ফ্রান্স ফুটবলে এখন আলোচনার কেন্দ্র হওয়া কঠিন। অন্য কোনো দেশে তরুণ কোনো প্রতিভা নিয়ে আলোচনা চলে বহুদিন। কিন্তু ফ্রান্সের কোনো তরুণের পক্ষে কাজটা বেশ কঠিন। যে দেশে প্রায় প্রতি মৌসুমেই ঝাঁকে ঝাঁকে তরুণ প্রতিভা উঠে আসে, সেখানে নির্দিষ্ট কাউকে নিয়ে আলোচনা করাটা বাড়াবাড়ি। কিলিয়ান এমবাপ্পে ছাড়া কোনো তরুণ প্রতিভাই তাই সংবাদমাধ্যমের আগ্রহ ধরে রাখতে পারেননি বেশি দিন।
এর পেছনে কারণও আছে। ফ্রান্সে গত দুই তিন বছরে কম প্রতিভা উঠে আসেনি। প্রথমে আলো কেড়েছিলেন অ্যান্থনি মার্শিয়াল। এর পর একে একে কত নাম এসেছে। বার্সেলোনার ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দাবি ফুটবলার হয়েছেন ওসমানে ডেমবেলে। থমাস লেমার, দায়োত উপামেকানো, জোনাথন ইকোনেরা তো জাতীয় দলেই ঢুকে পড়েছেন। ভবিষ্যৎ তারকাদের তালিকায় আছে ইয়াসিন আদলি, আমিন গৌরি, বুবাকারি সৌমারে, উইলিয়াম সালিবা, বৌবাকার কামারা, হুসেম আওয়ার, ম্যাক্সেন্স কেকেরে, রায়ান চেরকি—তালিকাটা থামানো যাবে না এখানে। এর মাঝেও কিছুটা আলাদা হয়ে আছেন এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা।
রেঁনের এই মিডফিল্ডারের বয়স এখনো ১৮ হয়নি। এর মধ্যেই ফ্রান্স জাতীয় দলে খেলা গেছে তাঁর। যে কাজটা গত দুই বছর ধরে আলোচনায় থেকেও করতে পারেননি আওয়ারের মতো মিডফিল্ডার। কামাভিঙ্গাকে তাই গত মৌসুম থেকেই নজরে রেখেছে রিয়াল মাদ্রিদ। কিন্তু জিনেদিন জিদানের অধীনে খেলার লোভ সামলে রেঁনেতেই থেকে গেছেন কামাভিঙ্গা। কারণ নিজের বর্তমান ক্লাব যে চ্যাম্পিয়নস লিগে উঠেছে। আর ক্লাবের চ্যাম্পিয়নস লিগ যাত্রার অংশ হওয়াটাই গুরুত্ব পেয়েছে তাঁর কাছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্সের হয়ে সবচেয়ে কম বয়সে অভিষিক্ত এই খেলোয়াড় নিজের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট। টেলিফুটকে বলেছেন, ‘বড় ক্লাব যখন আগ্রহ দেখায়, সেটা অবশ্য ভালো লাগে। কিন্তু তাতেই আমি আপ্লুত হয়ে যাচ্ছি না। আমি আমার পরিবারের সঙ্গেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি (থেকে যাওয়ার)। এ সিদ্ধান্ত নিয়ে এখন খুব ভালো লাগছে। আমার এখন শুধু ফুটবলে মনোযোগ দিতে চাই এবং আশ পাশে কী হচ্ছে তা নিয়ে ভাবতে চাই না। জীবন এখন খুব ভালো কাটছে। এখন খুব ভালো আছি।’
বয়স এখনো ১৮ হয়নি। কিন্তু মাঠে তাঁকে দেখে কখনো বোঝা যায় না। পূর্ণ বয়স্ক একজন ফুটবলারের মতোই মাথা ঠান্ডা রাখতে জানেন। অভিজ্ঞ ফুটবলারদের মাঝেও আলাদা করে চেনা যায় তাঁকে। ফ্রান্সের হয়ে ইতিহাস গড়ার পরও নিজেকে সামলে রাখছেন কামাভিঙ্গা, ‘প্রথমেই বলে নিই, আমার পরিবার ও ফ্রান্সের মানুষদের জন্য আমার আনন্দ হচ্ছে, গর্ব হচ্ছে। আমার কোনো ধারণা নেই, কোত্থেকে এই আত্মবিশ্বাস পাই। আমি প্রায়ই বেশি বয়সীদের সঙ্গে খেলেছি আর এটা আমাকে পরিণত করেছে।’
এই পরিণতবোধ আর আত্মবিশ্বাসই তাঁকে পেতে আগ্রহী করে তুলছে রিয়াল ও পিএসজিকে। এই মৌসুমের জন্য রেঁনেতেই হয়তো রয়ে গেছেন। তবে এভাবে খেলা চালিয়ে গেলে খুব বেশি দিন যে এই ক্লাবে থাকবেন না, এটাও নিশ্চিত করে বলে দেওয়া যায়।