আগামী মৌসুমে দলে কিছু না কিছু বদল না এনে নিশ্চয়ই বসে থাকবেন না জিদান! এই মৌসুমে লিগ জিতলেও রিয়ালের কিছু খামতি যে আছে, তা তো স্পষ্ট। আগামী মৌসুমে দলে তাই নতুন খেলোয়াড় হয়তো আসবেন কেউ, কাউকে রিয়াল ছাড়তেও হতে পারে
মাত্রই দারুণ দাপট দেখিয়ে লিগ জেতা শেষ হলো। সেটির আনন্দ উদ্যাপনের মধ্যেই অবশ্য একটা ধাক্কাও খেয়েছে জিনেদিন জিদানের রিয়াল মাদ্রিদ। টানা দ্বিতীয় মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোতে বাদ পড়তে হলো রিয়ালকে।
জিদানের জন্য এমন তেতো অভিজ্ঞতা অবশ্য প্রথম। রিয়ালে প্রথম দফায় আড়াই মৌসুমে টানা তিনটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতিয়ে বিদায় নিয়েছিলেন ফরাসি কিংবদন্তি, দ্বিতীয় দফায় ফিরেছেন গত মৌসুমে রিয়াল চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বাদ পড়ার পর। আর রিয়ালের ডাগআউটে দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম পূর্ণ মৌসুমেই ‘জিজু’কে পেতে হলো কোচিং ক্যারিয়ারে প্রথমবারের চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্ব থেকে বাদ পড়ার তেতো স্বাদ।
সেটার প্রতিক্রিয়ায় আগামী মৌসুমে দলে কিছু না কিছু বদল না এনে নিশ্চয়ই বসে থাকবেন না জিদান! এই মৌসুমে লিগ জিতলেও রিয়ালের কিছু খামতি যে আছে, তা তো স্পষ্ট। আগামী মৌসুমে দলে তাই নতুন খেলোয়াড় হয়তো আসবেন কেউ, কাউকে রিয়াল ছাড়তেও হতে পারে। কে আসবেন, সে না হয় ভবিষ্যৎ বলবে। তবে স্প্যানিশ দৈনিক এএস নয়জনের একটা তালিকা করেছে, যাঁদের হয়তো এই মৌসুম শেষেই রিয়াল থেকে বের হয়ে যাওয়ার দরজা দেখিয়ে দিতে পারেন জিদান।
গ্যারেথ বেল
রিয়াল ছাড়তে পারেন এমন খেলোয়াড়দের তালিকা হবে আর তাতে বেলের নাম থাকবে না, তা হয়? জিদানের সঙ্গে তাঁর বনিবনা ঠিক হয় না—এই তথ্য সম্ভবত এখন ‘ওপেন সিক্রেট’ই। ফরাসি কোচের কৌশলে কখনোই সেভাবে মানিয়ে নিতে পারেননি ওয়েলশ ফরোয়ার্ড। এই মৌসুমের শুরুতেই রিয়াল ছাড়ার খুব কাছে চলে এসেছিলেন বেল। প্রাক-মৌসুম প্রস্তুতির সময় জিদান সে প্রসঙ্গে এ-ও বলেছিলেন, ‘যদি বেল কালই রিয়াল ছাড়ে, তাহলে খুব ভালো।’ সম্পর্কটা কেমন সেটা পরিষ্কার হবে এই তথ্যে, গত শনিবার ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগে বেল খেলতে চাননি বলেই তাঁকে দলে রাখেননি জিদান। এই মৌসুমে সব মিলিয়ে ১৯ ম্যাচ খেলে ৩ গোল করা ফরোয়ার্ডের দিন রিয়ালে ফুরিয়ে যাক, তা সম্ভবত এখন রিয়াল সমর্থকেরাও চান।
হামেস রদ্রিগেজ
বেলের মতোই রদ্রিগেজের সঙ্গেও বনিবনা হচ্ছে না জিদানের। ফরাসি কোচের কৌশলে মোটেও মানিয়ে নিতে পারছেন না কলম্বিয়ান প্লেমেকার, মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও সম্ভবত তাঁর দিক থেকে তেমন দেখা যাচ্ছে না। গত দুই মৌসুমে বায়ার্ন মিউনিখে ধারে খেলা রদ্রিগেজকে এই মৌসুমে বিক্রি করে দিতে রাজিই ছিল রিয়াল, কিন্তু চোট মার্কো আসেনসিওকে মৌসুমের অর্ধেকেরও বেশি সময়ের জন্য কেড়ে নেওয়ায় তাঁকে রেখে দিতে বাধ্য হন জিদান। রেখেও অবশ্য কোনো লাভ হয়নি। সব মিলিয়ে মৌসুমে ১৪ ম্যাচ খেলেছেন রদ্রিগেজ, গোল করেছেন মাত্র একটি। ২০১৪ বিশ্বকাপে আলো ছড়ানো কলম্বিয়ানের জন্য ভালো কোনো প্রস্তাব কোনো দল করলেই যেন বর্তে যায় রিয়াল!
লুকা ইয়োভিচ
গত মৌসুমে আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্টে আলো ছড়িয়ে ইউরোপের অনেক বড় ক্লাবের নজর কেড়েছিলেন। ইউরোপের সবচেয়ে কুলীন ক্লাবই তাঁকে কিনে নেয় ৬ কোটি ইউরোতে। ভাবা হচ্ছিল, করিম বেনজেমার যোগ্য সহযোগী না হন, অন্তত মাঝে মধ্যে বেনজেমার বিশ্রামের প্রয়োজনে যোগ্য বিকল্প তো হতে পারবেন ইয়োভিচ। ২২ বছর বয়সী সার্বিয়ান স্ট্রাইকার ভবিষ্যতে বেনজেমার জায়গাটা নিজের করে নেবেন, এমনই বুঝি আশা করেছিল জিদান। সে আশার গুড়ে বালি। এই মৌসুমে রিয়ালের জার্সিতে ২৭ ম্যাচে ইয়োভিচের গোল মাত্র দুটি। প্রথম মৌসুমে একটু ধুঁকতে হয় অনেককে, এ যুক্তিতে যদি তাঁর গোলখরাকে উপেক্ষাও করেন, সে ক্ষেত্রে সামনে আসবে ইয়োভিচের একের পর এক বিতর্ক। এত বড় ক্লাবে এসে যেন হতবুদ্ধি হয়ে গেলেন। এক করোনাকালিন লকডাউনের সময়ই যত বিতর্ক তৈরি করেছেন ইয়োভিচ, এরপর আর তাঁকে ক্লাবে রাখার কতটা ইচ্ছা রিয়ালের থাকবে, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ইসকো
জুভেন্টাসের নতুন কোচ আন্দ্রেয়া পিরলো এসেই নাকি জানিয়ে দিয়েছেন, ইসকোকে তিনি জুভেন্টাসে চান। ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়ে গুঞ্জন তো দলবদলের বাজারের নিয়মিত আলোচনা। জিদান তাঁকে ভরসা করেন না, তা নয়, বড় অনেক ম্যাচেই ইসকোকেই একাদশে রাখেন ‘জিজু।‘ কিন্তু কয়েক মৌসুম ধরেই ইসকোর ফর্মের পড়তির ‘ধারাবাহিকতা’ ছিল এই মৌসুমেও। সব মিলিয়ে খেলেছেন মাত্র ১৫ ম্যাচ, গোল করেছেন মাত্র ১টি। অবশ্য ফুটবলের কৌশলে বদলের এ যুগে ইসকো-ওজিল-রদ্রিগেজ-কুতিনহোদের মতো খাঁটি ‘নাম্বার টেনে’র কদর আর নেই অনেক কোচের কাছেই। জুভেন্টাস ছাড়া ইসকোর জন্য ভালো প্রস্তাব তাই আর কেউ দেয় কি না, তা-ও দেখার বিষয়।
মারিয়ানো দিয়াজ
মারিয়ানোর রিয়াল মাদ্রিদ ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় অর্জন সম্ভবত এই—ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ২০১৮ সালের জুলাইয়ে জুভেন্টাসে যাওয়ার পর তাঁর ফেলে রাখা ‘৭’ নম্বর জার্সিটা গত মৌসুমে মারিয়ানোকেই দিয়েছিল রিয়াল! ২০১৮ সালে ২ কোটি ২০ লাখ ইউরোতে মারিয়ানো অলিম্পিক লিওঁ থেকে আসার সময় সমর্থকেরা অনেক খুশিই ছিলেন। কিন্তু লিঁওতে আলো ছড়ানো মারিয়ানো রিয়ালে দুই মৌসুমে তিন কোচের (হুলেন লোপেতেগি, সান্তিয়াগো সোলারি ও জিদান) কারও অধীনেই দলে জায়গা করে নিতে পারেননি। গত মৌসুমে সব মিলিয়ে খেলেছিলেন ২২ ম্যাচে, এবার ৭ ম্যাচ! তাঁর রিয়াল ছাড়া সম্ভবত রিয়াল ও তাঁর নিজের দুই পক্ষের জন্যই ভালো।
ব্রাহিম দিয়াজ
আরেক দিয়াজ যিনি ক্লাব ছেড়ে গেলেও জিদানের খুব একটা ক্ষতি হবে না। গত গ্রীষ্মকালীন দলবদলে ১ কোটি ৭০ লাখ ইউরোতে ম্যানচেস্টার সিটি থেকে তাঁকে নিয়ে আসে রিয়াল, সব মিলিয়ে এই মৌসুমে ব্রাহিম খেলেছেন মাত্র ১০ ম্যাচ! তবে ২১ বছর বয়সী মিডফিল্ডারের প্রতিভা নিয়ে সংশয় সামান্যই, তাই তাঁকে একেবারে বিক্রি না করে অন্য কোথাও ধারে পাঠাতে পারে রিয়ালে। স্পেনে রিয়াল বেতিস ও গেতাফে আর ইংল্যান্ডের ওয়েস্ট হাম ব্রাহিমকে ধারে নিতে চায় বলে গুঞ্জন।
লুকাস ভাসকেজ
জিদানের প্রথম দফায় বেশ ভরসার নামই ছিলেন। রোনালদো-বেনজেমাদের উদ্দেশে অনেক ক্রসের জোগানদাতা ছিলেন ভাসকেজ। আক্রমণের পাশাপাশি নিচে নেমে আসতেও অনিচ্ছা থাকে না বলে দলের জন্য বেশ কার্যকরও এই স্প্যানিশ উইঙ্গার। কিন্তু দুই মৌসুম ধরে ফর্ম হারিয়ে খুঁজছেন ২৯ বছর বয়সী ভাসকেজ। এই মৌসুমে চোটও তাঁকে স্বস্তিতে থাকতে দেয়নি। হোসে মরিনহোর টটেনহাম তাঁকে পেতে চায় বলে গুঞ্জন।
নাচো
কি সেন্টারব্যাক, কি লেফটব্যাক—রক্ষণে ‘দুর্যোগের দিনে’র ভরসা ছিলেন নাচো। কোনো খেলোয়াড়ের চোট-নিষেধাজ্ঞায় তাঁরই ডাক পড়ে প্রথমে। কিন্তু সার্জিও রামোস আর রাফায়েল ভারানের মানের সঙ্গে নাচোর মানের পার্থক্য অনেক, এই দুজনের কারও চোট-নিষেধাজ্ঞায় নাচো খেললে রিয়ালের খেলায়ও সেটির প্রভাব পড়ে। ২০০৭ সালে রিয়ালের একাডেমি থেকে উঠে আসা নাচোর গত মৌসুমেই ক্লাব ছাড়ার গুঞ্জন ছিল, কিন্তু রোমার কাছ থেকে প্রস্তাব আসার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা আর আলোর মুখ দেখেনি। এই মৌসুমে সব মিলিয়ে ১০ ম্যাচে মাঠে নামা নাচোর রিয়ালের মূল দলের সঙ্গে ১৩ বছরের সম্পর্কের শেষ বুঝি হয়েই গেল!
মার্সেলো
রোনালদোর সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব দারুণ। রিয়ালের বাঁ পাশে রোনালদোর সঙ্গে তাঁর জুটিটাও জমেছিল দারুণ। রোনালদো জুভেন্টাসে যাওয়ার পর তাঁরও ইতালিয়ান ক্লাবটিতে যাওয়ার গুঞ্জন উঠেছিল। কিন্তু রিয়াল অন্তঃপ্রাণ মার্সেলোর শেষ পর্যন্ত আর যাওয়া হয়নি। কিন্তু ব্রাজিলিয়ান লেফটব্যাকের বয়স হয়ে গেছে ৩২। রক্ষণের চেয়ে আক্রমণেই তাঁর বেশি মনোযোগ সব সময়ই ছিল, বয়সের কারণে এখন আর মার্সেলো আক্রমণে উঠে দ্রুত রক্ষণে নামতে পারেন না। রিয়ালের লেফটব্যাকের জায়গাটা এই মৌসুমে মার্সেলোর কাছ থেকে নিজের করে নিয়েছেন গত গ্রীষ্মেই দলে আসা ফারলাঁ মেন্দি। রিয়ালের সঙ্গে মার্সেলোর ১৩ বছরের সম্পর্কের তাই শেষ দেখা যাচ্ছে। ২০১৮ সালে তাঁর দাম ৭ কোটি ইউরো ধরলেও এখন তাঁর জন্য রিয়াল ১ কোটি ৬০ লাখ ইউরো চাইবে বলে জানাচ্ছে এএস।