দুই দলের আগেই দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত হওয়ায় কালিনিনগ্রাদে কাল বেলজিয়াম-ইংল্যান্ড নামল নির্ভার হয়ে। তাই বলে এতটাই নির্ভার, জিততে চাইবে না ম্যাচটা? না, ম্যাচ শেষ পর্যন্ত ১-০ গোলে জিতেছে বেলজিয়াম। কিন্তু হেরে বেশি লাভ হয়েছে ইংল্যান্ডের। সেমিফাইনালের আগ পর্যন্ত ইংলিশরা এড়াতে পারবে চার সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে। হেরেই যখন বেশি লাভ, কে আর ম্যাচ জিততে চায়!
ক্রিকেটে যেমন কথায় কথায় ‘ফিক্সিং’ শব্দটা চলে আসে, ফুটবলে ততটা নয়। কালিনিনগ্রাদে বেলজিয়াম-ইংল্যান্ড ম্যাচটা তাই আর দশটা ম্যাচের দৃষ্টিতে দেখতে হবে। তবে ইংল্যান্ড-বেলজিয়াম যে নিশ্চিন্তে ম্যাচটা খেলেছে, এমন নির্ভার ম্যাচ কি তারা বিশ্বকাপে খেলেছে কখনো? দুই দলের আগেই দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত হওয়ায় নির্ভার তারা হতেই পারে। কিন্তু দুই দল কি জোর গলায় বলতে পারবে, গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ভীষণ তাগিদ নিয়ে তারা খেলতে নেমেছে! এত দল যেন জিতে নাখোশ, অন্য দল হেরে গিয়ে খুশি!
তাগিদ থাকবেই-বা কী করে? কালিনিনগ্রাদের ম্যাচটার আগেই বাকি গ্রুপগুলোর চ্যাম্পিয়ন, রানার্সআপ ঠিক হয়ে গেছে। শেষ ষোলো থেকে বিশ্বকাপের বাকিটুকু কোন দল কোন পথে যাবে, জানা হয়ে গেছে সেটাও। পথটা পরিষ্কার হয়ে যাওয়ায় বোঝা যাচ্ছে, ইংল্যান্ড-বেলজিয়ামের মধ্যে যে হারবে, তাদেরই লাভ বেশি। শেষ ষোলোতে যে পাশে চার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পড়েছে, সেই পাশটা এড়ানো যাবে। এমন ম্যাচে আর কোন দল জিততে চাইবে!
দুই দলের একাদশ মিলিয়ে তাই ১৭টি পরিবর্তন। তারকা ফুটবলারদের বেশির ভাগই বেঞ্চে! গোল করার তাড়না দুই দলের আসলেই ছিল কি না, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। তারপরও যে বেলজিয়ামের হয়ে আদনান ইয়ানুজাই ৫১ মিনিটে একটা গোল করে ফেললেন, তাতে তাঁর দল কতটা খুশি, সে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে!
ম্যাচ জিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন বেলজিয়াম শেষ ষোলোতে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে জাপানকে। রানার্সআপ হয়ে ওঠা ইংল্যান্ডকে খেলতে হবে কলম্বিয়ার বিপক্ষে। ভাবছেন, বেলজিয়ামই তো তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষ পেয়েছে। শেষ ষোলোর জন্য হয়তো ঠিক আছে। কিন্তু দৃষ্টি যদি আরও দূরে রাখেন, বেলজিয়ামকে ফাইনাল পর্যন্ত যেতে হলে কোয়ার্টার ফাইনালে সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ ব্রাজিল। সেমিফাইনালে গেলে প্রতিপক্ষ হতে পারে ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে বা পর্তুগালের মধ্যে কোনো এক দল। আর ইংল্যান্ড? দ্বিতীয় রাউন্ড পেরোলে কোয়ার্টার ফাইনালে সুইডেন-সুইজারল্যান্ডের একটি। এই বাধা টপকাতে পারলে সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ হতে পারে স্পেন। সেমিফাইনালের আগে সাবেক কোনো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের সঙ্গে খেলার সুযোগ নেই।
ম্যাচ শেষে অবশ্য জিততে না চাওয়ার ব্যাপারটা সরাসরি স্বীকার করেননি ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেট, ‘আমার অনেক নতুন খেলোয়াড় সুযোগ পেতে মরিয়া হয়ে ছিল। আমিও চেয়েছি, যারা এখনো খেলার সুযোগ পায়নি, ওদের দেখে নিতে।’ তবে সরাসরি স্বীকার না করলেও ব্যাপারটা যে মাথায় ছিল, সেই ইঙ্গিত মিলল সাউথগেটের কথায়, ‘কখনো কখনো আপনার দৃষ্টিটা একটু প্রসারিত করে এমন একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে, সেটা তাৎক্ষণিকভাবে সমালোচিতও হতে পারে। কিন্তু যখন আপনিই দলের নেতা বা কোচ, সিদ্ধান্তটাও আপনাকেই নিতে হবে।’