে। শিরোপাজয়ী ইতালির নাম মনে রাখবে ইতিহাস। কিন্তু মানুষ কতটা মনে রেখেছে সে বিশ্বকাপের ইতালিকে?

জার্মানিতে এমনিতেই প্রচুর ইতালিয়ানের বসবাস আর সেবার বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিতও হয়েছিল জার্মানিতে। ফাবিও কানাভারো-ফ্রান্সেসকো টট্টিদের হোটেলে প্রবাসী ইতালিয়ানরা গিয়ে আবেগে কেঁদে ফেলতেন, বিশ্বকাপ জিতে ইতালিয়ানদের আনন্দের চূড়ায় নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করতেন তাঁরা। মার্সেলো লিপ্পির সেই ইতালি কথা রেখেছিল।

কিন্তু কীভাবে সম্ভব হয়েছে সেটা? সে গল্পই বললেন ইতালিকে ২০০৬ বিশ্বকাপ জেতানো কিংবদন্তি কোচ মার্সেলো লিপ্পি।

রোম বিশ্ববিদ্যালয়ে কাল কথা বলেন দুই বছর আগে কোচিং থেকে অবসর নেওয়া লিপ্পি। ফাইনালে ওঠার গল্পটা জানিয়েছেন ৭৪ বছর বয়সী এই সাবেক কোচ।

সেমিফাইনালে জার্মানিকে অতিরিক্ত সময়ের দুই গোলে ২-০ ব্যবধানে হারায় ইতালি। গোল করেছিলেন ফাবিও গ্রোসো ও আলেসান্দ্রো দেল পিয়েরো। এই ম্যাচের আগে একটি ঘটনা ইতালির গোটা স্কোয়াডকে গেঁথেছিল একসূত্রে। নিজের বক্তৃতায় লিপ্পি তাই বলেন, ‘সবচেয়ে দক্ষ লোকটাই সেরা কোচ হয় না, দলীয় চেতনাকে শীর্ষে নিয়ে যেতে পারেন যিনি, তিনি-ই সেরা।’

কোচিং থেকে অবসর নিয়েছেন লিপ্পি

লিপ্পির মুখেই শুনুন মজার সেই ঘটনা, ‘ডর্টমুন্ডের কাছাকাছি একটি জায়গায় আমরা সেমিফাইনালের দিন সকালে অনুশীলন করছিলাম। দেখলাম আশপাশের গাছ থেকে (ক্যামেরার) ফ্লাশের ঝলকানি আসছে। বুঝতে পারলাম, দলের ভেতরকার তথ্য বের করতে কিছু আলোকচিত্রি গাছের ভেতর লুকিয়ে ছবি তুলছে। বিষয়টি আমার খেলোয়াড়দের জানালাম। ওদের বললাম, ওদের (আলোকচিত্রি) থেকে উল্টো দিকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াও, এরপর আমি যখন বলব, তখন সামনে ঝুঁকে প্যান্ট (শর্টস) খুলে ফেলবে।’ অর্থাৎ আলোকচিত্রিদের পশ্চাৎদেশ প্রদর্শন করা আর কি!

জুভেন্টাসকে পাঁচবার সিরি আ এবং চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতানো এই কোচ জানান, খেলোয়াড়েরা বিনা বাক্যব্যয়ে লিপ্পির কথা শুনেছেন, ‘ওরা ঠিক তা-ই করেছে এবং এতে আমরা সবাই খুব মজা পেয়েছি, হেসেছি। কোনো ছবিই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয়নি, সবাই বুঝেছে কোনো আলোকচিত্রী ছিল না। কিন্তু আমরা খুব মজা পেয়েছিলাম, জয়ী দলের জন্য যা অপরিহার্য। দলের সবার মধ্যে মনের মিল না থাকলে কৌশলগত দক্ষতা কাজে আসে না।’

বিশ্বকাপ জয়ের তৃপ্তির সঙ্গে কোনোকিছুর তুলনা নেই বলে মনে করেন লিপ্পি

লিপ্পিকে সর্বকালের সেরা কোচদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রথম কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন, ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং এশিয়ান ক্লাব ফুটবলের চ্যাম্পিয়নস লিগও জিতেছেন প্রথম কোচ হিসেবে। জিতেছেন উয়েফা সুপার কাপ ও চাইনিজ সুপার লিগও।

দীর্ঘ কোচিং ক্যারিয়ারের অভিজ্ঞতায় লিপ্পি জানালেন, দেশকে বিশ্বকাপ জেতানোর মতো আনন্দ আর কিছুতেই নেই, ‘আমি অনেক জিতেছি, কিন্তু বিশ্বাস করুন দেশের হয়ে বিশ্বকাপ জেতার মতো তৃপ্তি আর কিছুতেই নেই। চ্যাম্পিয়নস লিগ কিংবা সিরি আ-র সঙ্গে এর তুলনা হয় না। যে আবেগ উপহার দিয়েছিল ইতালিয়ানরা তা অবিশ্বাস্য।’

কোন আবেগ? লিপ্পি বললেন, ২০০৬ বিশ্বকাপেরই আরেক গল্প, ‘আজ্জুরিরা (ইতালি জাতীয় দল) ২০০৬ সালে জার্মানিতে বিশ্বকাপ জেতে, যেখানে অনেক ইতালিয়ানের বসবাস। বিশ্বাস করুন, অনেক ইতালিয়ান (দলের) হোটেলে এসে কেঁদে বলতেন, আমাদের আনন্দের এই মুহূর্তটা এনে দাও। আমরা সেটাই করেছি। অসাধারণ ব্যাপার ছিল। আর হ্যাঁ, এ ধরনের টুর্নামেন্টে কিছুটা সৌভাগ্যের পরশও প্রয়োজন। আমরা কিন্তু সেমিফাইনালের আগে বড় দলের মুখোমুখি হইনি।’