ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ফেরার পর প্রথম মৌসুম কেমন কেটেছে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর?
শুধু গোলের হিসাবে গেলে ব্যক্তিগতভাবে একেবারে খারাপ কাটেনি। সব টুর্নামেন্ট মিলিয়ে ৩৭ ম্যাচে ২৪ গোল—অন্য অনেকের জন্য বেশ ভালো, রোনালদোর নামের পাশে হয়তো অতটা মানানসই নয়। কিন্তু বয়স তাঁর ৩৭ হয়ে গেছে—এটি মাথায় রাখলে গোলের এই সংখ্যাকেও ভালোই বলতে হয়।
কিন্তু রোনালদোর গোলগুলোও ইউনাইটেডকে উদ্ধার করতে পারল কই! মৌসুমে কোনো শিরোপা তো জেতাই হচ্ছে না, লিগে সেরা চারে থেকে আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগও খেলা হচ্ছে না ইউনাইটেডের। চ্যাম্পিয়নস লিগের বাছাই বা মূল—কোনো পর্বেই খেলেননি, এমন মৌসুম ক্যারিয়ারে কখনোই আসেনি রোনালদোর।
এমন অবস্থায় রোনালদো আগামী মৌসুমে ইউনাইটেডে আর থাকবেন কি না, এ নিয়ে যখন চারদিকে গুঞ্জন, এর মধ্যে নতুন খবর আসছে ইংল্যান্ড থেকে। আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা না পাওয়ায় দলের সবার বেতন কমাতে যাচ্ছে ইউনাইটেড। এর মধ্যে রোনালদোর সাপ্তাহিক বেতন কমবে প্রায় এক লাখ পাউন্ড, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় এক কোটি টাকা।
একের পর এক হতাশায় মোড়ানো মৌসুমের শেষ দিকে এসে গতকাল আরেক লজ্জা উপহার পেয়েছে ইউনাইটেড। যে ব্রাইটনকে আগের সাত ম্যাচেই হারিয়েছে, তাদের মাঠেই ৪-০ গোলে উড়ে গেছে রেড ডেভিলরা। রোনালদো, ফার্নান্দেজদের আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলা যে হচ্ছে না, সে তো অনেক আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিল, গতকালের হারে অঙ্কের হিসাবেও সেটি নিশ্চিত হয়ে গেছে।
চ্যাম্পিয়নস লিগ কী, আজ ওয়েস্ট হাম নরউইচকে ৪-০ গোলে হারানোর পর উয়েফার দ্বিতীয় সারির টুর্নামেন্ট ইউরোপা লিগেও ইউনাইটেডের খেলা সংশয়ে পড়ে গেছে। এই মুহূর্তে পয়েন্ট তালিকার ছয় নম্বরে থাকা ইউনাইটেডের পয়েন্ট ৩৭ ম্যাচে ৫৮, সাতে থাকা ওয়েস্ট হামের ৩৬ ম্যাচে ৫৫।
ইউনাইটেড বাকি ম্যাচটি জিতলে এবং ওয়েস্ট হাম নিজেদের বাকি দুই ম্যাচে জিতলে হ্যামার্সের পয়েন্ট ইউনাইটেডের সমানই থাকবে, সে ক্ষেত্রে গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকা ওয়েস্ট হামই থাকবে ছয় নম্বরে, ইউনাইটেড হবে সপ্তম। প্রসঙ্গত, ইংলিশ লিগের প্রথম চার দল খেলবে আগামী মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগে, পঞ্চম ও ষষ্ঠ দল ইউরোপা লিগে আর সপ্তম দলের জায়গা হবে উয়েফার তৃতীয় সারির টুর্নামেন্ট কনফারেন্স লিগে।
চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা না পাওয়ার ব্যর্থতার প্রভাব পড়ছে রোনালদোদের বেতনে। ইংরেজি দৈনিক ডেইলি মেইলকে সূত্র হিসেবে জানিয়ে স্প্যানিশ দৈনিক মার্কা লিখেছে, চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা না পাওয়ায় খেলোয়াড়দের বেতন ২৫ শতাংশের মতো কমিয়ে দিতে যাচ্ছে ইউনাইটেড।
এর মধ্যে রোনালদোর সাপ্তাহিক বেতন কমতে যাচ্ছে প্রায় এক লাখ পাউন্ড। বর্তমানে সপ্তাহে ৩ লাখ ৭৮ হাজার পাউন্ড বেতন রোনালদোর, সেটি কমে ২ লাখ ৮৮ হাজার হতে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছে ডেইলি মেইল। গোলকিপার দাভিদ দে হেয়ার বেতন ৩ লাখ ৭৫ হাজার পাউন্ড থেকে কমে হবে ২ লাখ ৮১ হাজার।
এই খবরের পর রোনালদোর ইউনাইটেডে না থাকার গুঞ্জন যে আরও বাড়বে, এ নিয়ে সংশয় সামান্যই। অনেক আগে থেকেই গুঞ্জন, আগামী মৌসুমে ইউনাইটেড চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা না পেলে রোনালদো হয়তো ক্লাবে থাকবেন না। এর মধ্যে আরেক গুঞ্জন শোনা যায়, আগামী মৌসুমে ইউনাইটেডে যোগ দিতে যাওয়া নতুন কোচ এরিক টেন হাগের পরিকল্পনায় রোনালদোর জায়গা নেই। সব মিলিয়ে আগামী মৌসুমে রোনালদোর ইউনাইটেডে থাকা নিয়ে ধোঁয়াশা অনেক।
এর মধ্যে গতকাল ব্রাইটনের মাঠে ম্যাচ শেষে ক্যামেরায় দেখা যায়, রোনালদো ম্লান হাসছেন, যে হাসি আনন্দের নয়, বরং গ্লানির। দলের অবস্থা দেখে অসহায় হাসি আর কি! ক্যামেরায় সেটি দেখার পর ইউনাইটেডের সাবেক খেলোয়াড় ডিয়ন ডাবলিন স্কাই স্পোর্টসকে বলছিলেন, ‘আমি ওকে দেখে ভাবছি, ও কি সতীর্থদের অবস্থা দেখে হাসছে? দলের এই পরিস্থিতি দেখে হাসছে? ব্যাপারটা অনেকটা “কী হচ্ছে এসব, এটা কি ইউনাইটেডই?” ওর হাসিটাই আজকের দিনের সবকিছু বলে দেয়।’
সেখান থেকে ইউনাইটেডে আগামী মৌসুমে রোনালদোর থাকা-না থাকা নিয়ে ডাবলিনের বিশ্লেষণ, ‘জানি না রোনালদো কোথায় যাবে। ও কি ইতালি বা স্পেনে ফিরবে? কিছুই জানি না আমি, তবে আমার মনে হয় না অবিশ্বাস্য কিছু না ঘটলে ও ইউনাইটেডে থাকবে। সত্যি বলতে ওর থাকতে চাওয়ার কোনো কারণ দেখি না আমি। নতুন কোচ এসে যদি বলে, “আমাদের হাতে ৩০ কোটি ইউরো আছে, নতুন মানসম্পন্ন খেলোয়াড় আসছে”...এমনটা ছাড়া ওর ইউনাইটেডে থাকার সম্ভাবনা দেখি না আমি।’
ইংলিশ আরেক দৈনিক ডেইলি মিরর জানাচ্ছে, ইউনাইটেডে থাকা-না থাকার ব্যাপারে তাঁর ‘দ্বিতীয় বাবা’ ইউনাইটেডের কিংবদন্তি কোচ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের সঙ্গে নিয়মিতই আলাপ হচ্ছে রোনালদোর। ফার্গুসন অবশ্য রোনালদোকে ইউনাইটেডে ‘লিগ্যাসি’ গড়তে ক্লাবে থেকে যাওয়ার পরামর্শই দিচ্ছেন বলে জানাচ্ছে পত্রিকাটি।