>চ্যাম্পিয়নস লিগে কাল রাতে ‘পারফেক্ট হ্যাটট্রিক’ করেছেন রিয়াল মাদ্রিদের তরুণ ফরোয়ার্ড রদ্রিগো। মেসি-রোনালদোরও এ অর্জন নেই। মেসি তাঁর পেশাদার ক্যারিয়ারে কখনো পারফেক্ট হ্যাটট্রিকের দেখা পাননি
এডেন হ্যাজার্ড রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিয়েছেন ‘নক্ষত্র হিসেবে। রদ্রিগো গোয়েজকে সম্ভাবনাময় প্রতিভা হিসেবে কিনেছে রিয়াল মাদ্রিদ। বেলজিয়ান তারকা এখনো সেভাবে নিজের সামর্থ্যের জানান দিতে পারেননি। কিন্তু ১৮ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ান তরুণটি এরই মধ্যে বুঝিয়ে দিয়েছেন দেশে ‘নতুন নেইমার’ তকমা তাঁকে এমনি দেওয়া হয়নি। কাল চ্যাম্পিয়নস লিগে রদ্রিগোকে নিয়ে গান ধরেছিলেন। চোখের সামনে অবিশ্বাস্য কিছু হতে দেখলে ফুটবলপ্রেমী হিসেবে এমন কিছু না করে পারা যায় না। রিয়াল সমর্থকদের এমনই একটা রাত কেটেছে কাল।
শুধু রিয়াল সমর্থক কেন ফুটবলপ্রেমী মাত্রই রদ্রিগোর খেলায় মুগ্ধ হবেন। এমনিতে বাজে সময় কাটিয়ে ওঠার মরিয়া চেষ্টা করছে রিয়াল। দলে তারকারও অভাব নেই। কিন্তু তাঁরা সময়মতো সেভাবে জ্বলে উঠতে না পারায় সম্ভাবনাময়দের ওপর কিছুটা চাপ থাকেই। রদ্রিগো এ চাপকে আপাতত তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিচ্ছেন সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৬ ম্যাচে ৫ গোল করে। আর এ গোলসংখ্যায় সবচেয়ে স্মরণীয় তিনটি গোল তিনি পেয়েছেন কাল রাতে ‘পারফেক্ট হ্যাটট্রিক’-এর সৌরভ ছড়িয়ে।
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে কাল চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজের গোলের খাতা খুলতে ৪ মিনিট সময় নিয়েছেন রদ্রিগো। মার্সেলোর পাস থেকে বাঁ পায়ের শটে গোলটি করতেই বার্নাব্যুর স্বাগতিক সমর্থকেরা কুর্নিশ করেছেন রদ্রিগোকে। গানও ধরেছেন কেউ কেউ। সমর্থকদের প্রেরণা পেলে কী ঘটতে পারে তা তিন মিনিট পরই বুঝিয়ে দেন গা থেকে এখনো কৈশোরের গন্ধ না কাটা এ ফরোয়ার্ড। এবারও মার্সেলোর ক্রস থেকে দুর্দান্ত হেডে গোল। চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে কোনো ম্যাচের প্রথম ৭ মিনিটের মধ্যে জোড়া গোল করার রেকর্ডটি তখনই হয়ে যায় রদ্রিগোর।
কিন্তু রদ্রিগো চিত্রনাট্যের সেরা অংশটি তখনো বাকি ছিল। ৭ মিনিট পরই হ্যাটট্রিক হতে পারত সান্তোস থেকে উঠে আসা এ তরুণের। রিয়াল পেনাল্টি পেলেও তাঁকে শট নিতে দেননি সার্জিও রামোস। ‘পানেনকা’ শটে গোলও পেয়েছেন রামোস। কিন্তু ওই পেনাল্টি রদ্রিগো নিলে এবং গোল করতে পারলে গড়তে পারতেন আরেকটি রেকর্ড। চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে দ্রুততম হ্যাটট্রিকের রেকর্ড। তা না হলেও রদ্রিগোর মনে ক্ষোভ থাকার কথা না। মাঝে করিম বেনজেমার কাছ থেকে আরও দুই গোল পেয়েছে রিয়াল। এর মধ্যে একটি আবার রদ্রিগোর পাস থেকেই। কিন্তু এরপরও রিয়াল সমর্থকদের মনে কোথায় যেন কমতি থেকে যাচ্ছিল। রদ্রিগো সে কমতিটুকুও পূরণ করেছেন খেলার যোগ করা সময়ে হ্যাটট্রিক করে।
বেনজেমার পাস থেকে ডান পায়ের টোকায় রদ্রিগোর শেষ গোলটি তাঁর ক্যারিয়ারের জন্যই ঐতিহাসিক। বার্নাব্যুতে অভিষেকেই হ্যাটট্রিক এবং সেটি আবার চ্যাম্পিয়নস লিগেও তাঁর প্রথম—রীতিমতো পারফেক্ট হ্যাটট্রিক। দুই পা এবং মাথার সমন্বয়ে। বর্তমান বিশ্বের দুই সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি এবং ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও চ্যাম্পিয়নস লিগে পারফেক্ট হ্যাটট্রিক করতে পারেননি। মেসি তো তাঁর পেশাদার ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত দেখাই পেলেন না। আর রদ্রিগো কি না এই পারফেক্ট হ্যাটট্রিকই করলেন রীতিমতো ইতিহাস গড়ে—চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে পারফেক্ট হ্যাটট্রিক করার রেকর্ড এখন রদ্রিগোর।
১৮ বছর ৩০১ দিন বয়সে এ হ্যাটট্রিকের দেখা পেলেন তিনি। এর আগে রেকর্ডটি ছিল কিলিয়ান এমবাপ্পের দখলে—২০ বছর ৩০৬ দিন। এই রিয়ালেরই কিংবদন্তি রাউল গঞ্জালেসের পর চ্যাম্পিয়নস লিগে দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে হ্যাটট্রিকও রদ্রিগোর। ম্যাচ শেষে এই শিষ্যকে নিয়ে জিদান শুধু বলেছেন, ‘সে আমাকে অবাক করেনি। সবকিছুই তার মধ্যে আছে।’ এদিকে রদ্রিগোর অনুভূতিটুকু এমন, ‘বার্নাব্যু আমার নামে গান ধরতেই স্বপ্ন সত্যি হয়েছে।’