এমবাপ্পে
এমবাপ্পে

রিয়ালকে ফিরিয়ে দিলে গ্রিজমান-বার্সার ভুল হবে এমবাপ্পের

রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়ার স্বপ্ন প্রায় তাঁর বয়সের সমান। পিএসজির সঙ্গে চুক্তি শেষে তাঁর রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়ার গুঞ্জনও চলছে অনেক দিন হলো, সেটিতে মাত্রা চড়েছে গত এক বছরে। সব গুঞ্জনের শেষে এমবাপ্পে রিয়ালে যাবেন—এটাই ছিল সবচেয়ে বেশি বাজার পাওয়া গুঞ্জন।

কিন্তু কয়েক দিনে যে সুর শোনা যাচ্ছিল, কয়েক ঘণ্টায় সেটি কোরাসের রূপ নিচ্ছে। নাটকে অবিশ্বাস্য মোড় বদল! রিয়ালে যাচ্ছেন না, পিএসজির অবিশ্বাস্য অঙ্কের প্রস্তাবে গলে শেষ পর্যন্ত ফরাসি ক্লাবটিতেই থেকে যাচ্ছেন এমবাপ্পে—এমনই শোনা যাচ্ছে। তবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আগামীকাল আসার সম্ভাবনা। আগামীকাল ভিডিও বার্তায় এমবাপ্পে নিজের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন, সেটিই শোনা যাচ্ছে।

শেষ পর্যন্ত সত্যিই রিয়াল মাদ্রিদে না গিয়ে পিএসজিতে থাকার সিদ্ধান্তই জানাবেন এমবাপ্পে? সেটি হলে তাঁর পরিণতিও ফ্রান্স জাতীয় দলে সতীর্থ আঁতোয়ান গ্রিজমানের মতো হবে না তো! ফরাসি ফুটবলবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘গেট ফ্রেঞ্চ ফুটবল নিউজ’ তা জানিয়েই হুঁশিয়ার করে দিচ্ছে এমবাপ্পেকে।

আবার আতলেতিকোতেই যাচ্ছেন গ্রিজমান

এমবাপ্পের খবরে গ্রিজমান কীভাবে প্রাসঙ্গিক, সেটি বার্সেলোনা সমর্থকদের সবচেয়ে ভালো মনে থাকার কথা। ২০১৮ সালে কয়েক মাস ধরে গুঞ্জন ছিল, আতলেতিকো মাদ্রিদ ছেড়ে গ্রিজমান বার্সেলোনায় যাচ্ছেন। অনেকটা এমবাপ্পের রিয়ালে যাওয়ার মতোই ‘নিশ্চয়তা’ ছিল সে গুঞ্জনে। তখন গ্রিজমানও এক ভিডিও বার্তায় নিজের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন। কিন্তু ‘লা দিসিসিওন’ নামের সেই ভিডিওতে গ্রিজমান জানিয়ে দেন, তিনি আতলেতিকোতেই থাকছেন।

‘আমার ভক্তরা, আমার দল, আমার ঘর’—গ্রিজমানের ভিডিওর ট্যাগলাইন ছিল এটিই। গ্রিজমান ভিডিওতে জানিয়ে দেন, আতলেতিকোর সঙ্গেই পাঁচ বছরের জন্য চুক্তি নবায়ন করছেন তিনি। বার্সেলোনার মতো আত্মদম্ভী ক্লাবকে এভাবে ফিরিয়ে দেওয়ার ভিডিওতে গ্রিজমানকে হাসতেও দেখা যায়।

এর এক বছর পরই বার্সেলোনায় যোগ দেন গ্রিজমান। কিন্তু দলবদলটা তাঁর জন্য মোটেও সুখকর হয়নি। বার্সেলোনার খেলার ধরনের সঙ্গে কখনোই মানিয়ে নিতে না পারা এর সবচেয়ে বড় কারণ ছিল, মেসি আর তাঁর খেলার জায়গা একই বলে গ্রিজমান স্বাভাবিকভাবেই সেভাবে সুযোগ পাননি। কিন্তু গ্রিজমানের জন্য বার্সেলোনা অধ্যায়টা দুঃস্বপ্ন হওয়ার পেছনে একটা বড় কারণ ছিল ‘লা দিসিসিওন’ও। ক্লাবের সমর্থকদের অনেকেই তাঁকে মেনে নেননি, যাঁরা মেনে নিয়েছেন তাঁরাও তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন গ্রিজমানের পারফরম্যান্সের দিকে। ক্লাবের ড্রেসিংরুমও এক বছর আগে গ্রিজমানের ভিডিওর কথা সহজে বিস্মৃত হয়নি।

নেইমার ও লিওনেল মেসির সঙ্গেই থাকবেন কিলিয়ান এমবাপ্পে?

গত এক বছরে এমবাপ্পে অনেক ভিডিওতে, সাক্ষাৎকারে, এমনকি নিজের নামে প্রকাশিত কমিকসে রিয়ালের প্রতি নিজের অনুরাগের কথা বুঝিয়ে দিয়েছেন এমবাপ্পে। কিন্তু পিএসজি পিছু ছাড়েনি। এক প্রস্তাবে এমবাপ্পে রাজি হননি, তো আরও অনেক অর্থ বাড়িয়ে, এমবাপ্পের ক্ষমতা বাড়িয়ে আরেক প্রস্তাব নিয়ে হাজির হয়েছে। বিখ্যাত চলচ্চিত্র দ্য গডফাদার–এর উক্তিটির মতো, পিএসজি এমন প্রস্তাব করার চেষ্টা করেছে যেটাতে এমবাপ্পে রাজি না হয়ে পারবেন না।

শেষ পর্যন্ত চেষ্টায় পিএসজি সফল হচ্ছে? গুঞ্জন তেমনই। বিখ্যাত ইতালিয়ান সাংবাদিক জিয়ানলুকা দি মারজিও বলেছেন, এমবাপ্পে পিএসজিতেই চুক্তি নবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গেট ফ্রেঞ্চ ফুটবল নিউজ জানাচ্ছে, এমবাপ্পে যেদিন থেকে জানিয়েছেন তিনি ভিডিও বার্তায় নিজের সিদ্ধান্ত জানাবেন, তখন থেকেই রিয়াল মাদ্রিদ একটু অস্বস্তিতে ছিল।

পিএসজিতে এমবাপ্পের নতুন চুক্তিটা হতে পারে স্বল্পমেয়াদি। হয়তো দু-তিন বছরের। তবে এই চুক্তিতে সই করার জন্যই ১০ কোটি (অনেকের মতে ১২ কোটি) ইউরোর বিশাল অঙ্ক ‘বোনাস’ পাবেন এমবাপ্পে। এমনও হতে পারে, চুক্তি শেষে সেই রিয়ালেই যাবেন এমবাপ্পে। হয়তো চুক্তিতে এমন শর্ত থাকতে পারে যে আগামী বছরই রিয়াল প্রস্তাব নিয়ে গেলে পিএসজি তাঁকে ছেড়ে দেবে। কাতার বিশ্বকাপ তত দিনে শেষ হয়ে যাবে, পিএসজির কাতারি মালিকপক্ষের তখন এমবাপ্পেকে রাখার জন্য এত আগ্রহ না-ও থাকতে পারে। যদিও আগামী বছর তাঁকে কিনতে গেলে রিয়ালকে অর্থ খরচ করতে হতে পারে। অথবা এমনও হতে পারে, চুক্তির দুই বছর শেষে বিনা মূল্যেই রিয়ালে যাবেন এমবাপ্পে।

নিজের কমিকসে রিয়াল মাদ্রিদ নিয়ে নিজের ভালোবাসার কথা জানিয়েছিলেন এমবাপ্পে

রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ সেটাতে আর রাজি হবেন কি না, সে একটা বড় প্রশ্ন হয়ে থাকবে। তবে সবশেষে যদি এমবাপ্পের রিয়ালে যোগ দেওয়াই হয়, সেটি কি তাঁর জন্য সুখের হবে?

এক বছর ধরে রিয়ালের মতো আত্মদম্ভী, ইউরোপের কুলীন ক্লাবের সঙ্গে ‘প্রেম’ চালিয়ে শেষে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া...শেষ পর্যন্ত সেই রিয়ালেই ফিরে গেলেও এমবাপ্পেকে তখন হয়তো মাদ্রিদের সমর্থকেরাই সহজে মেনে নেবেন না। ক্লাবের খেলোয়াড়েরাও কি সহজে নিতে পারবেন? গ্রিজমানের বার্সা-অধ্যায়ের মতোই পরিণতি হবে না, সে নিশ্চয়তা কে দিতে পারে?

হ্যাঁ, গ্রিজমানকে বার্সায় মেসির মতো একজনের সঙ্গে একাদশে জায়গা পেতে লড়তে হয়েছে, রিয়ালে এমবাপ্পেকে তেমন কারও সঙ্গে লড়তে হবে না। তত দিনে এমবাপ্পের বন্ধু করিম বেনজেমারও বয়স হয়ে যাবে ৩৬। তবু এমবাপ্পের জন্য হুঁশিয়ারি হয়ে থাকছেই!

আগামীকালই এমবাপ্পের ভিডিও বার্তা আসার সম্ভাবনা। তাতে রিয়ালকে যদি সত্যিই ফিরিয়ে দেন এমবাপ্পে, ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ সেটি সহজে নেবেন না। রিয়াল সহজে মেনে নেবে না। আর রিয়াল ও পেরেজ সহজে মেনে না নেওয়া এমবাপ্পের জন্য হয়তো ঝুঁকিপূর্ণই!