রিয়ালের অবিচ্ছেদ্য অংশ কখনোই ছিলেন না ইসকো।
রিয়ালের অবিচ্ছেদ্য অংশ কখনোই ছিলেন না ইসকো।

রিয়াল ছেড়ে যাচ্ছেন ইসকো

প্রতিভার দিক দিয়ে তাঁর সঙ্গে টেক্কা দেওয়ার মতো খেলোয়াড় বিশ্বে খুব কমই আছে। অন্য যেকোনো দলের হয়ে খেললে প্রতি ম্যাচে মাঠে নামতেন তিনি। কিন্তু যে দলে খেলেন, সে দল যে বাকি দশটা দলের মতো নয়! এ জন্যই রিয়াল মাদ্রিদের স্প্যানিশ মিডফিল্ডার ইসকো বলতে গেলে সুযোগই পান না মূল একাদশের হয়ে মাঠে নামার। বছরের পর বছর ধরে বেঞ্চে বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত ইসকো এবার জানিয়ে দিয়েছেন, ঢের হয়েছে, আর নয়। রিয়াল মাদ্রিদের সাদা জার্সি গা থেকে নামানোর সময় চলে এসেছে।

আনুষ্ঠানিকভাবে এমন কোনো বিবৃতি ইসকো বা রিয়াল মাদ্রিদ, কারও পক্ষ থেকে না এলেও এমনটাই জানিয়েছে মাদ্রিদভিত্তিক প্রায় সব সংবাদমাধ্যম। ইসকো বলেন, নিজ থেকেই দল ছাড়তে চেয়েছেন। আর সেটা আসন্ন জানুয়ারির দলবদলেই। বয়স এখন ২৮, আর বেশি দিন ক্যারিয়ার-সক্ষমতার চূড়ায় হয়তো থাকতে পারবেন না। ডুবন্ত ক্যারিয়ারকে বাঁচানোর এটাই সময়। রিয়াল মাদ্রিদও বলে, ইসকোর মনোবাঞ্ছা পূরণ করতে প্রস্তুত। তবে আগ্রহী ক্লাব ইসকোর জন্য যথার্থ প্রস্তাব নিয়ে এলেই রিয়াল তাঁকে ছাড়বে বলে জানিয়েছে মার্কা ও এএসের মতো সংবাদমাধ্যমগুলো।

এমনিতেই কয়েক মাস ধরে কোচ জিনেদিন জিদানের সঙ্গে সম্পর্কটা তেমন ভালো নেই এই স্প্যানিশ মিডফিল্ডারের। তাঁকে মাঠে কেন নামানো হয় না, সেটা নিয়ে কিছুদিন আগেই প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছিলেন। মৌসুমের শুরুতে চোটে আক্রান্ত ছিলেন ইসকো। চোট থেকে ফেরার পর খেলার সুযোগ পেয়েছেন চারটি ম্যাচ। একটি ম্যাচেও পুরো খেলার সুযোগ পাননি তিনি। এর মধ্যে কেবল দুটি ম্যাচে ছিলেন প্রথম একাদশে। সব মিলিয়ে খেলেছেন ১৪৮ মিনিট। রিয়ালের শেষ দুই ম্যাচে চ্যাম্পিয়নস লিগে শাখতার দোনেৎস্ক ও লা লিগায় এল ক্লাসিকোতে ছিলেন বেঞ্চে।

১৮০ মিনিটে এক মিনিটও খেলার সুযোগ পাননি। এতে হতাশ হয়ে জিদানের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণের অভিযোগ তুলেছেন ২৮ বছর বয়সী মিডফিল্ডার। ক্লাসিকোতে বেঞ্চে থাকা ইসকো স্বগতোক্তি করছিলেন, ‘তিনি (জিদান) যদি আমাকে ম্যাচ থেকে তুলে নেন, সেটা ৫০ থেকে ৬০ মিনিটের মধ্যেই করেন। কখনো মধ্যাহ্ন বিরতিতেই। আবার যদি বদলি হিসেবে মাঠে পাঠান, সেটা ৮০ মিনিটে করেন।’

বেঞ্চে তখন ইসকোর পাশে ছিলেন লেফটব্যাক মার্সেলো, মিডফিল্ডার লুকা মদরিচ ও স্ট্রাইকার লুকা ইয়োভিচ। একটু দূরে থাকলেও লুকাস ভাসকেজ ও এদের মিলিতাও। রিয়ালে এ মৌসুমে এ পাঁচজনও তাঁর মতোই নিয়মিত খেলতে পাচ্ছেন না। এ কারণেই হয়তো এই সতীর্থদের কাছে মনের কষ্টটা খুলে বলেছিলেন। কিন্তু ইসকোর দুর্ভাগ্য এ মুহূর্তটা ধরা পড়ে গেছে এল পার্টিদাসো টিভির ক্যামেরায়। ইসকোর এ কথা শুনে হেসেছেন মার্সেলো। ইসকো, মার্সেলো ও ইয়োভিচের সেদিন আর নামা হয়নি মাঠে। পরে মাঠে নেমে রিয়ালের জয়ে ভালো ভূমিকা রেখেছেন ভাসকেজ ও মদরিচ।

জিদানের সঙ্গে সম্পর্কটা আর আগের মতো নেই।

শুধু এই মৌসুমে জিদানের অধীনেই নয়, ২০১৮–১৯ মৌসুমে সান্তিয়াগো সোলারির অধীনেও তেমন খেলার সুযোগ পাননি ইসকো। বেঞ্চে বসে থাকতে থাকতে তো রেকর্ড বইয়ে নাম লিখিয়ে ফেলেছিলেন। সে মৌসুমে তাঁর থেকে বেশি সময় বেঞ্চে বসে থাকেননি লা লিগার কোনো খেলোয়াড়। সৃষ্টিশীল মিডফিল্ডার হিসেবে ইসকোর সুনাম থাকলেও রক্ষণ সামলাতে তাঁর আগ্রহ কম। শারীরিক গঠনের কারণে প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নিতে পারায়ও তাঁর দক্ষতা নেই। আর সৃষ্টিশীলতার ছাপও ইদানীং দেখা যাচ্ছে না। নিবেদন ও একাগ্রতার পূজারি কোচের জন্য তাঁকে দলে নেওয়া তাই কঠিন হয়ে উঠছে। সেটা কোচ হিসেবে সোলারি থাকুন কিংবা জিদান।

ইসকো জিদানের খুবই প্রিয় খেলোয়াড় ছিলেন একসময়। শুধু এই মিডফিল্ডারকে বাড়তি সুযোগ দেওয়ায় রিয়ালে জায়গা পাচ্ছিলেন না হামেস রদ্রিগেজ। এ মৌসুমে তো ক্লাব থেকে বিদায়ই নিয়েছেন হামেস। কিন্তু ইসকোকে ছাড়েননি জিদান। ২০১৬–১৭ মৌসুমেও ইসকোর কারণে একাদশে জায়গা হারিয়েছিলেন বেল। কিন্তু এ মৌসুমে ইসকো আর নিজের জায়গা ধরে রাখতে পারছেন না। অসময়ে চোটে পড়া ভূমিকা ফেলেছে, সুযোগ পেয়েও সেটা কাজে লাগাতে না পারাও তাঁর সুযোগ কমিয়ে দিচ্ছে। এ ছাড়া এই মৌসুমে মার্টিন ওডেগার্ডের মতো তরুণকে ধারে অন্য কোথাও না পাঠিয়ে দলের সঙ্গেই রেখেছেন জিদান। ইঙ্গিতটা পরিষ্কার, ইসকোর চেয়ে এখন আসেনসিও-ভিনিসিয়ুসদের পাশাপাশি এই তারকার দাম বেশি জিদানের কাছে।

হামেস ও ইসকো, দুজনকেই রিয়ালে এনেছিলেন জিদানের পূর্বসূরি কার্লো আনচেলত্তি। ইতালিয়ান এই কোচ দুজনেরই বেশ ভক্ত ছিলেন। ইসকো যেবার রিয়ালে আসেন, সেবার রিয়াল ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন কাকা ও মেসুত ওজিলের মতো তারকারা। সে হিসাবে বলা যায়, কাকা বা ওজিলের উত্তরসূরি হিসেবেই ইসকোকে মনে ধরেছিল আনচেলত্তি। এই আনচেলত্তিই এখন এভারটনের কোচ, এই মৌসুমে রিয়াল থেকে টেনে এনেছেন হামেস রদ্রিগেজকে। ইসকোরও কি ঠিকানা হবে আনচেলত্তির নতুন দলে? এই গুঞ্জন একদমই উড়িয়ে দিয়েছেন আনচেলত্তি। কিন্তু ফুটবলে শেষ কথা বলে কিছু নেই যে!

২০২২ সাল পর্যন্ত রিয়ালের সঙ্গে চুক্তি আছে ইসকোর। আগ্রহী ক্লাবকে ন্যূনতম ৩ কোটি ইউরো খসাতে হবে ইসকোকে পেতে হলে। দেখা যাক, তাঁকে নিতে কে এগিয়ে আসে!