আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ জিতেছে—প্রিমিয়ার লিগে এই মৌসুমে তাদের পারফরম্যান্স বিচারে অবাক করার মতোই খবর। তবে যখন শুনবেন, আরামবাগের জয় এসেছে শেখ জামাল ধানমন্ডির বিপক্ষে ৩–১ গোলে, তখন এটি ‘অঘটন’ না বলে পারা যায় না।
আজকের আগে প্রিমিয়ার লিগে ১৪ ম্যাচ খেলে অপরাজেয় ছিল শেখ জামাল। ৯ জয় ও ৫ ড্রয়ে মোট ৩২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দুইয়ে তারা। এর আগে ১৫ ম্যাচে আরামবাগ মাত্র মাত্র দুই ড্র পেয়েছে। বাকি ১৩ ম্যাচ হেরে টেবিলের তলানিতে তাদের অবস্থান।
এমন পরিসংখ্যান নিয়ে দুটি দল মুখোমুখি হলে জয়ের সম্ভাবনা কোন দলের? উত্তরটা সহজেই অনুমেয়। আরেকটি তথ্য জানিয়ে দেওয়া যাক, লিগের প্রথম পর্বে আরামবাগকে ৬–০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল শেখ জামাল।
কিন্তু এসব তথ্য–উপাত্ত উড়িয়ে লিগে আজ প্রথম জয় তুলে নিয়েছে আরামবাগ। তা–ও আবার এক গোলে পিছিয়ে থাকার পর ৩ গোল দিয়ে!
প্রায় পূর্ণ শক্তির দল নিয়েই মাঠে নেমেছিল শেখ জামাল। তিন হলুদ কার্ডের খড়গে ছিলেন না শুধু উজবেকিস্তানের প্লে–মেকার ভালি জনভ ওতাবেক। তবুও বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে ছিল তারাই। কিন্তু গোলের সুযোগ হাতছাড়া ও গোলরক্ষক জিয়াউর রহমানের ভুলের খেসারত দিয়েছে ধানমন্ডির দলটি।
ক্লাবে নতুন কোচ জাহিদুর রহমানের অধীনে লিগের দ্বিতীয় পর্বের শুরু থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা দিচ্ছিল আরামবাগ। আগের ম্যাচে মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছিল তারা।
ম্যাচের ১৫ মিনিটে গাম্বিয়ান পা ওমর জোবের গোলে এগিয়ে যায় শেখ জামাল। রাইট ব্যাক মনির মনির হোসেনের লম্বা পাস প্রতিপক্ষ দুই সেন্টার ব্যাকের মধ্যে থেকে বুকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দুর্দান্ত ভলিতে জালে জড়িয়েছেন জোবে। এরপর ম্যাচ শুধু আরামবাগের।
প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে ফ্রি–কিকে দুর্দান্ত গোল করে আরামবাগকে সমতায় ফিরিয়েছেন উজবেকিস্তানের ইসলমজন আবদুকোদিরভ। লিগে এটি তাঁর প্রথম গোল। আবদুকোদিরভের শট সরাসরি জালে জড়ায়। দ্বিতীয়ার্ধে আরও দুটি গোল। ৫৪ মিনিটে ওমর ফারুকের গোলে এগিয়ে যায় আরামবাগ। রাহাদ মিয়ার লম্বা থ্রো–ইনে হেডে ‘ক্লিয়ার’ করতে গিয়ে কাঁধে বল লেগে পেছনে গোলমুখে যায়। ফিরতি বলে মাথা ছুঁইয়ে গোল করেন উমর।
২ মিনিট পরই শেখ জামালের গোলরক্ষক জিয়াউর রহমানের ভুলের সুযোগে ব্যবধান ৩–১ করেন নিহাত জামান। একটি থ্রু বল দখলের লড়াইয়ে অহেতুক পোস্ট ছেড়ে বের হয়ে আসেন জিয়াউর। বলের নাগাল পেতে ব্যর্থ হন তিনি।
বল দখলে চলে যায় আবদুকোদিরভের কাছে। ডান প্রান্ত থেকে নিহাত জামানকে পাস দিলে এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বাঁ পায়ের শটে গোলটি করেন নিহাত। লিগে এই তরুণ ফুটবলারের ষষ্ঠ গোল। এই গোল হজমের পর গোলরক্ষক জিয়াউরকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে পাঠানো হয় সামিউল ইসলামকে।
৩–১ গোলে পিছিয়ে পড়ে বেশ কয়েকবার ব্যবধান কমানোর সুযোগ পেয়েছে শেখ জামাল। ৭৫ মিনিটে শাকিল আহমেদের ভলি ডান দিকে ঝাঁপিয়ে রক্ষা করেন আরামবাগ গোলরক্ষক আবুল কাশেম। পরের মিনিটে জাহিদ হোসেনের ক্রসে গোল করার সুযোগ পেয়েছিলেন সলোমন কিং। কিন্তু তাঁর শট পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়। ম্যাচ শেষে আরামবাগ খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের উদযাপন দেখে মনে হচ্ছিল, এই জয় যেন ঈদের উপহার!
এই জয়ে ১৫ ম্যাচে ৩২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলে তৃতীয় স্থানেই থাকল শেখ জামাল। ১৬ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তলানিতেই আরামবাগের অবস্থান। ১৩ দলের টেবিলে ১২তম অবস্থানে থাকা ব্রাদার্স ইউনিয়নের পয়েন্টও ৫। তবে আরামবাগের চেয়ে গোল ব্যবধানে এগিয়ে ব্রাদার্স।