দলবদলের বাজারে এখন দুজনই সবার লক্ষ্য—কিলিয়ান এমবাপ্পে ও আর্লিং হরলান্ড। অবিশ্বাস্য গোল করার ক্ষমতার কারণে ‘সাইবর্গ’ নাম পেয়ে যাওয়া হরলান্ডের প্রতি আগ্রহের শুরুটা ২০২০ সাল থেকে। আর ইউরোপের পরাশক্তিদের লোলুপ দৃষ্টি ২০১৭ সাল থেকেই গায়ে মাখছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। মোনাকোতে যখন ছিলেন, তখনই তাঁকে পাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ।
এমবাপ্পে পিএসজিতে যাওয়ার পরও রিয়াল হাল ছাড়েনি। প্রতি দলবদলেই তাঁকে পাওয়ার চেষ্টা করেছে দলটি। এরই মধ্যে দৌড়ে এসে গেছে লিভারপুল। অল রেড কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপের সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথাও বলেছেন এমবাপ্পে। ইদানীং ম্যানচেস্টার সিটিও নেমেছে দৌড়ে। আগামী মৌসুমে তাঁকে পেতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে সিটি—এমন কথা শোনা যাচ্ছে। আগামী দলবদলে কী হবে, সেটা ভবিষ্যৎই বলে দেবে। তবে গত দলবদলে এমবাপ্পে শুধু এক ক্লাবেই মনপ্রাণ দিয়ে রেখেছিলেন, সেটি রিয়াল মাদ্রিদ।
এবারে দলবদলে এমবাপ্পে যে পিএসজি ছাড়তে চেয়েছিলেন, সেটি সবার জানা। তাঁর সম্ভাব্য লক্ষ্যও যে রিয়াল মাদ্রিদ, সেটাও গোপন কিছু নয়। কিন্তু এত দিন এ ব্যাপারে কিছু বলেননি এমবাপ্পে। গতকাল আরএমসি স্পোর্তের সঙ্গে কথোপকথনে অবশেষে এমবাপ্পের নিজের মত জানা গেছে। তবে সে সাক্ষাৎকারে দল বদলানোর ইচ্ছার কথা জানা গেলেও রিয়াল মাদ্রিদ–সংক্রান্ত কোনো কথা সেখানে ছিল না।
তবে লে’কিপের সাক্ষাৎকারে আর রাখঢাক রাখেননি এমবাপ্পে। সেখানেই জানিয়ে দিয়েছেন, সম্ভাব্য গন্তব্য হিসেবে কোন নামটি জপছিলেন মনে মনে, ‘আমি যদি এই গ্রীষ্মে যেতাম, তাহলে সেটা শুধু রিয়াল মাদ্রিদে। আমি ভেবেছিলাম, এখানে আমার যাত্রা শেষ হয়েছে, আমি নতুন কিছু চাচ্ছিলাম। লিগ আঁতে আমি ছয় বা সাত বছর ধরে খেলছি। প্যারিসকে আমার সর্বস্ব দিয়েছি এবং ভালো করেছি। চলে যাওয়াটাই পরের ধাপ, আমি এমনটাই ভেবেছি।’
পিএসজি তাঁর সঙ্গে একমত হয়নি। কোনোভাবেই রিয়ালের সঙ্গে আলোচনায় বসেনি ক্লাবটি। এবং এক বছর বাকি আছে এমন খেলোয়াড়কে বিক্রি না করে আবার হুংকার ছুড়েছে, এমবাপ্পেকে মুফতে ছাড়বে না তারা। অথচ চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে খেলোয়াড়কে আটকে রাখার উপায় নেই। তবু পিএসজি সভাপতি নাসের আল খেলাইফির এমন দম্ভ ভরা হুংকার চিন্তায় ফেলে দিয়েছে এমবাপ্পেকে, ‘যখন সভাপতি সবাইকে বলে বেড়ান আপনি যেতে পারবেন না, এবং আপনি মুফতেও যাবেন না, আপনি চিন্তায় পড়তে বাধ্য। মিথ্যা বলব না, আমি ওই সময় খুবই চিন্তায় ছিলাম। আমি নিজেকে প্রশ্ন করলাম, যদি মুফতে না যাই, তাহলে কী হতে পারে। আমার সঙ্গে কী ঘটবে? কিন্তু এটা আসলে আমার প্রতি তাদের নিবেদন দেখাতেই বলা হয়েছিল। এর মানে ক্লাব আমাকে চায় এবং আমাকে ছাড়তে চায় না।’
রিয়াল মাদ্রিদ যে তাঁকে পেতে চায়, সেটা গোপন কিছু নয়। এবং এমবাপ্পে যে রিয়ালে যেতে কতটা আগ্রহী ছিলেন, সেটা জানা গেল নতুন সাক্ষাৎকারে, ‘আমি ওই সময় একটু হতাশ ছিলাম। আপনি যখন চলে যেতে চান, তখন থাকতে বাধ্য হলে সুখে থাকবেন না। কিন্তু আমি সেটা কাটিয়ে উঠেছি দ্রুত। দুঃখজনকভাবে জাতীয় দলের সঙ্গে খেলতে গিয়ে চোটে পড়েছিলাম। আমি দ্রুত ঘরে ফিরেছি এবং খেলা না থাকায় ঘরে এসে কাঁদার সময় পেয়েছি। এরপর আবার ফিরেছি, গোল করেছি এবং আবার ভালো করেছি।’
এবার পারেননি বলে যে ক্লাব ছাড়ার ইচ্ছা ছেড়ে দিয়েছেন এমন নয়। তবে ক্লাব ছাড়তে চাইলেও পিএসজির প্রতি ভালোবাসা এখনো আছে এমবাপ্পের। এ কারণেই এ ব্যাপারে ক্লাবের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাননি, ‘এটা ক্লাবের প্রতি অসম্মান হতো। ১৮ বছর বয়সে আমাকে সুযোগ দিয়েছে এবং অসাধারণ চারটি বছর কাটানো এক ক্লাবকে ধন্যবাদ দেওয়া হতো না। আমি সব সময় খেলতে চাই। দেখাতে চাই, আমি অসাধারণ খেলোয়াড় এবং কোনো কিছুই আমার ওপর প্রভাব ফেলে না, এমনকি ব্যর্থ দলবদলও না। আমার শেষ দিন পর্যন্ত এ ক্লাবে অবদান রাখতে চাই।’