অভিযোগটা মারাত্মক। এভারটনের সেই ভক্তের ফোন শুধু আছাড় মেরে ভাঙেননি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, ছেলেটিকে নাকি ‘আঘাত’ করে ‘দাগ ফেলে দিয়েছেন’ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পর্তুগিজ তারকা—দাবি এভারটনের সেই সমর্থক জেক হার্ডিংয়ের মায়ের।
১৪ বছর বয়সী হার্ডিং প্রতিবন্ধী বলেও জানালেন তার মা। মার্সিসাইড পুলিশ এদিকে তদন্ত শুরু করেছে। মুঠোফোন ভেঙে রোনালদো কোনো অপরাধ করেছেন কি না, তা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ।
এভারটনের মাঠে গত শনিবার লিগে ১-০ গোলে হারে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। লিগের সেরা চারে থেকে ইউনাইটেডের আগামী মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার স্বপ্ন এই হারে বড় ধাক্কাই খেয়েছে। মাঠ ছাড়ার সময় আবেগটা আর ধরে রাখতে পারেননি রোনালদো।
টানেলে ঢোকার পথে গ্যালারি থেকে তাঁর দিকে হাত বাড়ানো এক এভারটন-সমর্থকের মুঠোফোন টেনে নিয়ে আছাড় মেরে ভেঙে ফেলেন। এই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সমালোচনা শুরু হওয়ার পর ক্ষমাও চান রোনালদো।
মার্সিসাইড অঞ্চলের সংবাদমাধ্যম ‘লিভারপুল ইকো’র সঙ্গে কথা বলেছেন এভারটনের সেই ভক্ত জেক হার্ডিংয়ের মা সারা কেলি। ১৪ বছর বয়সী হার্ডিং মায়ের সঙ্গে গুডিসন পার্কে গিয়েছিল গ্যালারি থেকে প্রথমবারের মতো নিজের প্রিয় ক্লাবের খেলা দেখতে। প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়েরা যে টানেল দিয়ে ড্রেসিংরুমে যান, তার পাশেই পার্ক এন্ডে বসেছিলেন মা ও ছেলে।
সারার দাবি, ‘ম্যাচ শেষে ইউনাইটেডের খেলোয়াড়েরা ড্রেসিংরুমে ফিরছিলেন। আমরা পার্ক এন্ডে বসেছিলাম। খেলোয়াড়েরা টানেল দিয়ে যাওয়ার সময় ভিডিও করছিল আমার ছেলে। ইউনাইটেডের সব খেলোয়াড়কেই ভিডিও করেছে। রোনালদো মোজাটা নামিয়ে নেওয়ার সময় সে ফোন নিচু করে। কারণ, তার পা দিয়ে রক্ত পড়ছিল। ফোন নিচু করে ভিডিও করা ছাড়া সে কোনো কথা বলেনি।’
সারা এরপর বলেছেন, ‘রোনালদো পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ভয়ংকর রাগ সামলাতে না পেরে আমার ছেলের হাত থেকে ফোনটি কেড়ে আছাড় মেরেছেন।’
সংবাদমাধ্যমটিকে ভাঙা ফোন এবং হার্ডিংয়ের হাতের ছবি দিয়েছেন সারা। ছবিতে দেখা যায়, হার্ডিংয়ের হাতের ওপরের অংশে নীলচে কালশিটে দাগ পড়েছে। সারা বলেন, ‘হাতের দাগ তো দেখতেই পাচ্ছেন। বিশ্বাসই হচ্ছে না আমি এটা নিয়ে কথা বলছি।’
সারা জানান, তাঁর ছেলে প্রতিবন্ধী। ছেলে এই ঘটনায় ‘প্রচণ্ড মানসিক আঘাত’ পেয়েছে এবং গুডিসন পার্কে তার প্রথম ম্যাচ দেখার আনন্দ মাটি হয়ে গেছে, ‘আমি কাঁদছিলাম। ছেলেও মানসিকভাবে প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছে। বাসায় আসার আগ পর্যন্ত ঘটনাটা হজম করতে তার কষ্ট হয়েছে। এতটাই মন খারাপ যে আবারও ফুটবল ম্যাচ দেখতে যাওয়ার ভাবনাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছে। এটা ছিল তার প্রথম ফুটবল ম্যাচ দেখার দিন আর সেদিনই এমন কিছু ঘটল। অথচ শেষ কয়েক সেকেন্ড বাদে দিনটা আমাদের দারুণ কেটেছে।’
একজন মা হিসেবে সারা এ ঘটনা কীভাবে দেখেন, সেটাও জানিয়েছেন, ‘রোনালদো এভারটনের খেলোয়াড় না হতে পারে, কিন্তু অনেক বড় খেলোয়াড়। তাকে ওখানে (গুডিসন পার্ক) দেখা যাবে, এটা ভেবে রোমাঞ্চিত ছিল আমার ছেলে। সে (রোনালদো) একজন আইকন। জেক যদি তার মুখের সামনে গিয়ে কিছু করত, তা হলে বুঝতাম। কিন্তু সে তো তেমন কিছু করেনি। ফোন নিচু করে তার চোটের ভিডিও করেছে। প্রতিবন্ধী একটা ছেলে একজন ফুটবল খেলোয়াড়ের লাঞ্ছনার শিকার—আমি বিষয়টিকে এভাবে দেখি।’
মার্সিসাইড পুলিশের এক মুখপাত্র সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘তদন্ত চলছে। কর্মকর্তারা এভারটন ফুটবল ক্লাবের সিসিটিভি ফুটেজ দেখছেন। কোনো অপরাধ ঘটেছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’