>সুইসদের বিপক্ষে ড্র দিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করেছে ব্রাজিল। শিষ্যদের সন্তোষজনক ফুটবল না খেলার পেছনে ভীতি ও শঙ্কার কথা জানালেন ব্রাজিল কোচ তিতে
আবারও শঙ্কা আর ভীতির বুদ্বুদ নেইমার-মার্সেলোদের ঘিরে। তবে কি ব্রাজিল ৭-১ গোলে হারের সেই দুঃস্বপ্ন কাটিয়ে উঠতে পারেনি! ব্রাজিল কোচ তিতে কথাটা সরাসরি স্বীকার করেননি। তবে অস্বীকার করেননি ভীতির ব্যাপারটিও।
গত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে গোটা ব্রাজিলকে কাঁপিয়ে ও কাঁদিয়ে দেওয়া সেই হার এখন অতীত। অন্তত সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে কালকের ম্যাচের সঙ্গে সেই ম্যাচের কোনো যোগসূত্র নেই। কিন্তু ব্রাজিল কোচ তিতে জানালেন, গোল করার আগে শিবিরে ভীতি ছিল, ছিল শঙ্কাও। এই ভীতি তাহলে কিসের?
সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে পয়েন্ট খোয়ানোর পর সংবাদ সম্মেলনে তিতের ব্যাখ্যা, ‘গোল করার আগ পর্যন্ত অনেক চাপ ছিল। অনেক শঙ্কাও ছিল। এসব আমাদের খেলায় অনূদিত হয়েছে। আমরা নিখুঁত ফুটবল খেলতে পারিনি।’
সুইসদের বিপক্ষে ফিলিপে কুতিনহোর দুর্দান্ত গোলে রাশিয়া বিশ্বকাপ শুরু করেছিল ব্রাজিল। অনেকেই ভেবেছিলেন, এই তো সেই চেনা ছন্দের ব্রাজিল! কিন্তু ম্যাচ গড়িয়ে চলার সঙ্গে সেই ছন্দও ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেছে। তবে ২০ মিনিটে কুতিনহোর দূরপাল্লার গোলের আগেও তিতের শিষ্যরা যে খুব ছন্দে ছিলেন, সেটা বলার উপায় আছে কি!
অনেকেই কিন্তু একটা যোগসূত্র দেখছেন। গত বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকে কালকের ম্যাচ—বিশ্বকাপে এ তো ব্রাজিলের মাত্র তৃতীয় ম্যাচ। অর্থাৎ সেই দুঃস্বপ্নের পর বিশ্বকাপে কালই দ্বিতীয়বারের মতো মাঠে নেমেছিল ব্রাজিল। ভীতিটা তাই অমূলক কিছু নয়। সেমিফাইনালের পর গত বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচেও তো হল্যান্ডের বিপক্ষে ৩-০ গোলে হেরেছিল ব্রাজিল! কিন্তু চার বছর আগের ভুতুড়ে অভিজ্ঞতার প্রভাব কি এবারও পড়ার কথা? এমন নয় যে সুইসদের বিপক্ষে ব্রাজিল সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেনি। কিন্তু বক্সের সামনে গিয়ে নেইমাররা সব গড়বড় করে ফেলেছেন। সেটা বোধ হয় ওই শঙ্কা থেকেই। সেই হারের পর বিশ্বকাপে ব্রাজিলের প্রথম ম্যাচ—তিতের কথায় কিন্তু এই ইঙ্গিতটা ধরা পড়ে, ‘বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামলে এই শঙ্কাটা থাকে। এমনকি কোচ নিজেও শঙ্কিত ছিল।’
রাশিয়া বিশ্বকাপের চূড়ান্তপর্বে সবার আগেই জায়গা করে নিয়েছিল ব্রাজিল। সেটা স্বাগতিক দল হওয়ার জন্য। এই কোচের অধীনে টানা জয়ের রেকর্ডও গড়েছেন নেইমাররা। কিন্তু বিশ্বকাপে এসেই মুখ থুবড়ে পড়ার ইঙ্গিতটা তাঁরা দিয়ে রাখলেন প্রথম ম্যাচেই! এটিই বুঝি বিশ্বকাপে চাপ, আর তার সঙ্গে যদি যোগ হয় বিশ্বকাপের একটি ম্যাচ আগেই ৭ গোল খাওয়ার বিস্বাদ, তাহলে সবকিছু গুলিয়ে ফেলার ব্যাপার থাকতেই পারে।
৫০ মিনিটে স্টিভেন জুবেরের সমতাসূচক গোলটা মনে করে দেখুন। ব্রাজিলের বক্সের মধ্যে সম্পূর্ণ ‘আন মার্কড’ অবস্থায় হেডে গোল করেছেন। এটা থিয়াগো সিলভা-দানিলোদের রক্ষণভাগের গুলিয়ে ফেলা নয় তো কী? প্রতিপক্ষের বক্সের সামনে গিয়ে নেইমারদের বল হারানো, মাঝমাঠে সুইসদের আধিপত্য আর গতির সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে ‘ডেড বল’ পরিস্থিতিতে আসল কাজটাই ভুলে গিয়েছিল তিতের রক্ষণভাগ।
কোচ তাই শিষ্যদের আবারও মনে করিয়ে দিলেন, ‘বিশ্বকাপে প্রায় ৪৫ শতাংশ গোল হয় সেটপিস থেকে।’ পাশাপাশি স্বীকারও করে নিলেন, ‘অবশ্যই এই ফলে আমি খুশি নই। জয় চেয়েছিলাম। কিন্তু শঙ্কা আর ভীতির সঙ্গে পেরে উঠতে পারিনি।’
বিশ্বকাপে ব্রাজিলের সেই সাত গোল হজম ছাড়াও আরেকটি শঙ্কা আছে, সেটা সাম্প্রতিক কালেরই—এই বিশ্বকাপে টপাটপ পা পিছলে পড়ছে বড় দলগুলো। স্পেনকে আটকে দিল ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো–নির্ভর পর্তুগাল। আইসল্যান্ডের বিপক্ষে পা কাটল লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার। আর মেক্সিকো তো কাল জার্মানদের ওপর দিয়ে ‘ভূমিকম্প’ই বইয়ে দিয়েছিল!
ব্রাজিল কিন্তু শুরুতেই ভালো খেলার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ল। সেটা যদি শঙ্কার কারণে হয়ে থাকে, তাহলে ‘মিনেইরো ট্র্যাজেডি’র ভূত কিন্তু এবারও থেকে গেছে তিতে-শিষ্যদের কাঁধে!