রিয়াল মাদ্রিদের আর কিছুই রইল না!

বেল-বেনজেমাদের হতাশামাখা মুখই বলে দিচ্ছে ম্যাচে কী হয়েছিল। ছবি: এএফপি
বেল-বেনজেমাদের হতাশামাখা মুখই বলে দিচ্ছে ম্যাচে কী হয়েছিল। ছবি: এএফপি
>উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে আয়াক্সের বিপক্ষে শেষ ষোলোর খেলার দ্বিতীয় লেগে ৪-১ গোলের ব্যবধানে হেরেছে রিয়াল মাদ্রিদ। আয়াক্সের হয়ে একটি করে গোল করেছেন হেকিম জিয়েখ, ডেভিড নারেস, ডুসান টাড়িচ ও লাসসি স্কোনি। রিয়ালের একমাত্র গোলটি এসেছে মার্কো অ্যাসেনসিওর পা থেকে।

কোপা দেল রে, এরপর লা লিগা। বার্নাব্যুতে দুই এল ক্লাসিকো হেরে টালমাটাল রিয়াল মাদ্রিদের কবর রচনা করল আয়াক্স। নিজেদের দুর্গে আয়াক্সের বিপক্ষে ৪-১ গোলে হেরেছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। দুই লেগ মিলে ৫-৩ গোলের অগ্রগামিতায় চ্যাম্পিয়নস লিগের রেলগাড়ির শিকলটা এখানেই টানতে হচ্ছে স্প্যানিশ জায়ান্টদের।

কোপা দেল রের যাত্রা শেষ। লা লিগা? সে তো দূরের বাতিঘর। শক্তি আর পরিসংখ্যানের বিচারে আয়াক্সকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে টিকে থাকতে পারত রিয়াল। খেলাটা বার্নাব্যুতে বলেই সে আশার পারদ ছিল তুঙ্গে। রিয়ালের সমর্থকেরা আশায় বুক বেঁধে বসে ছিলেন বার্নাব্যুতেই নিজেদের চেনা ঘাসের কোলজুড়ে—আবারও স্বপ্ন বুনবে রিয়াল, ঘুরে দাঁড়াবে বেনজেমা-ভিনিসিয়ুয়েসরা। কিন্তু কিসের কী...এই মৌসুমে রিয়ালের কপালে যে আর কিছুই রইল না। শেষ পর্যন্ত বাদ পড়তে হলো চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকেও! ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমের পর এবারই কোনো ক্লাব নিজেদের মাঠে প্রথম লেগ হেরেও চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে রিয়াল মাদ্রিদকে বিদায় করল।
অথচ এই রিয়াল মাদ্রিদই শেষ পাঁচ চ্যাম্পিয়নস লিগের চারটির শিরোপা ঘরে তুলেছে। আর আয়াক্স প্রতিযোগিতায় ২২ বছর আগে (১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে) শেষ নকআউট পর্বে উঠেছে। সেবার অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে হারিয়ে সেমিতেও উঠেছিল ডাচ্‌ ক্লাবটি। সেমিতে জুভেন্টাসের কাছে শেষ পর্যন্ত হোঁচট খায় আয়াক্স। মজার বিষয় হচ্ছে ইউরোপে আয়াক্সের বিপক্ষেই সবচেয়ে ভালো খেলার রেকর্ড রিয়ালের। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে আয়াক্সের বিপক্ষে শেষ সাত ম্যাচেই জিতেছেন সোলারির শিষ্যরা। রিয়ালের বিপক্ষে আয়াক্স জয় পেয়েছিল ১৯৯৫ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে।

আয়াক্সের উল্লাসেও কোনো খামতি ছিল না। ছবি: এএফপি

মঙ্গলবার রাতের খেলায় যেন বিস্ময়ের শেষ ছিল না। চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে এবারই প্রথম বার্নাব্যুতে প্রথমার্ধের ১৮ মিনিটের মধ্যে ২ গোল হজম করেছে স্বাগতিকরা। মাঝেমধ্যে পরিসংখ্যানও যে ফলে যায়, তা প্রমাণ করল আয়াক্স—চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ৪৭ ম্যাচের যে কটাতে আয়াক্স শুরুতে গোল করেছে, তার প্রতিটিতেই জয় পেয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

ম্যাচের শুরুতে অবশ্য ভালো খেলার ইঙ্গিতই দিচ্ছিল বেনজেমা-ভিনিসিয়ুসেরা। ষষ্ঠ মিনিটে ভাসকেজের ক্রসে ঠিকঠাক মাথা ছোঁয়াতে পারলেই গোল পেতেন ভারানে। পাল্টা আক্রমণে উঠে ক্রুসের ভুলে গোল পেয়ে যায় অতিথিরা। ক্রুসের ব্যাকপাস থেকে বল পেয়ে যান ডুসান টাড়িচ। টাড়িচের বাড়ানো বল জালে জড়াতে ভুল করেননি জিয়েখ। মরোক্কোর এই খেলোয়াড়ের গোলে এগিয়ে আক্রমণের ধার বাড়ায় আয়াক্স। তাতে কাজও হয়। ১৮তম মিনিটেই দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় অতিথিরা। এবারও টাড়িচের বাড়ানো বল থেকে গোল পায় আয়াক্স। তবে এবার অতিথিদের হয়ে বল জালে জড়ান ডেভিড নারেস। চ্যাম্পিয়নস লিগের এই মৌসুমে এর আগ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি গোলে (৫ গোল, ৩ অ্যাসিস্ট) সরাসরি অবদান রাখা এই ডুসান টাড়িচ নিজে গোল পান ৬২তম মিনিটে। এক মৌসুমে আয়াক্সের হয়ে ছয় গোল করা দ্বিতীয় খেলোয়াড় টাড়িচ। ২৪তম মিনিটে ভিনিসিয়ুসের শট আটকে দেন আয়াক্স গোলরক্ষক। এর মিনিট দুয়েক আগে অবশ্য আয়াক্সও গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেছিল।

ডুসান টাড়িচ, আয়াক্সের এই সার্বিয়ান ছিলেন দুর্দান্ত। ছবি: এএফপি

এই রাতে ভাগ্যদেবী রিয়ালের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে হয়তো। তা না হলে প্রথমার্ধেই এক এক করে লুকাস ভাসকেজ ও ভিনিসিয়ুস জুনিয়র কেন চোট পেয়ে মাঠ ছাড়বেন! ২৯তম মিনিটে ভাসকেজের বদলি হিসেবে নামেন বেল আর ভিনিসিয়ুসের বদলি হিসেবে নামেন অ্যাসেনসিও। প্রথমার্ধে বেল কিংবা অ্যাসেনসিওর কেউই গোল পরিশোধ করতে পারেননি। ৪৩তম মিনিটে বেলের শট অবশ্য পোস্টে লেগে ফিরে আসে।

রিয়াল মাদ্রিদ দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু করে আরও শঙ্কা নিয়ে। কারণ, চ্যাম্পিয়নস লিগের এই মৌসুমে আয়াক্সের ১২টি গোলের ১১টিই হয়েছে দ্বিতীয়ার্ধে। আর এই ম্যাচে তো প্রথমার্ধেই ২ গোল হজম করে বসে আছে রিয়াল। ৪৯তম মিনিটে অ্যাসেনসিও শট পোস্টের পাশ দিয়ে গেলে অল্পের জন্য রক্ষা পায় অতিথিরা। এরপর বেনজেমার বাঁ পায়ের শটও বারের ওপর দিয়ে চলে যায়। ৫২তম মিনিটে টেড়িচের দুর্দান্ত শট আটকে রিয়ালকে আরও গোল হজমের হাত থেকে রক্ষা করেন কোর্তোয়া। মিনিট দশেক পর অবশ্য সেটা পারেননি। ৬২তম মিনিটে টেড়িচের গোলে ৩-০–তে পিছিয়ে পড়া রিয়াল তখন রীতিমতো কাঁপছে। ৭০তম মিনিটে গ্যালারি ঠাসা দর্শকদের উৎসবের রঙে রাঙানোর উপলক্ষ এনে দেন অ্যাসেনসিও। অ্যাসেনসিওর গোলে ব্যবধান কমলেও শেষ রক্ষা হয়নি রিয়ালের। দুই মিনিট পরই লাসসি স্কোনি রিয়ালের বুকে শেষ কোপটা মারেন। শেষ ১০ মিনিটে গোলের সুযোগ পান রিয়ালের বেল, তবে সেটা কাজে লাগাতে পারেননি ওয়েলস ফরোয়ার্ড। তাঁর পথ ধরেই হাঁটেন আয়াক্সের টাড়িচ।

যোগ হওয়া সময়ে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে নাচোর মাঠ ছেড়ে যাওয়ার দৃশ্য, আর ১০ জনের দলে পরিণত হওয়া রিয়াল খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষায় তখন সব হারিয়ে দিশেহারা ক্লান্ত পথিকের প্রতিচ্ছবিই ফুটে উঠেছিল!