>২০০৬ সালে বিশ্বকাপেই শুধু মুখোমুখি হয়েছে ইরান-পর্তুগাল। সে ম্যাচে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও ডেকোর গোলে ২-০ ব্যবধানে জেতে পর্তুগিজরা। বিশ্বকাপে রোনালদোর ওটাই ছিল প্রথম গোল
দক্ষিণ আফ্রিকা ২০০২ বিশ্বকাপে উঠেছিল তাঁর অধীনে। ২০১০ বিশ্বকাপে ছিলেন নিজের দেশ পর্তুগালের কোচ। বিশ্বকাপ তাই কার্লোস কুইরোজের জন্য জন্য নতুন কিছু নয়। চেনা মঞ্চে গতবার ও এবার তাঁর উপস্থিতি ইরানকে নিয়ে। ব্রাজিল থেকে খুব বেশি কিছু নিয়ে ফিরতে পারেনি ইরান। এবার রাশিয়া থেকে কি পারবে?
উত্তরটা মিলবে আজ সারানস্কে পর্তুগালের বিপক্ষে ম্যাচের পর। জিতলে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে খেলবে ইরান। কাজটা দুঃসাধ্য। কিন্তু কুইরোজের অভিজ্ঞতাই সাহস দিচ্ছে ইরানকে।
বিশ্বকাপ ছাড়াও কুইরোজের ক্যারিয়ার বর্ণাঢ্য। স্পোর্টিং লিসবন, রিয়াল মাদ্রিদের কোচ ছিলেন। তবে সবচেয়ে সফল সময়টা কাটিয়েছেন দুই দফা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে, স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের সহকারী হিসেবে। আর সহকারী হিসেবে তিনি কেমন ছিলেন, সেটা তো আত্মজীবনীতেই লিখেছেন কিংবদন্তি স্কটিশ কোচ, ‘এত প্রতিভাবান, বুদ্ধিমান একজন সহকারী পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।’ শোনা যায়, নিজের উত্তরসূরি হিসেবেও ফার্গুসনের পছন্দ কুইরোজই ছিলেন। তবে তখনকার ইউনাইটেড খেলোয়াড়দের কয়েকজনের সঙ্গে বনিবনার অভাবে শেষ পর্যন্ত দায়িত্বটা পাননি কুইরোজ।
পর্তুগাল ঘুরে যখন ২০১১ সালে ইরানের দায়িত্ব নেন, অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছিল, কুইরোজের মতো কোচ কেন এমন একটা দেশের দায়িত্ব নিলেন! রাজনৈতিক বিশ্বে ইরান প্রায় একঘরে। সেটার প্রভাব পড়ে তাদের ফুটবলেও। ইউরোপের বড় দেশগুলোর সঙ্গে প্রীতি ম্যাচ খেলার সুযোগ খুব কম মেলে ইরানের। অনেক দেশই ইরানে গিয়ে খেলতে চায় না, আবার ইরানও অনেক দেশে গিয়ে খেলার সুযোগ পায় না। তার মধ্যে আবার একটা রক্ষণশীল দেশ হিসেবে নানা সীমাবদ্ধতা। সব মিলিয়ে ইরানকে নিয়ে কত দূর কী করতে পারেন কুইরোজ, সেই সন্দেহ তো ছিলই। উত্তরটা কুইরোজ দিয়েছেন ইরানকে পরপর দুটি বিশ্বকাপে তুলে।
ব্রাজিল বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচটা তো ড্র-ই করে ফেলেছিল কুইরোজের দল। শেষ মুহূর্তে লিওনেল মেসির ওই গোল না হলে সেদিন একটা পয়েন্ট পেয়ে যায় ইরান। শেষ পর্যন্ত ব্রাজিল থেকে ফিরতে হয়েছিল নাইজেরিয়ার সঙ্গে ড্রয়ে পাওয়া একটি মাত্র পয়েন্ট নিয়ে। এমন পারফরম্যান্সের পর কোচ বরখাস্ত হওয়াটাই সাধারণত নিয়ম। কিন্তু ইরান ওই বিশ্বকাপের পর কুইরোজের সঙ্গে থেকে যায় এই বিশ্বকাপ পর্যন্ত। এবার তো ইরানের বিশ্বকাপ অভিযান শুরু হয়েছে মরক্কোর বিপক্ষে জয় দিয়ে। স্পেনের সঙ্গে হেরেছে মাত্র এক গোলে। এমনকি আজ পর্তুগালও মনে হয় না ইরানের বিপক্ষে জিতবে ধরে নিয়ে মাঠে নামবে। একজন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো থাকার পরেও।
কুইরোজ আছেন বলেই রোনালদোকে নিয়ে এমন ভয়হীন থাকতে পারছে ইরান। একসময় তো তিনি রোনালদোরও কোচ ছিলেন। স্পোর্টিং লিসবন থেকে ২০০৩ সালে যখন রোনালদো ইউনাইটেডে যোগ দেন, কুইরোজ তখন ফার্গুসনের সহকারী। দীর্ঘদিন একসঙ্গে কাজ করেছেন দুজন। কুইরোজ ২০০৮ সালে পর্তুগালের কোচ হওয়ার পর সরাসরি তাঁর অধীনেই খেলেছেন রোনালদো। তবে ২০১০ বিশ্বকাপে পর্তুগাল দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই বিদায়ের পর দুজনের সম্পর্ক কিছুটা তিক্ত হয়ে যায়। ওই ব্যর্থতার জন্য রোনালদো কুইরোজকে দায়ী করেছিলেন। কুইরোজও বরখাস্ত হয়েছিলেন বিশ্বকাপের পরই। তিনি যে খুব খারাপ কোচ নন, সেটাই হয়তো আজ রোনালদোকে দেখিয়ে দিতে চাইবেন।
এমনিতে অবশ্য মনে হচ্ছে, এই বিশ্বকাপে খেলছে ৩১টি দল আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। পর্তুগাল এখন পর্যন্ত যে চার গোল করেছে, সব কটিই রোনালদোর। যে চার পয়েন্ট পর্তুগালের, সেগুলো রোনালদোর একাই এনে দেওয়া বললেও ভুল হবে না। কুইরোজ নিজেও সেটাই মনে করেন। নইলে কি আর বলেন, ‘পর্তুগালের জাতীয় দলটার নামই ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, বাকিরা শুধু তাঁর পেছনে দৌড়ায়।’
রোনালদোর জন্য না হলেও তাঁর বাকি সতীর্থদের জন্য কথাটা খুব একটা প্রশংসাসূচক নয়। সারানস্কে আজ তাঁরাও হয়তো কুইরোজকে একটা জবাব দিতে চাইবেন।