‘আক্রমণভাগ আপনাকে ম্যাচ জেতাতে পারে, কিন্তু শিরোপা জেতাবে রক্ষণভাগ’, কথাটি ফুটবল-দুনিয়ার সেরা কোচদের অন্যতম স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের। গোল ঠেকিয়ে তারকা হওয়া তুলনামূলক কষ্টসাধ্য হলেও, দলের সাফল্যে তাদের গুরুত্ব কত বেশি, তা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক কোচের কথাতেই বোঝা যায়।
দেশের ফুটবলে ২০১৬-১৭ মৌসুমে সর্বোচ্চ দাম উঠেছে রক্ষণভাগের এক খেলোয়াড়ের। সর্বোচ্চ ৫৮ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে ডিফেন্ডার তপু বর্মণ। আবাহনী লিমিটেড থেকে এই ডিফেন্ডার নাম লিখিয়েছেন সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবে। নতুন মৌসুমে খাতা-কলমের হিসাবে রক্ষণভাগে সেরা কোনো দলগুলো, তা অঙ্ক কষে নিজেই জানাচ্ছেন তপু।
প্রিমিয়ার লিগের শক্তিমত্তা বিচার এবার পরীক্ষার খাতার মতোই অঙ্ক কষে বের করা হবে। যেহেতু রক্ষণই শিরোপা জেতায়, তাই সেটাই গুরুত্ব পাচ্ছে সবচেয়ে বেশি। মোট ১০০ মার্কের মধ্যে রক্ষণভাগ পাচ্ছে ৪০, মধ্যমাঠ ৩০, আক্রমণভাগ ৩০। রক্ষণের মধ্যে অনুমিতভাবেই থাকছে গোলরক্ষকের অন্তর্ভুক্তি। দেশের ফুটবল জায়ান্টদের শক্তির ধারণা দেওয়ার ধারাবাহিকে থাকবে মধ্যমাঠ ও আক্রমণভাগের কথা। ফলে অঙ্ক কষেই মেপে নেওয়া যাবে কাদের হাতে উঠতে পারে দশম পেশাদার প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা।
আবাহনী লিমিটেড, ঢাকা: ৪০/৪০
বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের রক্ষণভাগে নতুন মুখ নাসির উদ্দীন চৌধুরী, ইয়ামিন মুন্না ও রায়হান হাসান। পুরোনোদের মধ্যে আছেন মামুন মিয়া, ওয়ালি ফয়সাল ও মোহাম্মদ বাদশা। বাদশা ছাড়া বাকি পাঁচজনই প্রতিষ্ঠিত তারকা। এ ছাড়া ঘরের ছেলে হয়ে যাওয়া ঘানার সেন্টারব্যাক সামাদ ইউসুফ তো আছেনই।
আবাহনী কোচ দ্রাগো মামিচ সাধারণত ৫-৩-২ ফরমেশনে খেলান। এ ক্ষেত্রে একাদশে রক্ষণ লাইনআপ হতে পারে—রাইটব্যাকে মামুন মিয়া, লেফটব্যাকে ওয়ালি, সেন্টারে নাসিরউদ্দীন-রায়হান-সামাদ। আবাহনীর দুই ফুলব্যাকই ওভারলেপিংয়ে পারদর্শী। গোলবারে জাতীয় দলের দীর্ঘদেহী গোলরক্ষক সোহেল। সব মিলিয়ে তপুর চোখে তাঁর পুরোনো ক্লাব আবাহনীর রক্ষণভাগই সেরা, ‘আমরা পুরোনো কয়েকজন ক্লাব ছেড়েছি। তবে সেখানে ভালো কিছু খেলোয়াড় নেওয়ায় আবাহনীর ডিফেন্সই বেশি শক্তিশালী। গোলরক্ষকও ভালো। এ ছাড়া তাদের বেঞ্চেও ভালো ফুটবলার আছে। ফলে ৪০ মার্কের মধ্যে ৪০ই পাবে তারা।’
সাইফ স্পোর্টিং: ৩০/৪০
চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে এ মৌসুমেই পেশাদার ফুটবলে নাম লিখিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছে ক্লাবটি। প্রায় কোটি টাকা খরচ করেছে তপু বর্মণ ও আরিফুল ইসলামের পেছনে। এ ছাড়া আছেন লেফটব্যাক মোহাম্মদ শাকিল ও সেন্টারব্যাক শওকত রাসেল। কোচ কিম গ্রান্টের একাদশে রণকৌশল সাজাতে মাথা না ঘামালেও চলবে। কিন্তু দুশ্চিন্তার বিষয় বেঞ্চে অভিজ্ঞ ফুটবলার নেই। এ ছাড়া গোলপোস্টের নিচে তরুণ মোহাম্মদ জিকো। শিরোপা দৌড়ে গোলরক্ষকের অনভিজ্ঞতা বড় বাধা হতে পারে বলে মনে করেন তপু, ‘আমাদের দলের কোনো গোলরক্ষকেরই প্রিমিয়ার লীগে খেলার অভিজ্ঞতা নেই। এ ছাড়া সাইড বেঞ্চেও অভিজ্ঞতার ঘাটতি আছে। যা বড় সমস্যা।’
শেখ জামাল ধানমন্ডি: ৩০/৪০
তারকানির্ভর নয়, পারফরম্যান্সের বিচারে দল গড়ে আলোচনায় ফিরছে ‘জায়ান্ট’ শেখ জামাল। রক্ষণে ইয়াসিন খান, কেষ্ট কুমার ও দিদারুল ইসলাম থাকছেন। লেফটব্যাকে আনিসুজ্জামানও পুরোনো। এ ছাড়া রহমতগঞ্জের জার্সিতে ভালো খেলা মোহাম্মদ আলাউদ্দিন ও মোহাম্মদ মামুন, বিজেএমসির খান তারা, ফেনী সকারের শাকিলকে ভিড়িয়েছে ক্লাবটি। গোলরক্ষক হিসেবে প্রথম পছন্দ হতে পারে আরামবাগ থেকে নাম লেখানো মিতুল হাসান। কোচ আপুসি জোসেফের দলের রক্ষণভাগকেও ৩০ মার্ক দিচ্ছেন তপু, ‘ইয়াসিন, কেষ্ট, সুইট—সবাই অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার। বেঞ্চে যাঁরা আছেন, তাঁরাও খারাপ নন। গোলরক্ষক মিতুল আছেন সেরা ফর্মে।’
শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র: ৩০/৪০
অভিজ্ঞ ও তারুণ্যের মিশ্রণে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের রক্ষণভাগও শক্তিশালী। পুরোনোদের মধ্যে দলে আছেন রাইটব্যাক অরূপ বৈদ্য, লেফটব্যাক আতিকুর রহমান মিশু ও সেন্টারব্যাক মোহাম্মদ মনি। খালেকুজ্জামান সবুজ ও প্রশান্তের যোগ দেওয়া শক্তি বাড়িয়েছে ফুলব্যাক পজিশনে। গোলবার সামলানোর দায়িত্বে আছেন অভিজ্ঞ তিনজন বিপ্লব ভট্টাচার্য, জিয়া ও মোস্তাক। ২০১২-১৩ মৌসুমের ট্রেবল জয়ীদের রক্ষণভাগকেও শক্তিশালী মানছেন তপু বর্মণ, ‘রক্ষণভাগে অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিত তরুণেরা আছে। গোলরক্ষক পজিশনেও কারও চেয়ে পিছিয়ে নেই। তবে বেঞ্চে কিছুটা ঘাটতি আছে।’
মোহামেডান স্পোর্টিং লিমিটেড: ৩০/৪০
এবার কিছুটা নড়েচড়ে বসেছে ঐতিহ্যবাহীরা। ডিফেন্স ও গোলরক্ষক পজিশনে ভালো খেলোয়াড় নেওয়া হয়েছে। জাতীয় দলে খেলা লেফটব্যাক লিঙ্কন, রাইটব্যাক নাসিরুল ও সেন্টারব্যাক মিন্টু শেখ ও আশরাফুলকে নেওয়া হয়েছে। গোলরক্ষক পজিশনে দুই পরীক্ষিত মামুন খান ও লিটন। ইনজুরি সমস্যা না হলে দলটিকে ব্যালান্সড মানছেন তপু, ‘রক্ষণভাগে সবারই মোটামুটি জাতীয় দলে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু এদের বাইরে পরীক্ষিত ফুটবলার নেই বললেই চলে। গোলরক্ষক পজিশনে মামুন ভাই ও লিটনের মধ্যে ফাইট হবে।’
চট্টগ্রাম আবাহনী: ২৫/৪০
শেষ মৌসুমে প্রায় ১০ কোটি টাকা খরচ করে লীগ শিরোপা আসেনি। ফলে এবার তরুণদের নিয়ে দল গড়েছে ক্লাবটি। লেফটব্যাক নুরুল নাইম ফয়সাল ও নাইজেরিয়ান ডিফেন্ডার এলিসান উদোকা আছেন। নতুনদের মধ্যে রাইটব্যাক মনসুর আমিন ও সুশান্ত, সেন্টারে রাকিন আহমেদ। গোলরক্ষক পজিশনে থাকছেন বর্তমান নাম্বার ওয়ান আশরাফুল রানা। এমন রক্ষণকে সাধারণ মানের বলেই মনে হচ্ছে তপুর, ‘দুই ফুলব্যাক খারাপ নন। তবে একাদশে খেলার মতো দেশি কোনো স্টপারই আমি দেখছি না। বেঞ্চে তো দুর্বলতা আছেই। গোলরক্ষক রানা ভাই আছে বলে কিছুটা ঘাটতি পোষানো যাবে।’
ইতিমধ্যে গতকাল শুক্রবার ঢাকা আবাহনী ও সাইফ স্পোর্টিংয়ের ম্যাচ দিয়ে প্রিমিয়ার ফুটবলের ঢোলে বাড়ি পড়েছে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ৩-২ গোলে জয় পায় আবাহনী।