রোনালদো কী খান-না খান, ঘুমোন কতটুকু

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ত্রিশ পেরিয়ে ধরে রেখেছেন অবিশ্বাস্য ফিটনেস। ছবি: ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো টুইটার পেজ
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ত্রিশ পেরিয়ে ধরে রেখেছেন অবিশ্বাস্য ফিটনেস। ছবি: ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো টুইটার পেজ
৩৪ বছর বয়সেও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ফিটনেস কী দুর্দান্ত! গতি, ক্ষিপ্রতা ও দক্ষতা ধরে রেখেছেন আগের মতোই। ফিটনেস ধরে রাখতে রোনালদো কেমন রুটিন মেনে চলেন, জানাচ্ছে মেইল অনলাইন


অর্ধযুগ আগে অবিশ্বাস্য তথ্যটি জানিয়েছিল ক্যাস্ট্রল অ্যানালাইসিস। হেড করতে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর লাফের উচ্চতা বাস্কেটবলে গড়পড়তা খেলোয়াড়দের তুলনায় বেশি। লাফ দিয়ে ওঠার সময় ‘ফাইভ জি’ সমমানের মহাকর্ষীয় বল উৎপাদিত হয় রোনালদোর শরীরে—যা শূন্যে লাফানো অবস্থায় চিতার শরীরে উৎপাদিত শক্তির পাঁচ গুণ বেশি। তখন রোনালদোর বয়স ছিল ২৮ বছর। খুব স্বাভাবিকভাবেই এ ছয় বছরে তাঁর ক্ষিপ্রতা ও শক্তি এবং গতি কমার কথা। কিন্তু রোনালদোর বেলায় তা কতটুকু সত্য?

৩৪ বছর বয়সী রোনালদো এখনো অনেক ক্ষেত্রে টেক্কা দিচ্ছেন তরুণদের। ফিটনেস ধরে রাখতে বহু আগেই রোজকার জীবনের খোলনলচে পাল্টে ফেলেছেন জুভেন্টাস তারকা। এতটাই যে, তাঁর রুটিন দেখলে চমকে যাবেন ভীষণ ফিটনেস ও খাদ্য সচেতন ব্যক্তিও। আধুনিক ফুটবলের এ সময়ে ৩৪ বছর বয়সী কোনো ফরোয়ার্ড বিশ্বসেরাদের কাতারে রাজত্ব করে যাবেন, তা ভাবতেও বিস্ময় জাগার কথা। কিন্তু রোনালদো দিনের পর দিন এ কাজটাই করে যাচ্ছেন। বেশ কিছু কৌশলের ওপর নির্ভর করে নিজের ফিটনেসকে বাকিদের জন্য ঈর্ষণীয় মাত্রায় তুলেছে পর্তুগিজ তারকা।

অ্যাথলেটদের শরীরের ক্রিয়া-কর্ম একটু অন্যরকম হয়ে থাকে। তাঁদের বিপাক ক্রিয়া সাধারণের তুলনায় দ্রুত হয়ে থাকে। রোনালদো তাই খেয়ে থাকেন অল্প তবে বেশি সংখ্যকবার। মানে, তিন থেকে চার ঘণ্টা পর পর খেয়ে থাকেন, সব মিলিয়ে দিনে প্রায় ছয় বার। সঠিক মাত্রায় খাদ্যাভ্যাস রোনালদোর শক্তিশালী ও চর্বিহীন পেশির নিয়ামক। এ জন্য ব্যক্তিগত এক পুষ্টিবিদ রেখেছেন রিয়াল মাদ্রিদের দিনগুলো থেকে। শস্যজাতীয় খাবার, টাটকা ফল ও মাছ বেশি খেয়ে থাকেন রোনালদো। চর্বিহীন প্রোটিন সংগ্রহ করেন তলোয়ার মাছ (সোর্ডফিশ) ছাড়াও নানা পদের সামুদ্রিক মাছ থেকে—যেমন কড মাছ। আর হ্যাঁ, মাছগুলো সব সময় টাটকা থাকতে হবে, হিমাগারের হলে চলবে না।

ফিটনেস ধরে রাখতে খাবার নিয়ে ভীষণ সচেতন রোনালদো। ছবি: মেইল অনলাইন

রোনালদোর খাবারের পাত্রে নানা রকম সালাদও থাকে। সকালের নাশতায় থাকে পনির, হ্যাম (লবণ মাখানো শূকরের মাংস), কম চর্বির দই, ফল-ফলাদি। সকালের নাশতায় অ্যাভোকাডো ফলের টোস্টও খেয়ে থাকেন। পাঁচবারের বর্ষসেরা এ ফুটবলারের কাছে জাদুকরী খাবার হলো মুরগির মাংস—প্রোটিনে ভরপুর কিন্তু চর্বি কম। রোনালদোর অনুশীলন ও খাদ্যাভ্যাসের ধরন নিজের চোখে দেখেছেন প্যাট্রিক এভরা। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের দিনগুলোয় সতীর্থ ছিলেন দুজন। রোনালদোর বাসায় কাটানো মুহূর্ত স্মরণ করে এভরা একবার কৌতুক করে বলেছিলেন, ‘রোনালদো তাঁর বাসায় নিমন্ত্রণ জানালে প্রত্যাখ্যান করার অনুরোধ করব। কারণ ছেলেটা একটা যন্ত্র, কখনো অনুশীলন থামায় না। তার বাসায় যখন গেলাম, অনুশীলন করায় ভীষণ ক্লান্ত ছিলাম। কিন্তু খাবার টেবিলে দেখলাম শুধু একটা সালাদ, মুরগির বুকের মাংস আর পানি, কোনো পানীয় নেই।’

বিরাট কোহলিকে মনে পড়ছে নিশ্চয়ই? ভারতের এ তারকা ব্যাটসম্যানও ফিটনেস-ফ্রিক। খাবার নিয়ে ভীষণ খুঁতখুঁতে। পানীয় ও রেড মিটের ব্যাপারে মিল রয়েছে দুজনের, দুজনেই কোমল পানীয় ও পশুর লাল মাংস বর্জন করেন। রোনালদো হিমায়িত খাবারও এড়িয়ে চলেন। তাঁর ঘুমের রুটিনও একটু আলাদা। টানা আট ঘণ্টা না ঘুমিয়ে সময়টা ভেঙে নেন। রোনালদোর ঘুমের সময় নিয়ে কাজ করা প্রফেসর লিটিলহেলসের মতে, পেশাদার অ্যাথলেটদের সারা দিনে ৯০ মিনিট করে পাঁচবার বিশ্রাম নেওয়া আদর্শ। রোনালদো এ সূচি মেনে চলেন ছুটির দিনেও।